ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইচ্ছেঘুড়ি

ধারাবাহিক কিশোর উপন্যাস

শ্যাডো দ্য শিপ-ডগ | এনিড ব্লাইটন | অনুবাদ: সোহরাব সুমন (পর্ব ২৪)

অনুবাদ রচনা ~ ইচ্ছেঘুড়ি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৪০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৭, ২০১৬
শ্যাডো দ্য শিপ-ডগ | এনিড ব্লাইটন | অনুবাদ: সোহরাব সুমন (পর্ব ২৪)

এনিড ব্লাইটন (১৮৯৭-১৯৬৮)

ব্রিটিশ শিশু সাহিত্যিক এনিড মেরি ব্লাইটন ১৮৯৭ সালে দক্ষিণ লন্ডনে জন্মগ্রহণ করেন। এনিড ব্লাইটন শিশুদের জন্য প্রচুর বই রচনা করেছেন।

তার চল্লিশ বছরের জীবন কালে তিনি প্রায় আটশ’রও বেশি বই লিখেছেন। লেখার বিষয় হিসেবে বেশির ভাগ সময়ই তিনি শিশুতোষ রোমাঞ্চ, রহস্য বা জাদু আশ্রয়ী কল্পনাকে বেছে নিয়ে ছিলেন।

তার উল্লেখযোগ্য গল্পসমূহ হলো: দ্য ফেমাস ফাইভ, দ্য সিক্রেট সেভেন, দ্য ফাইভ ফাইন্ড-কোয়াটার্স, নোডি, দ্য উইসিং চেয়ার, মালোরি টাওয়ার্স, এবং সেন্ট ক্লারে।

তার লেখা বইসমূহ সাংঘাতিক রকমের সফলতা অর্জন করে। এপর্যন্ত তার বই নব্বইটি ভাষায় অনূদিত হয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে তার বই আজও পাঠক সমাদৃত, এপর্যন্ত তার বইয়ের ছশ’ মিলিয়েনরও বেশি কপি বিক্রি হয়েছে।

ইনডেক্স ট্রান্সলেশনামের মতে ২০০৭ সালে ব্লাইটন বিশ্বের পঞ্চম জনপ্রিয় লেখক, তাদের এই তালিকায় লেনিনের পর এবং শেক্সপিয়েরের আগে ব্লাইটনের নাম ঠাঁই পায়। ১৯৬৮ সালে তিনি মৃত্যু বরণ করেন।

শ্যাডো দ্য শিপ-ডগ

এই বইয়ের গল্প খামারে জন্মানো শিপ-ডগ প্রজাতির এক কুকুর, শ্যাডোকে নিয়ে। খামারের শিপ-ডগ জেসির তিনটি বাচ্চা হয়। যার দুটি বিক্রি করে দেয়া হয়, পরে তৃতীয়টিকেও বিক্রি করা হয়, কিন্তু সেটি বারবার ফিরে আসায়, শেষ পর্যন্ত কৃষকের ছেলে জনিকে তা রাখবার অনুমতি দেয়া হয়, এই শর্তে যে খামারের অন্যান্য কুকুরদের মতোই তাকেও জীবিকার জন্য খামারে কাজ করতে হবে।

জনি তার এই কুকুরের নাম দেয় শ্যাডো। সব সময় সে ওর সঙ্গে থাকে। বাচ্চাটিকে সে নিজেই প্রশিক্ষণ দেয়। খামারের কুকুর জেসি বাড়ি, এর আশপাশ এবং উঠান পাহারা দেয়। টিঙ্কার, রাফে, ড্যান্ডি ভেড়া রাখার কাজ করে। ওরা সবাই শিপ-ডগ প্রজাতির কুকুর। রাখাল এন্ডি’র কুকুর বব শঙ্কর প্রজাতির হলেও তাকেও ভেড়া রাখার কাজ করতে হয়। খামারের সব কুকুরের কাছ থেকেও শ্যাডো বিভিন্নভাবে আরো অনেক কিছু শেখে। তারপর একদিন এমন সময় আসে, যখন শ্যাডোর এইসব দক্ষতা, অভিজ্ঞতা, এবং সাহসিকতা জনির জীবন রক্ষায় বারবার কাজে আসে।



পর্ব ২৩ পড়তে ক্লিক করো

কৃষক রাফেকে নিয়ে ফিরে যান। শ্যাডো জিপসি কাফেলায় কারাভাঁর কাছাকাছি বসে থাকে। তীক্ষ্ণ চোখে সব কিছুর ওপর সতর্ক দৃষ্টি রাখে। সে নোংরা ছেলেমেয়ে, পূতিগন্ধময় কারাভাঁ, আধ-ধোয়া কাপড়ের সারি, আগুনের ওপর হাড়ি চাপিয়ে কিছু একটা রান্না করতে থাকা এক বৃদ্ধা জিপসিকে দেখতে পায়। রান্নাটা খুব সুগন্ধযুক্ত।

জিপসি লোকটি সেই বৃদ্ধার কাছে যায় এবং তার সঙ্গে কথা বলে। মহিলা মাথা নুইয়ে সম্মতি জানায়, এবং শ্যাডোর দিকে চেয়ে দেখে।

জিপসিটি তাকে একখণ্ড মাংসে বিষ মিশিয়ে সেটা শ্যাডোর দিকে ছুঁড়ে দিতে বলে। মহিলা তার কারাভাঁর ভেতর ঢোকে এবং একটি বোতল নিয়ে বেরিয়ে আসে। তারপর আগুনের কাছে ফিরে এসে, সূঁচালো একটা লাঠি দিয়ে মজাদার এক টুকরো খরগোসের মাংস তুলে নেয়। সে মাংসের তালটা ফাঁক করে ধরে থাকে এবং বোতল থেকে কয়েক ফোঁটা তরল সেই রসালো মাংসের ভেতর ঢেলে দেয়। মাংসের ছেঁদাটা বন্ধকরে কয়েক মিনিটের জন্য মাটিতে শুইয়ে রাখে।

এরপর সেটা শ্যাডোর দিকে ছুঁড়ে দেয়, ভাবে কুকুরটি সেটা গিলে খাবে। কিন্তু শ্যাডো একটুও নড়ে না। সে তার প্রভুর শত্রুদের কাছ থেকে কোনো উপহার নিতে রাজি নয়! এমনকি সে মাংসের দলাটা শুঁকে পর্যন্ত দেখে না!

‘কুকুরটি বজ্জাত,’ সে বলে। ‘ব্যাটা মাংসের দিকে তাকিয়ে পর্যন্ত দেখছে না!’

জিপসি লোকটি তড়িৎ শ্যাডোর দিকে তাকায়। তারপর একটা পাথর তুলে নিয়ে তীব্র গতিতে শ্যাডোর দিকে ছুঁড়ে মারে।   কুকুরটি কয়েকটা জিপসি ছেলে-মেয়ের দিকে তাকিয়ে ছিল এবং ছুটন্ত পাথর দেখতে পাবার পর যেভাবে একপাশে কাত হয়, হঠাৎ সেরকম সরে যেতে পারে না।

সেটা তার মাথার একপাশে প্রচণ্ড আঘাত হানে। পাথরটা ছিল খুব বড়, এবং কুকুরটি আধো হতচেতন অবস্থায় তৎক্ষণাৎ গড়াগড়ি খেতে শুরু করে। তার মনে হচ্ছিল সে বুঝি স্বপ্ন দেখছে। সে নড়তে পারছিল না। তার মাথায় প্রচণ্ড ব্যথা হতে থাকে।

এরপর একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে এবং চোখ বুঁজে।

এবার তার কাছে যাওয়া সেই জিপসির জন্য নিরাপদ, কারণ অসহায় শ্যাডো নিজেকে সাহায্যের জন্য এখন কিছুই করতে পারবে না।

‘তাড়াতাড়ি! একটা থলে নিয়ে এসো!’ জিপসি লোকটি বৃদ্ধাকে বলল, আরো দু’তিনজন জিপসি দৌড়ে আসে, এবং অতিদ্রুত সেই প্রকাণ্ড কুকুরটিকে বড় একটা শক্ত থলের ভেতরে পুরে ফেলা হয়। সেই জিপসি লোকটি থলের মুখটা দড়ি দিয়ে খুব শক্ত করে বাঁধে, এবং তারপর সে এবং আরো একজন মিলে অসহায় শ্যাডোকে তাদের কারাভাঁর ভেতরে নিয়ে যায়। ওরা তাকে ভেতরে ছুঁড়ে ফেলে এবং দরজার ভেতরে বন্দি করে রাখে।

‘এবার আমরা সবাই ভাগব!’ দুলপরা জিপসিটা বলে। ‘আমি কৃষককে বলেছিলাম আমাদের চলে যেতে বলার কারণে তাকে দুঃখ পেতে হবে—এবং এবার ব্যাটা বুঝবে! কুকুরটিকে আমি চড়া দামে বিক্রি করতে পারব!’

চৌদ্দ. শ্যাডো, কোথায় তুমি?

সেদিন সকালে প্রতিদিনের মতোই খামারের গেট পর্যন্ত এগিয়ে দিতে আসা শ্যাডোকে বিদায় জানিয়ে জনি স্কুলের পথে রওনা হয়।

‘জিপসিদের সঙ্গে কথা বলার সময় ওকে আমি সঙ্গে নেব,’ তার বাবা তাকে বলে। ‘ওরা শ্যাডো এবং রাফের চাহনি মোটেই পছন্দ করবে না!’
‘কেউ যদি শিপ-ডগটিকে বিরক্ত করতে আসেই তাহলে তার জন্য আমার দুঃখ হবে!’ জবাবে জনি বলে। ‘গুডবাই বাবা, খাবারের সময় দেখা হচ্ছে!’

সকালের স্কুল শেষে জনি হেঁটে হেঁটে বাড়ি ফিরে আসে। পথে দুষ্ট টমকে দেখতে পায়, ছেলেটা এক সময় তাকে বিরক্ত করতে গলির ধারে অপেক্ষা করত। কিন্তু ধারি টমের যথেষ্ট শিক্ষা হয়েছে এবং এখন জনি পথ চলবার সময় সে তাকায় না পর্যন্ত।

স্কুল থেকে ফিরবার সময় জনি শ্যাডোর খোঁজ করে এবং তার সাথে দেখা হবার অপেক্ষায় থাকে। প্রতিদিন জনি কখন স্কুল থেকে ফিরে আসে শ্যাডোর তা জানা এবং সম্ভব হলে সে তার সঙ্গে দেখা করে। সব সময় সে খামারের দরজার কাছাকাছি থাকে—এবং জনিকে দেখতে পেলেই গলিতে নেমে এসে ঘুরঘুর করতে থাকে।

‘সত্যি, কুকুরটা যেভাবে ওকে শুভেচ্ছা জানায়, তোমার কি মনে হয় টানা একমাস জনি বাড়ির বাইরে কোথাও থাকতে পারবে!’ তার মা প্রায়ই ওর বাবাকে কথাটা বলত।

কিন্তু সেদিন সকালে শ্যাডোকে দেখা যায় না। জনি অবাক হয়। শ্যাডো কি তাহলে অন্য কুকুরদের সঙ্গে পাহাড়ে কাজ করছে? তার সেটা মনে হয় না, কারণ তখন ভেড়ার রাখালদের ব্যস্ততার সময় নয়।

‘আজব!’ মনে আঘাত পেয়ে, জনি বলে। ‘শ্যাডো তো এসময় প্রতিদিন আমার কাছে আসে। শ্যাডো! শ্যাডো! কোথায় তুমি?’

জনি শিস দেয়। বাবার কাছ থেকে সে খুব জোড়ে শিস দিতে শিখেছে। সমস্ত খামার জুড়ে তা প্রতিধ্বনিত হতে থাকে, এবং পাহাড়ের ওপর থেকে টিঙ্কার, ড্যান্ডি, ববও তা শুনতে পায়।

‘শিস দিয়ে সেকি কি শ্যাডোকে ডাকছে,’ বব বলে। ইঁচড়ে পাকা শ্যাডো এখন কোথায়?’
‘রাফে বলেছে জিপসিরা যাতে কোনো ক্ষতি করতে না পারে তাই কৃষক ওকে পাহারায় রেখে এসছেন,’ টিঙ্কার বলে। ‘কিন্তু ওরা তো এখন চলে গেছে। শ্যাডো তাহলে কোথায় গেল, আমি অবাক হচ্ছি, আজকে সকাল থেকে সে এখানে নেই। ’
‘অহ্, আমার মনে হচ্ছে জিপসিরা ঠিকঠাক গ্রাম ছাড়ছে কিনা সেটা দেখতে গেছে। ’ ড্যান্ডি বলে।

জনি ঘরের ভেতর ঢুকে দেখে মা দুধ দিয়ে মাখন বানাচ্ছে। ‘মা! শ্যাডো কোথায়?’ সে জানতে চায়। ‘আজকে সকালে ও আমার সঙ্গে দেখা করতে আসেনি। ’
‘ও আসেনি?’ ওর মা অবাক হয়ে বলে। ‘সত্যিই, আমিও জানি না ও কোথায়। তোমার বাবা বলেছে ওকে জিপসিদের পাহারায় রেখে এসেছে। সে শ্যাডোকে সঙ্গে নিয়েছিল কেবল এটুকুই জানি, এবং রাফেও তাই জানে—তবে শেষবার ওকে রাফে এবং তোমার বাবার সঙ্গে দেখেছি। কয়েক মিনিটের মাথায় তিনি খাবার খেতে আসবেন। তখন তাকেই না হয় জিজ্ঞেস করো শ্যাডো কোথায়। এভাবে উদভ্রান্তের মতো তাকিয়ে থেকো না! শ্যাডো সম্ভবত পাহাড়ের উপর আর সব কুকুরদের সঙ্গে খেলছে!’
‘ও সেখানে নেই, আমি নিশ্চিত,’ জনি বলে। ‘কাজ না থাকলে কখনোই ও আমার সঙ্গে দেখা করতে ভুল করে না, মা!’
‘ঠিক আছে, তাহলে ও জিপসিদের তাঁবুর কাছে আছে, আমার মনে হচ্ছে,’ তার মা বলে।
‘হতে পারে। ’ জনি বলে। ‘কিন্তু এখন তো কোনো তাঁবু দেখতে পাইনি। মনে হচ্ছে জিপসিরা চলে গেছে। মা, আমি কি একটু এগিয়ে দেখে আসব?’
‘এখন না। ’ মা বলে। ‘খাবার সময় হয়ে গেছে। দেখো, ওই যে তোমার বাবা আসছে। ’

কৃষক রাফেকে সঙ্গে নিয়ে ভেতরে ঢুকে জুতার কাদা ঝারতে থাকে। জনি তার কাছে দৌড়ে যায়।

‘বাবা! শ্যাডো কোথায়?’
‘আমি ওকে জিপসিদের পাহারায় রেখে এসেছি,’ কৃষক বলে। ‘ও কি ফিরে আসেনি? ঠিক আছে জিপসিরা চলে গেছে, শ্যাডো তাহলে যেকোন মুহূর্তে এখানে চলে আসবে। জায়গাটা পরিষ্কার করবার জন্য জিপসিদের সন্ধ্যে নাগাদ সময় বেঁধে দিয়ে ছিলাম—এবং দেখলাম তার ঘণ্টা খানেক আগেই ওদের কারাভাঁগুলো চলতে শুরু করেছে। ’

জনি গভীর চিন্তায় নিমগ্ন হয়। জিপসিরা যদি চলেই গিয়ে থাকে, শ্যাডোর তো তাহলে ওদের ছাউনির কাছে থাকবার কোনো প্রয়োজন নেই। তাহলে ও কোথায় গেল?

‘মা, জিপসিরা যেখানে তাঁবু গেড়েছিল, আমার সেখানে যাওয়া দরকার এবং শ্যাডো সেখানে আছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে হবে। ,’ সে বলে। ‘জানোই তো, যতক্ষণ পর্যন্ত বাবা তাকে কোনো জায়গা থেকে চলে আসতে না বলে ততক্ষণ সে সেখানেই অপেক্ষা করে। তুমি তো জানোই ও কতটা বিশ্বস্ত। ’
‘জিপসিরা চলে গেলে সেখানে আর অপেক্ষা করবার প্রয়োজন নেই এইটুকু বোঝার বুদ্ধি ওর আছে!’ কৃষক বলে। ‘নচ্ছার পাজিগুলো চলে যাবার পর ওকে আর ছাউনির কাছে পাহারায় পাবে না! ওদের নিরাপদে আমাদের ভূখণ্ড পার করে দিয়ে তবেই সে খামারে ফিরে আসবে। মনে হচ্ছে ও এখানেই আশপাশে কোথাও আছে। ’
‘বাবা, আমি বারবার করে শিস দিয়ে ডেকে দেখেছি,’ হতাশ হয়ে জনি বলে। ‘ও মাইল খানেকের মধ্যে কোথাও থাকলে আমাকে শুনতে পেত এবং চলে আসত! ওর কানদুটা কতটা সজাগ তা তো তুমি জানোই। ওর কিছু একটা হয়েছে। ’
‘বোকা!’ তার বাবা বলে। ‘শীঘ্র দরজায় এসে নাক ঠুকতে শুরু করবে। বসো আর খাবার খাও। ’
‘না,’ তার বাবা বলে ‘এরপর প্রচুর সময় পাবে। এসো, ছেলেমানুষি করো না!’

অসহায় জনিকে বসে বসে খাবার চেষ্টা করতে হয়। যদিও সে কোনো কিছুই গিলতে পারছিল না! খুব চেষ্টা করছিল, এতে করে সে অসুস্থ বোধ করে। চেহারা ফ্যাকাশে হয়ে আসে।

‘জনি! কী হয়েছে তোমার?’ শেষে মা জানতে চান। ‘তুমি কি সুস্থ বোধ করছো না?’
‘খুব একটা নয়। ’ সোজাসাপ্টাভাবে জনি বলে। ‘আমি কিছুই খেতে পারছি না, মা। ’
‘থাক তাহলে। ’ তার মা বলে। জনি কৃতজ্ঞতার সঙ্গে তার ছুরি আর কাটাচামচ নামিয়ে রাখে। সে তার চেয়ার গলে নামে এবং বাইরে চলে আসে। মুক্ত বাতাসে আসার পর খানিকটা স্বস্তি বোধ করে।

‘শ্যাডো, আমার কোনো বিপদ হলে সব সময়ই তুমি আগেভাগে টের পেয়ে যাও!’ সে চিৎকার করে বলে ওঠে। ‘ঠিক আছে, তোমার কোনো বিপদ হলে আমিও বুঝতে পারি! আর আমি তা এখন অনুভবও করছি। তুমি বিপদে পড়েছো। কাছে আসতে সক্ষম হলে, কখনোই তুমি এতটা সময় আমার কাছ থেকে দূরে থাকতে পারতে না। শ্যাডো, তুমি কোথায়—কোথায় তুমি?’

কিন্তু পাথর বাঁধানো খামার উঠোনের কোথাও তার পায়ের মৃদু শব্দ পাওয়া যায় না। পাহাড়ের ওপর থেকেও কোনো স্বাগত জবাব আসে না। খামার উঠানের কুকুর, শ্যাডোর মা, বৃদ্ধা জেসিকে ছাড়া কোথাও কোনো কুকুরও দেখতে পাওয়া যায় না। সে দৌড়ে এসে জনির নগ্ন পা দুটা চাটতে শুরু করে।

‘জেসি, তুমি কি জানো না, শ্যাডো কোথায় গেছে?’ কাতর স্বরে জনি জিজ্ঞেস করে। জিপসিরা মাঠের যেখানে ছাউনি ফেলেছিল সেদিকে রওনা হয় সে। সেখানে পৌঁছাতে মিনিট দশেকের মতো সময় লাগে। কোনো তাঁবু দেখতে পাওয়া যায় না। সবগুলো কারাভাঁ চলে গেছে। কেবল চাকার দাগ দেখে বোঝা যায় ওরা কোথায় থেমেছিল।

জনি হাঁটা থামায় এবং ছাউনির চারপাশটা ভালো করে খুঁটিয়ে দেখে। জিপসিরা যেখানে আগুন জ্বেলেছিল সেই জায়গাটি দেখতে পায়, ওদের ফেলে যাওয়া কয়েক টুকরো কাগজ তখনও আশপাশের বাতাসে উড়ছে। একটা নালার মাঝে দু’তিনটা খোলা টিন ভাসছে। কিন্তু শ্যাডোর কোনো চিহ্ন নেই।

জনি জনমানবহীন ছাউনির চারপাশটা ঘুরে দেখে—এবং তারপর হঠাৎই থামে এবং এক জায়গায় স্থির তাকিয়ে থাকে।

তার পায়ের কাছে বড় একটা পাথর পড়ে আছে—এবং তার ওপর কিছু লোম লেপ্টে লেগে আছে! জনি পাথরটা তুলে নেয়। কাছ থেকে ছোট ছোট বাদামী লোমগুলো দেখে।

‘এ তো শ্যাডোর লোম!’ সে ভাবে, তার হৃদপিণ্ডটা যেন জুতোর তলায় পিষ্ট হচ্ছে। শ্যাডোর বাদামী আর হলদে লোম আমি যেকোন জায়গায় দেখলেই চিনতে পারব! ওহ্, বজ্জাত কোথাকার! বাবা শ্যাডোকে ওদের ওপর নজর রাখতে রেখে গেছে—আর ওরা ওকে পাথর মেরেছে। ওরা অবশ্যই ওকে অজ্ঞান করে ফেলেছে। ’

অসহায় জনি এমনভাবে পাথরটির দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে যেন নিজের চোখকেই সে বিশ্বাস করতে পারছিল না। সে পুরোপুরি নিশ্চিত এতক্ষণ মনে মনে যা ভেবেছে তার সবই সত্য। হঠাৎ মনে হতে থাকে পা দুটা যেন তার ভার আর বইতে পারবে না, এবং ছেলেটি পড়ে থাকা একটা গাছের গুঁড়ির ওপর ধুপ করে বসে পড়ে। কাছেই একটা মাংসের দলা পড়ে আছে।

জনি সেটার দিকে তাকায়। কেন জিপসিদের অর্ধভুক্ত কুকুরগুলো মাংসটা খেল না? সে ওটা তুলে নেয় এবং গন্ধ শুঁকে। এর ভেতর একটা কৌতূহল জাগানো ঘ্রাণ রয়েছে।

‘আমি বাজি ধরে বলতে পারি এটা বিষাক্ত। ’ জনি আপন মনে বলে ওঠে। ‘জঘন্য, খুব জঘন্য। উপরওয়ালাকে অসংখ্য ধন্যবাদ এটা স্পর্শ না করবার মতো বুদ্ধি শ্যাডোর রয়েছে। আমার ধারণা এটা যাতে খেতে না পারে সেজন্য ওরা নিজেদের কুকুরগুলোকে আগে বেঁধে নিয়েছিল—এবং চলে যাবার সময় এই আশায় ফেলে রেখে গেছে যাতে আমাদের কোনো একটা কুকুর এটা গিলে খায় এবং মারা পড়ে! ওহ্! শ্যাডো—তুমি কোথায় গেলে? তোমাকে কি জিপসিরা নিয়ে গেছে?’

জনি এতটাই কাতর হয়ে পড়ে যে ওর নিজের তখন কী করা উচিত তাও বুঝে উঠতে পারছিল না। ‘আজকে দুপুরে আমি আর স্কুলে যাচ্ছি না,’ সে ভাবে। ‘জিপসিরা কোথায় গেছে সেটা আমাকে খুঁজে বের করতে হবে। আমি ওদের পিছু নেব! শ্যাডোকে যদি ওরা নিয়েই গিয়ে থাকে, তাহলে কোনো না কোনোভাবে আমি তাকে খুঁজে বের করবই, এবং আমি ওকে উদ্ধার করব, তোমাকে আমার পেতেই হবে শ্যাডো!’

পর্ব ২৫ পড়তে ক্লিক করো

বাংলাদেশ সময়: ১৭৪০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৭, ২০১৬

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।