ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইচ্ছেঘুড়ি

ধারাবাহিক কিশোর উপন্যাস

শ্যাডো দ্য শিপ-ডগ | এনিড ব্লাইটন | অনুবাদ: সোহরাব সুমন (পর্ব ১৫)

অনুবাদ রচনা ~ ইচ্ছেঘুড়ি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭২৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২০, ২০১৫
শ্যাডো দ্য শিপ-ডগ | এনিড ব্লাইটন | অনুবাদ: সোহরাব সুমন (পর্ব ১৫)

এনিড ব্লাইটন (১৮৯৭-১৯৬৮)

ব্রিটিশ শিশু সাহিত্যিক এনিড মেরি ব্লাইটন ১৮৯৭ সালে দক্ষিণ লন্ডনে জন্মগ্রহণ করেন। এনিড ব্লাইটন শিশুদের জন্য প্রচুর বই রচনা করেছেন।

তার চল্লিশ বছরের জীবন কালে তিনি প্রায় আটশ’রও বেশি বই লিখেছেন। লেখার বিষয় হিসেবে বেশির ভাগ সময়ই তিনি শিশুতোষ রোমাঞ্চ, রহস্য বা জাদু আশ্রয়ী কল্পনাকে বেছে নিয়ে ছিলেন।

তার উল্লেখযোগ্য গল্পসমূহ হলো: দ্য ফেমাস ফাইভ, দ্য সিক্রেট সেভেন, দ্য ফাইভ ফাইন্ড-কোয়াটার্স, নোডি, দ্য উইসিং চেয়ার, মালোরি টাওয়ার্স, এবং সেন্ট ক্লারে।

তার লেখা বইসমূহ সাংঘাতিক রকমের সফলতা অর্জন করে। এপর্যন্ত তার বই নব্বইটি ভাষায় অনূদিত হয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে তার বই আজও পাঠক সমাদৃত, এপর্যন্ত তার বইয়ের ছশ’ মিলিয়েনরও বেশি কপি বিক্রি হয়েছে।

ইনডেক্স ট্রান্সলেশনামের মতে ২০০৭ সালে ব্লাইটন বিশ্বের পঞ্চম জনপ্রিয় লেখক, তাদের এই তালিকায় লেনিনের পর এবং শেক্সপিয়েরের আগে ব্লাইটনের নাম ঠাঁই পায়। ১৯৬৮ সালে তিনি মৃত্যু বরণ করেন।

শ্যাডো দ্য শিপ-ডগ

এই বইয়ের গল্প খামারে জন্মানো শিপ-ডগ প্রজাতির এক কুকুর, শ্যাডোকে নিয়ে। খামারের শিপ-ডগ জেসির তিনটি বাচ্চা হয়। যার দুটি বিক্রি করে দেয়া হয়, পরে তৃতীয়টিকেও বিক্রি করা হয়, কিন্তু সেটি বারবার ফিরে আসায়, শেষ পর্যন্ত কৃষকের ছেলে জনিকে তা রাখবার অনুমতি দেয়া হয়, এই শর্তে যে খামারের অন্যান্য কুকুরদের মতোই তাকেও জীবিকার জন্য খামারে কাজ করতে হবে।

জনি তার এই কুকুরের নাম দেয় শ্যাডো। সব সময় সে ওর সঙ্গে থাকে। বাচ্চাটিকে সে নিজেই প্রশিক্ষণ দেয়। খামারের কুকুর জেসি বাড়ি, এর আশপাশ এবং উঠান পাহারা দেয়। টিঙ্কার, রাফে, ড্যান্ডি ভেড়া রাখার কাজ করে। ওরা সবাই শিপ-ডগ প্রজাতির কুকুর। রাখাল এন্ডি’র কুকুর বব শঙ্কর প্রজাতির হলেও তাকেও ভেড়া রাখার কাজ করতে হয়। খামারের সব কুকুরের কাছ থেকেও শ্যাডো বিভিন্নভাবে আরো অনেক কিছু শেখে। তারপর একদিন এমন সময় আসে, যখন শ্যাডোর এইসব দক্ষতা, অভিজ্ঞতা, এবং সাহসিকতা জনির জীবন রক্ষায় বারবার কাজে আসে।



পর্ব ১৪ পড়তে ক্লিক করো

নয়. শ্যাডো এবং রাতের-শিকারী

সন্তে শিপ-ডগ শ্যাডো পূর্ণবয়স্ক হয়ে ওঠে। তারপরও নিজেকে সে খেলুড়ে একটা কুকুর ছানা বলেই ভাবে, এবং ছয়মাস বয়সী একটা বাচ্চার মতো জনিকে ঘিরে তিড়িং বিড়িং লাফায়।

‘আমার জুতোর ফিতে টানা বন্ধ করো, শ্যাডো!’ জনি বলে। ‘খোদার দোহাই, জানো না তুমি এখন বড় একটা কুকুর!’

অন্য কুকুরেরাও শ্যাডোর সঙ্গে ছোট্ট কুকুরছানার মতোই ব্যবহার করে, যদিও সে এখন টিঙ্কার রাফের চেয়ে শক্তিশালী, তবু ওরা এখনো তাকে মাটিতে ফেলে গড়াগড়ি খায়, কৌতুকের লড়াই উপভোগ করে।



শ্যাডো অবাক হয়ে সবকিছু শুনছিল। ভেবে অবাক লাগে একটা কুকুরকে এখন থেকে ভেড়াদের সঙ্গে থাকতে হবে। কেন, কুকুর কি বোকা ভেড়াদের অভিভাবক নাকি? শ্যাডোর জানা নেই কৃষকের সহযোগিতার পাশাপাশি অন্যান্য কাজের জন্যও কুকুরদের রাখা হয়। সে অন্য কুকরদের সঙ্গে কথা বলার জন্য দৌড়ে যায়। ‘তোমার কি মনে হয় এটা কুকুর না নেকড়ে? শ্যাডো ঘেউ ঘেউ করে



একদিন জনির বাবা গম্ভীর মুখে ফিরে আসে।

‘কী হয়েছে, বাবা?’ অবাক হয়ে, জনি জিজ্ঞেস করে। ‘কোনো গরু কি অসুস্থ?’
‘না। তবে এইমাত্র কৃষক গ্রেগরির কাছ থেকে একটা ভেড়া শিকারীর কথা শুনলাম,’ কৃষক বলে।
‘ওহ, প্রিয়!,’ তার বউ বলল। ‘আমাদের সব ভেড়া ঠিক আছে তো?’
‘ওদের কেউ ছুঁয়েও দেখেনি,’ কৃষক বলে। ‘তবে কৃষক গ্রেগরি আমাকে বলল গতরাতে ওর দুটা ভেড়াকে মারা হয়েছে আর আরেকটা এমন জখম হয়ছে যে আজকে সকালে সেটা নড়তেই পারেনি। ’
‘ওহ! বাবা! আমার মনে হয়, ভেড়া শিকারীটা ক’দিনের মধ্যেই ধরা পড়বে!’ জনি বলে। ‘কে সে? নেকড়ে?’
‘মনে হয় না। ’ কৃষক বলেন। ‘খামার শুরুর পর থেকে এই জেলায় কোনো দিন নেকড়ে এসেছে বলে শুনিনি—এবং এই করে আমার সারাটা জীবন কাটল! না—জিনিসটা বড় একটা কুকুরের মতো কিছু একটা হবে হয়ত। ’
‘এটাকে কি ধরা সম্ভব না?’ জনি জানতে চায়।
‘ধরা পড়বে এবং গুলি খেয়ে মরবে, আমি আশা করছি,’ কৃষক বলেন। ‘একটা খুনি কুকুর অন্য যেকোন কিছুর চেয়ে কয়েক রাতের মধ্যেই, একটা ভেড়ার পালের প্রচুর ক্ষতি করতে সক্ষম। ঠিক, আমরা আশা করছি সেটা আমাদের পালের কাছে ঘেঁষবে না। ভালো হয় যদি কুকুরগুলোকে মেষপালকের ওখানে গিয়ে ববের সঙ্গে ঘুমাতে বলা হয়, জনি। ’

শ্যাডো অবাক হয়ে সবকিছু শুনছিল। ভেবে অবাক লাগে একটা কুকুরকে এখন থেকে ভেড়াদের সঙ্গে থাকতে হবে। কেন, কুকুর কি বোকা ভেড়াদের অভিভাবক নাকি? শ্যাডোর জানা নেই কৃষকের সহযোগিতার পাশাপাশি অন্যান্য কাজের জন্যও কুকুরদের রাখা হয়। সে অন্য কুকরদের সঙ্গে কথা বলার জন্য দৌড়ে যায়। ‘তোমার কি মনে হয় এটা কুকুর না নেকড়ে? শ্যাডো ঘেউ ঘেউ করে।
‘ওহ্, একটা কুকুর, একেবারে নিশ্চিত,’ হলদে দাঁত দেখিয়ে, ঘেউ ঘেউ করে বব বলে। ‘আমি ওটাকে ধরব। একটা কুকুর খুনিতে পরিণত হলে সেটা তখন খুবই ক্ষতিকর একটা জন্তু। ’
‘আমরা কি রাতের বেলা ওর জন্য অপেক্ষা করব?’ ব্যগ্রভাবে শ্যাডো বলে। ‘আমিও কি এখানে আসব এবং তোমার সঙ্গে পাহাড়ের আশপাশে পাহারা দেব, বব?’
‘হ্যাঁ,’ বব বলে। ‘আমরা সবাই পাহারা দেব। আমারা সবাই মিলে মাঠের চারদিকে ছড়িয়ে পড়ব এবং খুনি কুকুরটার আসার শব্দের অপেক্ষায় থাকব!’

তাই কয়েক রাত ধরে পাঁচটি কুকুর চুপচাপ মাঠে শুয়ে থাকে, সারারাত সজাগ থেকে কান খাড়া করে সবকিছু মনোযোগ দিয়ে শোনে। তবে ওরা একটা শব্দও শুনতে পায় না, কেবল মাঠের ওপর দিয়ে নাইটিঙ্গেলের তীব্র স্বরে গান আর একটা হুতুম পেঁচার ডাক ভেসে আসে।

কিন্তু খুনি-কুকুরটা কাজ চালিয়েই যেতে থাকে। বেশির ভাগ খামার থেকে ভেড়া কামড়াবার বা জখম হবার, শাবক মারার এবং নিয়ে যাবার খবর আসতে থাকে, এবং কৃষকেরা চিন্তিত হয়ে পড়ে। লাঠি আর বন্দুক হাতে রাতের বেলা তারা মাঠে যেতে শুরু করে। কিন্তু কেউই সেই খুনি কুকুরটাকে দেখতে পায় না।
‘ওটা খুবই ধূর্ত একটা প্রাণী। ’ একদিন সকাল বেলায় রাফে বলে। ‘একই খামারে সে দু’বার যায় না। ও নিশ্চয়ই জানে লোকেরা কখন ওকে পাহারা দেয়। ভালো, আমরাও পাহারায় থাকছি। ’

প্রতিরাতে ওরা পাহারায় থাকে—এবং জনি তাদের বলে সপ্তাহ জুড়ে খুনি-কুকুরটা আদৌ কোনো ভেড়ার পালের কাছে আসেনি। ভেড়ারা সব নিরাপদেই আছে।

‘বাবা বলেছে যে ওটা কোনো ফাঁদে আটকা পড়েছে, নয়ত ওর মালিক ওকে বন্দি করে রেখেছে,’ জনি বলে। ‘যাই হোক, শ্যাডো, আজকে রাতে তুমি চলে আসতে পারো এবং আমার সঙ্গে শুতে পারো। রাত করে মাঠে পাহারা দেবার পর থেকে আমার পায়ের কাছে তোমাকে আর পাচ্ছি না সোনা!’

তাই সেই রাতে শ্যাডো তার আগেকার ঘুমাবার জায়গা জনির পায়ের কাছে চলে যায় এবং খুব শান্তিতে ঘুমায়। কিন্তু পরদিন সকাল বেলায় ওর আর জনির জন্য কী ভয়ানক একটা আঘাতই না অপেক্ষা করছিল! রাতে সেই খুনি-কুকুরটা খামারে ঢোকে, এবং তিনটে ভেড়া মারে! অন্য দুটা ভেড়াকে কামড়ায় এবং একটা বাচ্চাকে টেনে-হিঁচড়ে নিয়ে যায়। শ্যাডো হতবিহ্বল হয়ে সব শোনে।

জনির বাবার চেহারা চিন্তিত আর ফ্যাঁকাশে হয়ে আসে। ভেড়া হারাবার বিষয়টা তার পক্ষে কোনোভাবেই মেনে নেয়া সম্ভব নয়, কারণ ভেড়ার জন্যই খামারে ক’টা টাকা আসে।

‘প্রতি রাতেই তো সবগুলো কুকুরকে পাহারায় থাকতে বলা হয়েছে, তাহলে কেমন করে খুনি-কুকুরটা আসে!’ সে আর্তনাদ করে ওঠে। ‘ঠিক আছে, আজ রাতে আমিই বন্দুক নিয়ে বের হচ্ছি—যদিও আমি নিশ্চিত টানা দু’রাত ও আর এদিকে আসছে না। ’

পর্ব ১৬ পড়তে ক্লিক করো

বাংলাদেশ সময়: ১৭১০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২০, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।