ঢাকা, শনিবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

ইচ্ছেঘুড়ি

ধারাবাহিক কিশোর উপন্যাস

শ্যাডো দ্য শিপ-ডগ | এনিড ব্লাইটন | অনুবাদ: সোহরাব সুমন (পর্ব ১৯)

অনুবাদ রচনা ~ ইচ্ছেঘুড়ি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৩২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৯, ২০১৫
শ্যাডো দ্য শিপ-ডগ | এনিড ব্লাইটন | অনুবাদ: সোহরাব সুমন (পর্ব ১৯)

এনিড ব্লাইটন (১৮৯৭-১৯৬৮)

ব্রিটিশ শিশু সাহিত্যিক এনিড মেরি ব্লাইটন ১৮৯৭ সালে দক্ষিণ লন্ডনে জন্মগ্রহণ করেন। এনিড ব্লাইটন শিশুদের জন্য প্রচুর বই রচনা করেছেন।

তার চল্লিশ বছরের জীবন কালে তিনি প্রায় আটশ’রও বেশি বই লিখেছেন। লেখার বিষয় হিসেবে বেশির ভাগ সময়ই তিনি শিশুতোষ রোমাঞ্চ, রহস্য বা জাদু আশ্রয়ী কল্পনাকে বেছে নিয়ে ছিলেন।

তার উল্লেখযোগ্য গল্পসমূহ হলো: দ্য ফেমাস ফাইভ, দ্য সিক্রেট সেভেন, দ্য ফাইভ ফাইন্ড-কোয়াটার্স, নোডি, দ্য উইসিং চেয়ার, মালোরি টাওয়ার্স, এবং সেন্ট ক্লারে।

তার লেখা বইসমূহ সাংঘাতিক রকমের সফলতা অর্জন করে। এপর্যন্ত তার বই নব্বইটি ভাষায় অনূদিত হয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে তার বই আজও পাঠক সমাদৃত, এপর্যন্ত তার বইয়ের ছশ’ মিলিয়েনরও বেশি কপি বিক্রি হয়েছে।

ইনডেক্স ট্রান্সলেশনামের মতে ২০০৭ সালে ব্লাইটন বিশ্বের পঞ্চম জনপ্রিয় লেখক, তাদের এই তালিকায় লেনিনের পর এবং শেক্সপিয়েরের আগে ব্লাইটনের নাম ঠাঁই পায়। ১৯৬৮ সালে তিনি মৃত্যু বরণ করেন।

শ্যাডো দ্য শিপ-ডগ

এই বইয়ের গল্প খামারে জন্মানো শিপ-ডগ প্রজাতির এক কুকুর, শ্যাডোকে নিয়ে। খামারের শিপ-ডগ জেসির তিনটি বাচ্চা হয়। যার দুটি বিক্রি করে দেয়া হয়, পরে তৃতীয়টিকেও বিক্রি করা হয়, কিন্তু সেটি বারবার ফিরে আসায়, শেষ পর্যন্ত কৃষকের ছেলে জনিকে তা রাখবার অনুমতি দেয়া হয়, এই শর্তে যে খামারের অন্যান্য কুকুরদের মতোই তাকেও জীবিকার জন্য খামারে কাজ করতে হবে।

জনি তার এই কুকুরের নাম দেয় শ্যাডো। সব সময় সে ওর সঙ্গে থাকে। বাচ্চাটিকে সে নিজেই প্রশিক্ষণ দেয়। খামারের কুকুর জেসি বাড়ি, এর আশপাশ এবং উঠান পাহারা দেয়। টিঙ্কার, রাফে, ড্যান্ডি ভেড়া রাখার কাজ করে। ওরা সবাই শিপ-ডগ প্রজাতির কুকুর। রাখাল এন্ডি’র কুকুর বব শঙ্কর প্রজাতির হলেও তাকেও ভেড়া রাখার কাজ করতে হয়। খামারের সব কুকুরের কাছ থেকেও শ্যাডো বিভিন্নভাবে আরো অনেক কিছু শেখে। তারপর একদিন এমন সময় আসে, যখন শ্যাডোর এইসব দক্ষতা, অভিজ্ঞতা, এবং সাহসিকতা জনির জীবন রক্ষায় বারবার কাজে আসে।



পর্ব ১৮ পড়তে ক্লিক করো

এগারো. উপকারী কুকুর, শ্যাডো

শ্যাডো বসে বসে অপেক্ষা করতে থাকে। যে পথ দিয়ে জনি আসবে, সেই গলির দিকে তার চোখ তাক করা রয়েছে। রাফে তার কাছে দৌড়ে আসে।
‘কী হয়েছে?’ তোমার লেজ নুয়ে পড়ে রয়েছে কেন?
‘আমি অস্বস্তিতে আছি। ’ শ্যাডো বলে। ‘আমার মনে হচ্ছে জনির কোনো বিপদ হয়েছে। আমি জানতাম এমনটা হবে!’
রাফে বুঝতে পারে শ্যাডো কী বলতে চাইছে। সেও গলির দিকে তাকায়। ‘হতে পারে জনি খুব তাড়াতাড়ি ফিরে আসবে। সম্ভবত ওর বাইসাইকেলটা ভেঙে গেছে। ’
‘আমি চাইনি জনি আমাকে ছাড়া যাক। ’ শ্যাডো বলে। ‘ওর সঙ্গে থাকলে আমি ওকে দেখেশুনে রাখতে পারি। ’



‘তবে সে তো অনেক দূরের পথ! বিদায়, রাফে। জানি না আবার কখন ফিরব। ’ কথাটা বলেই শ্যাডো যাত্রা শুরু করে। জনি যে পথে গলি ধরে এবং সড়ক হয়ে এগিয়ে গেছে সে পথে সে যায় না। না—পাহাড়ের ভেতর দিয়ে সংক্ষিপ্ত পথ ওর চেনা। পরিচিত খরগোস, শেয়াল, বেজি, এবং বড় আকৃতির নেউলের ঘ্রাণ শুকতে শুকতে, সে দ্রুত দৌড়াতে শুরু করে। আশা করছে খুব শীঘ্রই সে জনির গন্ধও খুঁজে পাবে!



রাফে শ্যাডোকে সঙ্গ দেবার জন্য ওর পাশে গিয়ে বসে। ড্যান্ডিও চলে আসে, এবং তিনটে কুকুরই চুপচাপ একসঙ্গে বসে থাকে। এরপর পাঁচটা বাজলে ওরা দেখতে পায়, জনির মা খামারঘর থেকে বেরিয়ে এসে, জনি আশপাশে কোথাও আছে কিনা তা দেখতে গলির দিকে উঁকি-ঝুঁকি মারছে।
‘জনি! জনি!’ তিনি বলে ওঠেন। ‘তুমি কি এখনো ফিরে আসোনি?’
কাঁধে একটা খড় তোলার লাঠি নিয়ে উইল এগিয়ে আসে। ‘আমার মনে হয় না মালিক জনি এখনো ফিরে এসেছে, ম্যাম। ’ সে বলে। ‘ও বলে গেছে বাড়ি ফিরে প্রথমেই আমার সাইকেল ফেরত দিয়ে যাবে, কারণ আমি আজকে সন্ধ্যার আগেই সেটা ফেরত চেয়েছিলাম—এবং সে এখনো সেটা ফিরিয়ে দিতে আসেনি। ’
‘ওহ, প্রিয়! কী হলো ভেবে আমার অবাক লাগছে। ’ জনির মা চিন্তিত স্বরে বলেন। ‘এখন চা খাবার সময় পেরিয়ে গেছে—আর জনি বলেছিল এই সময়ে মধ্যে বাড়ি ফিরে আসবে। ’

শ্যাডো তীর বেগে পাহাড় থেকে জনির মায়ের কাছে ছুটে আসে। অন্ধকারের মাঝেও সে তার শঙ্কিত চোখদুটা দেখতে পাচ্ছিল। ‘তাহলে তুমিও দেখছি চিন্তিত। ’ কৃষকের বউ বলে। ‘জনির কী হয়েছে, শ্যাডো? তুমি কি ওকে আমার জন্য খুঁজে দিতে পারো না?’
শ্যাডো ঘেউ ঘেউ করে ওঠে এবং একটানা চিৎকার করতে থাকে। এখন একমাত্র সে-ই জনিকে খুঁজে বের করতে পারে!
সে রাফের কাছে দৌড়ে আসে। ‘উঁচু পাহাড়টা কোন দিকে, জনি কোথায় গেছে? সে জিজ্ঞেস করে। ‘আমি কি আগে কখনো সেখানে গিয়েছি?’
‘না’। রাফে বলে। ‘তবে তোমার কি মনে আছে একবার আমরা কৃষক ল্যাংডনের কাছে কোথাও কয়েকটা ভেড়াকে রেখে এসেছিলাম? ঠিক আছে, উঁচু পাহাড়টা এই তো সামনেই—খামার পেরুলেই তুমি সেটা দেখতে পাবে—প্রকাণ্ড একটা পাহাড় আকাশে গিয়ে ঠেকেছে। ’
‘আমি ওটা খুঁজে নেব। ’ শ্যাডো বলে। ‘তবে সে তো অনেক দূরের পথ! বিদায়, রাফে। জানি না আবার কখন ফিরব। ’

কথাটা বলেই শ্যাডো যাত্রা শুরু করে। জনি যে পথে গলি ধরে এবং সড়ক হয়ে এগিয়ে গেছে সে পথে সে যায় না। না—পাহাড়ের ভেতর দিয়ে সংক্ষিপ্ত পথ ওর চেনা। পরিচিত খরগোস, শেয়াল, বেজি, এবং বড় আকৃতির নেউলের ঘ্রাণ শুকতে শুকতে, সে দ্রুত দৌড়াতে শুরু করে। আশা করছে খুব শীঘ্রই সে জনির গন্ধও খুঁজে পাবে!

সংক্ষিপ্ত পথেও ল্যাংডনের খামারটা অনেক দূরে। তবে শ্যাডো একটিবারের জন্যেও ক্লান্ত হয়ে পড়ার কথা ভাবে না, যদিও সারাদিন তার ওপর কঠোর পরিশ্রমের ধকল গেছে। তার মনে কেবলই জনির চিন্তা। জনিকে খুঁজে পেতে হবে। অবশ্যই পেতে হবে, অবশ্যই। তার বিশ্বস্ত মন একথা জেনে গেছে যে জনি কোনো না কোনো বিপদে পড়েছে। জনির কিছু একটা হয়েছে। এ ব্যপারে সে একেবারেই নিশ্চিত।

অবশেষে সে ল্যাংডনের খামারে এসে পৌঁছে। সূর্যটা ডুবতে শুরু করেছে। শীঘ্র অন্ধকার ঘনিয়ে আসবে। শ্যাডো তড়িঘড়ি করে খামারের গলি পেরিয়ে আসে। সংক্ষিপ্ত পথে চলতে গিয়েও সে খামারের উঠানের ভেতর দিয়ে যাবার সাহস দেখায় না, কারণ খামারের কুকুরগুলো ওকে দেখে তেড়ে আসতে পারে। কৃষকের অনুমতি ছাড়া কোনো কুকুরই অন্য কুকুরকে সেখান দিয়ে যেতে দেবে না।

আরো কিছুদূর পথ এগিয়ে আসার পর, সন্ধ্যার আকাশে, উঁচু পাহাড়ের সীমারেখা দেখতে পাওয়া যায়। শ্যাডো আরো দ্রুত ছুটতে শুরু করে। কিছু একটা তাকে অনবরত বলছে জনি ওখানে আছে।

কুকুরটা পাহাড়ের ঢাল দিয়ে দৌড়ে আসে—এবং হঠাৎই ওর হৃদকম্পন বেড়ে যায়। সে জনির গন্ধ টের পায়! জনি ওখানে আছে, এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহের অবকাশ নেই।

শ্যাডো গাছের দিকে নাক তাক করে—এবং হঠাৎই জনির বাইসাইকেলটা দেখতে পায়, একটা হেইজল গাছের সঙ্গে ঠেস দিয়ে রাখা। সেটার গন্ধ শুঁকে। তারপর ছেলেটার পায়ের গন্ধ খুঁজতে শুরু করে। এখানে সেখানে, তার প্রচুর পায়ের ছাপ খুঁজেও পায়। শ্যাডো নাক দিয়ে সেসব অনুসরণ করতে থাকে—এবং সবশেষে বুঝতে পারে পায়ের ছাপগুলো পাহাড় চূড়ার দিকে গেছে।

শ্যাডো সেগুলো অনুসরণ করে। জনি যেখান দিয়ে পাহাড় বেয়ে উঠতে শুরু করেছিল সেখানে আসে—জনি যেখানে পিছল খায় এবং পড়ে যায় সেখানে আসে—এবং তারপর, বাতাসে জনির তীব্র একটা ঘ্রাণ ভেসে আসতে থাকে, তাই শ্যাডো মাথা নিচু করে এবং খুব জোড়ে ঘেউ ঘেউ করে ওঠে:
‘জনি! আমি এখানে!’
খুব ক্ষীণ একটা স্বর একেবারে পাহাড়ের তলদেশ থেকে জানান দেয়: ‘শ্যাডো, ওহ, শ্যাডো!’
শ্যাডো খুব দ্রুত পাহাড় থেকে নেমে আসে! পাথর বা শিলাখণ্ড কোনো কিছুই সে গ্রাহ্য করে না। তার মন জুড়ে কেবল একটাই কথা—আবারও সে তার প্রিয় প্রভুকে খুঁজে পেয়েছে। জনি! জনি!

পর্ব ২০ পড়তে ক্লিক করো

বাংলাদেশ সময়: ১৫৩৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৯, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।