ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইচ্ছেঘুড়ি

রাজপুত্র সাঁতার জানে না (পর্ব-১) | মহিউদ্দীন আহ্‌মেদ

গল্প/ইচ্ছেঘুড়ি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪৫৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ২০, ২০১৬
রাজপুত্র সাঁতার জানে না (পর্ব-১) | মহিউদ্দীন আহ্‌মেদ

রাজপুত্রের অনেক গুণ। কিন্তু সে সাঁতার জানে না। রাজার একদিন মনে হলোÑ সত্যিকারের বীর পুরুষ হতে হলে সাঁতার শেখারও প্রয়োজন আছে। তাই বার্ষিক পরীক্ষার পর রাজপুত্রকে নিয়ে রাজা স্বয়ং হাজির হলেন নদীর পাড়ে!

রাজপুত্রের অনেক গুণ। কিন্তু সে সাঁতার জানে না।

রাজার একদিন মনে হলোÑ সত্যিকারের বীর পুরুষ হতে হলে সাঁতার শেখারও প্রয়োজন আছে। তাই বার্ষিক পরীক্ষার পর রাজপুত্রকে নিয়ে রাজা স্বয়ং হাজির হলেন নদীর পাড়ে!

নদীর নাম ধলেশ্বরী। কথিত আছে এই ধলেশ্বরীর কূলেই রাজার পূর্বপুরুষ বসবাস করতেন। বাপ-দাদার ভিটেমাটি একবার দেখার ইচ্ছা রাজার বহুদিনের। তাই রাজপুত্রের সাঁতারের উছিলায় সৈন্য-সামন্ত পাইক, পেয়াদা ও গ্রাম দেখতে আগ্রহী কিছু বন্ধু-বান্ধবসহ তিনি নিজ গ্রামে উপস্থিত হলেন এক সকালে।

ঢোলের কাঠির আওয়াজে গ্রামের মানুষ নড়েচড়ে বসলো। আসল ঘটনা জানতে পেরে অবহেলিত বৃদ্ধ-বৃদ্ধারা ভাবলো, এইবার রাজাকে পাওয়া গেছেÑ সরাসরি রাজার কাছেই বিচার চাওয়া যাবে। এদিকে ঘোমটার আড়ালে থাকা বউ-ঝি’রা বাইরে বের হওয়ার সুযোগ পেয়ে ভীষণ খুশিতে কিচিরমিচির গল্প-গুজব করতে লাগলো। রাখালেরা বছরে দুই ঈদের মতো আরো একটা বিশেষ দিন পেয়ে ন্যাপথলিন মোড়ানো শার্টখানি গায়ে চাপিয়ে খোশমেজাজে ঘর ছাড়লো!

পাড়া-প্রতিবেশীরা বলতে শুরু করলোÑ কাজ যতই থাক এমন দৃশ্য মিস করা যাবে না! কিন্তু দুষ্ট বালকেরা ভাবলো রাজার ছেলেকে আজ তারা সত্যিকারের সাঁতার শিখিয়ে দেবে!

নদীর পাড়ে তৈরি করা হলো সুদৃশ্য তাঁবু। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে সেই তাঁবুর চারপাশ লোকে লোকারণ্য হয়ে গেলো। খবর পেয়ে চানাচুর, বাদাম, নিমকি, খই, হাওয়াই মিঠাই, বড়াভাজা আর বেলুনওয়ালারা তাদের পসরা সাজিয়ে বসলো। একদম তাঁবু ঘেঁষে দোকান বসাতে চায় এমন কয়েকজনের মধ্যে হালকা বাতচিৎও হলো। তাঁবুর প্রধান প্রহরী স্বয়ং এসে দোকানদারদের মধ্যে সৃষ্ট রেষারেষির সমাধান করে দিলেন। চোখের পলকে নদীর পাড় পরিণত হয়ে গেলো ছোট খাটো একখানি হাটে। না, হাট নয় মেলা!

খোঁজ পড়লো এই গ্রামে কে ভালো সাঁতার জানে!
গ্রামের মানুষ। নদীর সাথে সখ্য। সাঁতার তো কম-বেশি সবাই জানে।
কিন্তু প্রধান প্রহরী জানালেন, শুধু সাঁতার জানলেই হবে না। রাজপুত্রকে সাঁতার শেখানোর মতো সাঁতার জানতে হবে। তিনি আরও জানালেন, একটু পরেই প্রতিযোগিতার মাধ্যমে নির্বাচন করা হবে কে ভালো সাঁতারু।

প্রতিযোগিতার কথা শুনে অনেকে পিছিয়ে গেলেও শেষমেষ প্রতিযোগীর সংখ্যা দাঁড়ালোÑউনিশ! উনিশজনের মধ্য থেকে বাছাই পরীক্ষায় একই সঙ্গে নির্বাচিত হলো মাণিকজোড় দুই ভাই যথাক্রমেÑগিল্টু ও বিল্টু। রাজা শুনে ভাবলেন, এই দুজনই তাঁর ছেলেকে সাঁতার শেখাতে পারে। কিন্তু গ্রাম দেখতে আসা রাজার বন্ধুবর জনৈক নীতিশ্রাস্ত্রবিদ রাজি নন তাতে। কারণ তাঁর ধারণাÑদুজনের কাছে সাঁতার শিখতে গেলে রাজপুত্র কিছুই শিখতে পারবে না। চাই একজন!

কে হবে সেই একজন? প্রতিযোগিতায় তো দুজনই প্রথম হয়েছে। কাকে বাদ দিয়ে কাকে রাখা হবে?

অবশেষে সিদ্ধান্তের ভার পড়লো রাজপুত্রের ওপর। রাজপুত্র যাকে পছন্দ করবে সে-ই হবে তার প্রশিক্ষক।

সুন্দর সেজে-গুজে হাজির হলো দুই ভাই। রাজপুত্র খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে লাগলো তাদের। দুজনের চেহারা প্রায় একইরকম। উচ্চতায়ও কমবেশি নয়। লালচে মাথার চুল। রোদে পোড়া গায়ের ত্বক। চোখের কোণে মিটিমিটি দুষ্টু হাসি। রাজপুত্র তাদের সঙ্গে অনেকক্ষণ আলাপ-আলোচনা করে সিদ্ধান্ত জানালোÑ দুই ভাইকেই তার বিশেষ পছন্দ হয়েছে! অর্থাৎ প্রশিক্ষক হবে দুজনই।

রাজপুত্রের ন্যায়বিচারে রাজা যারপরনাই খুশি হলেন। একেই বলে যোগ্য উত্তরসূরি। শুধু রাজা কেন, গ্রামের সব মানুষ বলাবলি শুরু করলোÑএমন রাজপুত্র ত্রিভুবনে নাই!

পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া হলোÑএকলক্ষ স্বর্ণ মুদ্রা। শুধু তাই নয়, গিল্টু বিল্টু হবে রাজপুত্রের বন্ধু। তারা চাইলে রাজপুত্রের সঙ্গে রাজদরবারে গিয়ে থাকতে পারবে; একই পাঠশালায় পড়াশোনাও করতে পারবে।

চলবে...

বাংলাদেশ সময়: ১০৪৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ২০, ২০১৬
এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।