ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইচ্ছেঘুড়ি

ধারাবাহিক কিশোর উপন্যাস

শ্যাডো দ্য শিপ-ডগ | এনিড ব্লাইটন | অনুবাদ: সোহরাব সুমন (পর্ব ১৪)

অনুবাদ রচনা ~ ইচ্ছেঘুড়ি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮১২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১০, ২০১৫
শ্যাডো দ্য শিপ-ডগ | এনিড ব্লাইটন | অনুবাদ: সোহরাব সুমন (পর্ব ১৪)

এনিড ব্লাইটন (১৮৯৭-১৯৬৮)

ব্রিটিশ শিশু সাহিত্যিক এনিড মেরি ব্লাইটন ১৮৯৭ সালে দক্ষিণ লন্ডনে জন্মগ্রহণ করেন। এনিড ব্লাইটন শিশুদের জন্য প্রচুর বই রচনা করেছেন।

তার চল্লিশ বছরের জীবন কালে তিনি প্রায় আটশ’রও বেশি বই লিখেছেন। লেখার বিষয় হিসেবে বেশির ভাগ সময়ই তিনি শিশুতোষ রোমাঞ্চ, রহস্য বা জাদু আশ্রয়ী কল্পনাকে বেছে নিয়ে ছিলেন।

তার উল্লেখযোগ্য গল্পসমূহ হলো: দ্য ফেমাস ফাইভ, দ্য সিক্রেট সেভেন, দ্য ফাইভ ফাইন্ড-কোয়াটার্স, নোডি, দ্য উইসিং চেয়ার, মালোরি টাওয়ার্স, এবং সেন্ট ক্লারে।

তার লেখা বইসমূহ সাংঘাতিক রকমের সফলতা অর্জন করে। এপর্যন্ত তার বই নব্বইটি ভাষায় অনূদিত হয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে তার বই আজও পাঠক সমাদৃত, এপর্যন্ত তার বইয়ের ছশ’ মিলিয়েনরও বেশি কপি বিক্রি হয়েছে।

ইনডেক্স ট্রান্সলেশনামের মতে ২০০৭ সালে ব্লাইটন বিশ্বের পঞ্চম জনপ্রিয় লেখক, তাদের এই তালিকায় লেনিনের পর এবং শেক্সপিয়েরের আগে ব্লাইটনের নাম ঠাঁই পায়। ১৯৬৮ সালে তিনি মৃত্যু বরণ করেন।

শ্যাডো দ্য শিপ-ডগ

এই বইয়ের গল্প খামারে জন্মানো শিপ-ডগ প্রজাতির এক কুকুর, শ্যাডোকে নিয়ে। খামারের শিপ-ডগ জেসির তিনটি বাচ্চা হয়। যার দুটি বিক্রি করে দেয়া হয়, পরে তৃতীয়টিকেও বিক্রি করা হয়, কিন্তু সেটি বারবার ফিরে আসায়, শেষ পর্যন্ত কৃষকের ছেলে জনিকে তা রাখবার অনুমতি দেয়া হয়, এই শর্তে যে খামারের অন্যান্য কুকুরদের মতোই তাকেও জীবিকার জন্য খামারে কাজ করতে হবে।

জনি তার এই কুকুরের নাম দেয় শ্যাডো। সব সময় সে ওর সঙ্গে থাকে। বাচ্চাটিকে সে নিজেই প্রশিক্ষণ দেয়। খামারের কুকুর জেসি বাড়ি, এর আশপাশ এবং উঠান পাহারা দেয়। টিঙ্কার, রাফে, ড্যান্ডি ভেড়া রাখার কাজ করে। ওরা সবাই শিপ-ডগ প্রজাতির কুকুর। রাখাল এন্ডি’র কুকুর বব শঙ্কর প্রজাতির হলেও তাকেও ভেড়া রাখার কাজ করতে হয়। খামারের সব কুকুরের কাছ থেকেও শ্যাডো বিভিন্নভাবে আরো অনেক কিছু শেখে। তারপর একদিন এমন সময় আসে, যখন শ্যাডোর এইসব দক্ষতা, অভিজ্ঞতা, এবং সাহসিকতা জনির জীবন রক্ষায় বারবার কাজে আসে।



পর্ব ১৩ পড়তে ক্লিক করো

শ্যাডো ঘেউ ঘেউ করে ববকে ডাকে। কিন্তু ততক্ষণে বব রাতের অন্ধকারে মিলিয়ে যায়। শ্যাডো বরফের ওপর নাক রাখে এবং ববের পায়ের গন্ধ শুঁকবার চেষ্টা করে। ঝরে পড়া হিমকণারা আশপাশের সবকিছুই আবৃত করে ফেলেছে, এমনকি ঘ্রাণও।

‘আমি ওর পেছন পেছন যাব আর দেখি ওকে ধরতে পারি কিনা। ’ শ্যাডো ভাবে। ‘আমি পাশের পাহাড়ে যাবার পথটা বেশ ভালো করেই চিনি, এমনকি সব কিছু বরফে ঢেকে যাবার পরও!’ এবং শ্যাডো এখন খুব খুশি কারণ গ্রামের প্রতিটা ইঞ্চি তার চেনা, এমনকি পাহাড়গুলো পুরু বরফে ঢেকে যাবার পরও সে তার পথ চিনতে পারে! সে জানে এখন সে প্রকাণ্ড কালো সেই শিলাখণ্ডের কাছে চলে এসেছে, যদিও বরফের কারণে এখন সেটা একেবারেই সাদা। জলধারার ওপর ছোট সেতুর কাছে চলে আসার পর সে তা বুঝতে পারে। পাহাড়ের কাঁটাগাছের ঝোপ আর হলদে কাঁটার বিশাল বেড়া পেরিয়ে আসার সময়ও সে ঠিকই টের পায়।



সে গুহায় যাবার পথ খুঁজে পায়। পাহাড়ের প্রতিটা অংশ তার নখদর্পণে না থাকলে গুহাগুলোর কাছে সে কখনোই পৌঁছাতে পারত না, কারণ বরফের সাদা চাদরে ঢাকা পাহাড়ি এই প্রান্তর এখন একেবারেই আলাদা একটা জায়গা। চাঁদ ওঠার পর আঁধার কেটে যায়। চাঁদের মলিন আলোতে এই প্রথমবারের মতো তুষারাচ্ছন্ন একটা জগৎ দেখতে পেয়ে ভেতরে ভেতরে সে ভয়াল একটা কাঁপন অনুভব করতে থাকে



ববকে সে খুঁজে পায় না। ভাবে শিপ-ডগটা বুঝি অন্যপথে গেছে। তাতে কিছু যায় আসে না! সে একাই হারানো ভেড়া আর বাচ্চা দুটাকে খুঁজবে। মনে পড়ে আগের দিন বুড়ো ভেড়ীটাকে উপত্যকায় ছাউনির নিচে শুয়ে থাকতে দেখেছে। শীতল দিনে উষ্ণ জায়গা খুঁজে বের করতে ওর জুড়ি নেই। সম্ভবত সে ওখানেই আছে!

শ্যাডো উপত্যাকার দিকে রওনা হয়। কিছুক্ষণের মধ্যেই সেখানে এসে চারপাশে শুঁকতে থাকে। কিন্তু ভেড়াটি সেখানে নেই। শ্যাডো থামে এবং আবারও ভাবে। একটা মা-ভেড়া যখন জানবে যে ঝড় আসছে, তখন সে তার বাচ্চাদের কোথায় নিয়ে রাখবে? কিছু কিছু দিক দিয়ে ভেড়ারা কুকুরের চাইতেও বুদ্ধিমান, এবং তারা অনেক দূর থেকেই আবহাওয়ার ঘ্রাণ টের পায়।

‘গুহা!’ শ্যাডো ভাবে। ‘আমার মনে হচ্ছে বাচ্চাগুলোকে সে ওখানটাতেই রেখেছে। বুড়ি হওয়ায় পথ ভুল করলেও নিজের বাচ্চাদের সে ঠিকই যত্ন নিতে সক্ষম। ’

খুব গভীর আর নরম তুষারের মাঝে সে এরই মধ্যে পথ হারিয়ে ফেলেছে। কুকুরটি বুঝতে পারে পাহাড় থেকে গুহার দিকে যাওয়া খুবই কষ্টকর হবে, কারণ তার থাবাগুলো বরফের গভীরে সেঁধিয়ে যাচ্ছিল। সে জানে তাকে খুব দ্রুত কাজ সারতে হবে, কারণ শীঘ্র বরফের এই গভীরতা এরচেয়েও বেশি হবে।

সে গুহায় যাবার পথ খুঁজে পায়। পাহাড়ের প্রতিটা অংশ তার নখদর্পণে না থাকলে গুহাগুলোর কাছে সে কখনোই পৌঁছাতে পারত না, কারণ বরফের সাদা চাদরে ঢাকা পাহাড়ি এই প্রান্তর এখন একেবারেই আলাদা একটা জায়গা। চাঁদ ওঠার পর আঁধার কেটে যায়। চাঁদের মলিন আলোতে এই প্রথমবারের মতো তুষারাচ্ছন্ন একটা জগৎ দেখতে পেয়ে ভেতরে ভেতরে সে ভয়াল একটা কাঁপন অনুভব করতে থাকে।

টলতে টলতে সে প্রথম গুহার দিকে এগিয়ে যায়। সেখানে কিছুই নেই। দ্বিতীয়টায় যায়। সেখানেও কিছু নেই। তৃতীয়টার দিকে তাকিয়ে শুঁকতে থাকে—এবং লেজ আর গোঁফ, ভেড়া আর শাবকের কটু একটা গন্ধ এসে তার নাকে ঠেকে!

‘আমি ওদের খুঁজে পেয়েছি!’ মনের আনন্দে শ্যাডো ভাবে এবং গুহাটার ভেতরে ঢোকে। সেখানে, পেছনের দিকে গা ঘেঁষাঘেঁষি করে, ধাড়ী মাদী ভেড়াটা ওর বাচ্চাদের নিয়ে বসে রয়েছে। কুকুরটা কাছে আসার পরও সে জায়গা ছেড়ে একচুলও নড়ে না। আজব ধবল এক জগতে সে অযথা ছুটে বেড়াতে রাজি নয়!

‘তোমাকে অবশ্যই আমার সঙ্গে যেতে হবে!’ নাক দিয়ে ধাক্কিয়ে ওঠাতে চেষ্টা করে, শ্যাডো নরম স্বরে ঘেউ ঘেউ করে ডাকে। ‘এসো!’ এখানে থাকলে বরফে জমে যাবে। না খেয়ে থাকতে হবে আর তোমার বাচ্চা দুটাও মারা পড়বে। খুব বেশি দেরি হবার আগেই আমার সঙ্গে চলো। ’

কিন্তু বুড়ো ভেড়াটা নড়ে না। সে এখন ক্লান্ত এবং আরামে শুয়ে আছে। শ্যাডো তাকে নড়াতে পারে না। বাইরে আবারও তুষার ঝরতে শুরু করেছে। কুকুরটি একেবারে নিরাশ হয়ে পড়ে।

‘বব কাছাকাছি কোথাও থাকলে খুব অবাক হব। ’ সে ভাবে। ‘ডেকেই দেখা যাক। ’ তাই সে গুহার প্রবেশ পথের দিকে এগিয়ে যায়, মাথা বের করে এবং বরফ ঢাকা পাহাড়ের দিকে চিৎকার করে ডাকতে থাকে।

এবং খুব বেশি দূর থেকে নয়, ববের ঘেউ ঘেউ জবাব আসে! শ্যাডোর হৃদপিণ্ডটা খুশিতে লাফাতে শুরু করে! সে আবারও ঘেউ ঘেউ করে—তৃতীয়বার ডাকার পর বব বরফের ওপর দিয়ে চিন্তিত ভঙ্গিতে গুহার দিকে এগিয়ে আসে।

‘আমি ভেড়া আর ওর বাচ্চা দুটাকে খুঁজে পেয়েছি। ’ শ্যাডো বলল। ‘তবে ভেড়াটাকে নড়াতে পারছি না। ’

‘এখনই আমি ওকে বের করে আনছি,’ বব বলে। সে গুহার ভেতরে ঢোকে এবং বাচ্চা দুটাকে নাক দিয়ে ধাক্কা মেরে ভড়কে দেয়। ওরা লাফিয়ে ওঠে এবং গুহামুখের দিকে ছুটে আসে। সেখানে দাঁড়িয়ে করুণ স্বরে ডাকতে থাকে।

তখনই মা-ভেড়াটা উঠে দাঁড়ায়। সে নিজের জন্য নয় বরং বাচ্চা দুটার জন্য কিছু একটা করতে হবে এই ভেবে চলতে শুরু করে।

এরপর ভেড়াটাকে বাইরে বরফের মাঝে নিয়ে আসা কুকুর দুটার জন্য সহজ হয়। বাচ্চা দুটাও ওর গা ঘেঁষে হাঁটতে শুরু করে। ‘শ্যাডো, এদিকে এসো। ’ বব নির্দেশ দেয়। ‘আমি জানি কোথায় কোথায় বরফ খুব বেশি পুরু নয়। ’

পাঁচটি জন্তু বরফের ওপর দিয়ে ধীরে ধীরে চলতে শুরু করে। বব পথ চেনে, শ্যাডোও, এবং ভেড়াটিও অনুগতের মতো তাদের অনুসরণ করে।

ঘণ্টা খানেকের মাঝে ওরা পাহাড়ের পাশে খোঁয়াড়ে পৌঁছে যায়।

‘ভালো, বব—ভালো শ্যাডো—তাহলে তোমরা পথভ্রষ্টদের ফিরিয়ে আনতে পারলে!’

হাতের লণ্ঠনটা উঁচিয়ে ধরে, আনন্দে মেষপালক চেঁচিয়ে ওঠে। ‘ভালো কুকুর, তোমরা দুজনেই, আহ্, তোমরা দুজনেই চমৎকার একটা জুটি, তোমাদের নিয়ে আম গর্বিত!’

‘ভালো কাজ, ইয়াংস্টার,’ শ্যাডোকে বিদায় জানাবার সময় বব বলে। ‘ভালো কাজ করেছো। ’

খুব খুশি হলেও শ্যাডো টলতে টলতে পাহাড় থেকে নেমে খামারের দিকে এগিয়ে যায়। সে এখন খুব ক্লান্ত, এতটাই ক্লান্ত যে হাঁটতে গিয়ে পা প্রায় চলছিলই না—কিন্তু সে হারানো ভেড়াগুলোকে খুঁজে পেয়েছে, এবং বুড়ো ববের প্রশংসা জিতে নিয়েছে। এবং ঘটনাটা জানতে পারার পর জনি কী বলবে?

দশ মিনিটের মাথায় কুকুরটি বড় একটা আগুনের সামনে টানটান হয়ে শুয়ে থাকে, তার মাথাটা জনির পায়ের ওপর। সে খুব গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন আর ঘুমের মাঝে সে হারানো সেই ভেড়াটিকে খুঁজে বেড়াতে থাকে। ঘটনাটা জানার পর জনি ওর গায়ে আচ্ছা করে চাপড় মারতে থাকে। শ্যাডো এক চোখ মেলে দেখে এবং আনন্দে আকুল হয়ে নিঃশ্বাস ছাড়ে। কোনো কুকুর কি এত সুখী হতে পারে?

পর্ব ১৫ পড়তে ক্লিক করো


বাংলাদেশ সময়: ১৮১০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১০, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।