ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইচ্ছেঘুড়ি

মা পাখিটা | হাসান মুন্না

গল্প/ইচ্ছেঘুড়ি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩২৫ ঘণ্টা, মে ২৭, ২০১৬
মা পাখিটা | হাসান মুন্না

আমড়া গাছে অনেকগুলো পাখি বসে আছে। প্রতিটি ডালে অনেক অনেক আমড়া।

এতো আমড়া ধরেছে যে বেশকিছু ডাল ঝুলে পড়েছে ভারে। পাখিগুলো আমড়া খাচ্ছে মনের আনন্দে। আর গল্প করছে কিচিরমিচির করে।

উত্তর দিকের মাঝের ডালটাতে বসে আছে মা পাখি। তার পাশেই বাচ্চাটা। কয়েক দিন আগে তার জন্ম। মা পাখি বাচ্চা পাখিটাকে অনেক আদর করে। এখনো বাচ্চা পাখিটা উড়তে পারে না ঠিকমতো। এজন্য মা পাখিটা বাচ্চা পাখিটাকে সবসময় কাছে কাছে রাখে।

আগে খাবারের জন্য মা পাখিও যেতো। এখন যায় না। বাবা পাখি খাবার নিয়ে আসে। সেটাই ভাগ করে খায়। তবে বাচ্চা পাখিটা অনেক দুষ্টু। শুধু উড়তে চায়। পড়ে যায় তারপরও উড়তে চায়।

মা পাখি মানা করে, এভাবে উড়তে যেয়ো না। পড়ে গেলে ব্যথা পাবে।
বাচ্চা পাখি বলে, মা আমি নিজে উড়তে না চাইলে কীভাবে উড়তে পারবো। সবাই কি সুন্দর উড়তে পারে। আমি কেন উড়তে পারবো না?
মা পাখি হাসে। তুমি উড়তে পারবা তো। আরেকটু বড় হও। তুমি উড়ে কি করবা?
-আমি অনেক দূরে যাবো। অনেক দূরে।
-দূরে গেলেতো হারিয়ে যাবা।
- না, হারাবো না। রাস্তা দেখে দেখে যাবো। আবার সে রাস্তা দেখে ফিরে আসবো। দেখো না বাবা কত দূরে চলে যায়। আবার আমাদের কাছে ফিরে আসে।

মা পাখির ভাল লাগে বাচ্চা পাখির কথা শোনে। কি মিস্টি গলায় কথা বলে।
- ঠিক আছে তুমি অনেক দূর যেয়ো। তবে সেজন্য আগে তোমাকে বড় হতে হবে।

বাচ্চা পাখি বলে, মা আমি আমড়া খাবো। সবাই খাচ্ছে। আমিও খাবো।
-ওরা তো বড়। তাই খাচ্ছে। তুমি এখনো ছোট। তোমার ঠোঁট অনেক নরম। তুমি খেতে পারবে না।
- খেলে কি হবে?
- তোমার ঠোঁট ভেঙে যাবে। ব্যথা পাবে।

বাচ্চা পাখি এটা বিশ্বাস করে না। বলে, না ঠোঁট ভাঙবে না। আমি আমড়া খাবো।

এবার মা পাখিটা বলে, আমড়া অনেক টক। তোমার খারাপ লাগবে।

অন্য পাখিগুলোর দিকে দেখিয়ে বাচ্চা পাখিটা বলে, না খারাপ লাগবে। ওই দেখো সব পাখি কি আনন্দে খাচ্ছে। আমিও খাবো।
নিরুপায় হয়ে মা পাখিটা আমড়ার একটা মুখে নেয়। তারপর সেটা নরম করে বাচ্চা পাখির মুখে দেয়।

বাচ্চা পাখি সেটা খেতেই চিৎকার দিয়ে ওঠে। এতো টক কেন? মুখ চুলকাচ্ছে।
মা পাখি বলেন, আমি তো আগেই বলেছিলাম তোমাকে। তুমি তো আমার কথা শুনলে না।

বাচ্চা পাখি কান্না জুড়ে দেয়।
মা পাখি বলে, দেখছো নিষেধ করছি না। তা শুনো নাই বিধায় এই অবস্থা। তোমার বাবা আসুক তাকে মিষ্টি আনতে বলবো।

বাচ্চা পাখিটা জিজ্ঞেস করে, মিষ্টি খেলে কি হয়?
এই যে তোমার টক লাগছে তা মিষ্টি খেলে চলে যাবে। মুখ আর চুলকাবে না।

এবার পাখিটা কান্না করতে করতে বলে, আমি মিষ্টি খাবো। তাড়াতাড়ি মিষ্টি দাও।

-একটু অপেক্ষা করো। তোমার বাবা আসলেই আনতে বলবো।
না অপেক্ষা সয় না বাচ্চা পাখিটার। ওর অনেক টক লাগছে। মুখও চুলকাচ্ছে। চিৎকার দিয়ে বলে, না এখন লাগবে। আমাকে এখন মিষ্টি এনে দাও।

মা পাখিটা বোঝানোর চেষ্টা করে, শোনো এখানে কাছে যেসব মিষ্টির দোকান আছে সেখান থেকে মিষ্টি আনা কঠিন। তোমার বাবা যেখান থেকে মিষ্টি আনা সহজ সেখান থেকে এনে দেবে।

বাচ্চা পাখিটা বুঝে না। মিষ্টি লাগবেই। বাচ্চা পাখিটার কান্না বাড়তেই থাকে।

শেষে মা পাখিটা আর না পেরে মিষ্টি আনার জন্য উড়াল দেয়। বেশি দূর যাওয়া যাবে না। কাছের মিষ্টির দোকানটা দেখে। মিষ্টিগুলো কাচের বক্সে রাখা। অনেক রকমের মিষ্টি রাখা। একটুখানি দরজা খোলা। দোকানদার পত্রিকা পড়ছে। তাই দেখে মা পাখিটা আস্তে করে বক্সে ঢুকে পড়ে মিষ্টির জন্য।

দোকান কর্মচারীটা সেটা দেখে ফেলে। সে সঙ্গে সঙ্গে ওই কাচের বক্সের দরজা বন্ধ করে দেয়। পাখিটি ধরতে বেশি কষ্ট করতে হয় না।
ম্যানেজার খুশি পাখিটা পেয়ে। খাঁচায় রাখা যাবে।
এদিকে আমড়া গাছে বাচ্চা পাখিটা অপেক্ষা করে আছে মা কখন মিষ্টি নিয়ে আসবে। তার অপেক্ষা যে কখনো শেষ হবে না সে কি জানে?

বাংলাদেশ সময়: ১৩২৫ ঘণ্টা, মে ২৭, ২০১৬
এএ

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।