ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইচ্ছেঘুড়ি

রহস্য গল্প

উরালি | বিএম বরকতউল্লাহ

গল্প/ইচ্ছেঘুড়ি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০০৫ ঘণ্টা, আগস্ট ৫, ২০১৬
উরালি | বিএম বরকতউল্লাহ

উরালি নামের এক লোক কুঠার নিয়ে বনের ভেতরে গিয়েছিল চুরি করে গাছ কাটতে। বনের ভেতরে গিয়ে পছন্দমতো একটি গাছে কোপ দিতেই গাছটা কেঁপে উঠলো।

আরেকটা কোপ দিতেই গাছ থেকে কি একটা চপ করে পড়লো উরালির মাথায়। সঙ্গে সঙ্গে মাথায় হাত দিয়ে দেখে এক দলা পিচ্ছিল ও গরম রক্ত।

ভয়ে লাফিয়ে উঠলো সে। উপরের দিকে তাকিয়ে দেখে গাছের সবুজ পাতাগুলো লাল হয়ে গেছে এবং অসংখ্য চোখে তার দিকে তাকিয়ে রাগে কটমট করছে। উরালির মাথা থেকে রক্তের দলা চলচল করে রশির মতো লম্বা হয়ে তার গোটা শরীর পেঁচিয়ে ধরেছে।

বেচারা উরালি বিপদ আঁচ করতে পেরে হাতের কুঠার ও গায়ের কাপড় ছুড়ে ফেলে রুদ্ধশ্বাসে ছুটে এলো বাড়িতে। কোনোমতে উঠোনে এসে ধনুকবাঁকা হয়ে দু‘হাঁটু ধরে বেদম হাঁপাতে লাগলো। তার বেহাল অবস্থা দেখে আশপাশের লোকজন ছুটে এসে জানতে চাইলো, কী হয়েছে তার? উরালি কিছু বলতে গিয়েও পরিষ্কার বলতে পারছে না। হাত ইশারায় গাঁইগুঁই করে কী সব বলতে গিয়ে সে পাক খেয়ে পড়ে গেলো মাটিতে।

তার শরীরে রক্তের শক্ত বান এঁটে গেছে। উরালি ব্যথায় ছটফট করতে লাগলো। লোকজন টানাটানি করেও রক্তের বান খুলতে পারলো না। রক্তের রশি সাপের মতো উরালিকে বেঁধে ফেলছে। তার শ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে, নাক ও মুখ দিয়ে ছোপ ছোপ কালো রক্ত বেরিয়ে আসছে। ভয় পেয়ে গেলো সবাই। কয়েকজন সাহস করে ঘর থেকে দা, ছুরি এনে রক্তের বান ক্যাচ ক্যাচ করে কেটে রক্তের রশিটা ছুড়ে ফেলে দিলো পাশে। সঙ্গে সঙ্গে রশিটা বিষধর সাপ হয়ে মোচড় দিয়ে উঠে ফণা তুলে অস্থিরভাবে ফোঁসফাঁস করতে লাগলো।

তারপর সাপটি ছলছল করে বনের দিকে ছুটে চললো। লোকজন লাঠিসোটা নিয়ে বেধড়ক পিটুনি শুরু করে দিলো। সাপটির শরীর রাবারের মতো। পিটুনিতে কিছুই হলো না। বরং সাপটি ডানে বামে সমানে ছোবল মারতে লাগলো। লোকজন ভয়ে একটু পেছালেও আবার বেদম পিটুনি শুরু করলো। বেধড়ক পিটুনির মাঝে পর পর ফড়ফড় আওয়াজ করে সাপের পিঠ ফেড়ে দু‘টি কালো পাখা গজিয়ে উঠলো। তারপর একটা বিকট শব্দ করে পাখা ঝাপটিয়ে সাপটি চোখের পলকে কাক হয়ে গেলো। সবার মাঝখান থেকে কা-কা করে উড়ে গেলো কাকটি। মানুষগুলো অবাকমুখে হা করে তাকিয়ে রইলো উড়ে যাওয়া আজব কাকের দিকে। তারপর কাকটি অদৃশ্য হয়ে গেলো আকাশে।

উরালির নানা সমস্য দেখা দিলো। তার পেট ব্যথা, বুক ব্যথা, কানে শোঁ শোঁ, ভোঁ ভোঁ, পন পন শব্দ হতে লাগলো। সে কোনোমতে একবার উঠে দাঁড়ালো এবং এক মিনিট পরেই আবার ওল্টে প‍াল্টে মাটিতে পড়ে অজ্ঞান হয়ে গেলো। পরে তার জ্ঞান ফিরলেও শক্তি ফিরে আসেনি আগের মতো। উরালি সারাদিন আবোল-তাবোল বকে আর কিছু দেখলেই ভয়ে কুঁকড়িয়ে যায়। এভাবে প্রকৃতির নানান আজব রহস্যের সঙ্গে লড়াই করে বেঁচে আছে ডুরাবন গাঁয়ের উরালিরা।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৫ ঘণ্টা, আগস্ট ০৫, ২০১৬
এএ

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।