ঢাকা, বুধবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইচ্ছেঘুড়ি

অগা স্যার | মহিউদ্দীন আহ্‌মেদ

গল্প/ইচ্ছেঘুড়ি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০২৩ ঘণ্টা, মার্চ ৩১, ২০১৭
অগা স্যার | মহিউদ্দীন আহ্‌মেদ অগা স্যার

অগা স্যার মোটেও অগা নন। তবুও আমরা তার আড়ালে তাকে অগা স্যার বলি। এ কথা তিনি জানেন। জেনেও কখনও আমাদের বকা দেন না। কারণ তিনি যে অগা নন, এ কথা তিনি নিজেও বোঝেন।
ধরো, তুমি অগা স্যারের কাছে জানতে চাইলে, ‘স্যার, অগা মানে কী?’

অগা স্যার বলে দিবেন, ‘অগা মানে বোকা। ’
তুমি বললে, ‘স্যার, বোকা হওয়া ভালো নাকি চালাক হওয়া ভালো?’
‘চালাক হওয়া ভালো।


‘স্যার, আপনি নিজেকে কি মনে করেন? বোকা? নাকি চালাক?’
‘আমি নিজেকে চালাক মনে করি। কিন্তু আমি আসলে বোকা। ’
এই কথার পরে তুমি যদি বলো, ‘স্যার! সত্যি করে বলেন তো আপনি আসলেই বোকা না চালাক?’  
অগা স্যার তখন মজা করে হাসতে থাকবেন। তার এই হাসির কারণ আমরা কেউ জানি না। তবে আমাদের ধারণা অগা নন এমন লোককে অগা বলা হলে তারা এভাবেই হেসে থাকেন।  

যাইহোক, স্যার কীভাবে অগা হলেন, সেই গল্পটা শোনো।    
তিনি একবার গবেষণা বিষয়ক সেমিনারে অংশ নিতে নাইজেরিয়া গিয়েছিলেন। তো ওখানে গিয়ে তিনি পদে পদে হোঁচট খাওয়ার মতো অবাক হতে লাগলেন। কারণ নাইজেরিয়ানরা তাকে কথায় কথায় ‘অগা’ বলতে লাগলো।

তিনি ভেবে পাচ্ছিলেন না নাইজেরিয়ার মানুষ কীভাবে জানলো যে, তিনি আসলে অগা?
তার মনে হতে লাগলো, নিশ্চয় তার মান-সম্মান নষ্ট করার জন্য পেছনে শত্রু লেগেছে। শুধু তাই নয়, সেই শত্রুটি চরম শত্রুতা করার জন্য সুদূর নাইজেরিয়া পর্যন্ত পৌঁছে গেছে!    

এ কথা ভেবে প্রচণ্ড রাগে তার কান গরম হয়ে গেলো। তিনি রেগেমেগে টং হয়ে গেলেন। তার মেজাজ সপ্ত আসমানে উঠে গেলো। তিনি বাধ্য হয়ে ভ্রমণ সংক্ষিপ্ত করার সিদ্ধান্ত নিলেন। ঠিক করলেন, সাতদিনের মধ্যে দেশে ফিরবেন। বাকি ক’টা দিন হোটেল কক্ষের বাইরেই বেরুবেন না।

একদিন যেতে না যেতে তার বন্ধু নাইজেরিয়া প্রবাসী ড. সালামতুল্লা ছুটে এলেন হোটেল কক্ষে। এসেই অভিযোগ করলেন, স্যার কেন তার বাসায় যেতে চেয়েও যাননি?

অগা স্যার সেসময় আমতা আমতা করে বললেন, ‘না ইয়ে মানে যাবো যাবো করেও যাওয়া হয়ে ওঠেনি। ’

‘ওকে। এখন চল। গিয়ে খাবি!’ ড. সালামতুল্লা বললেন, ‘তোর ভাবি তোর জন্য কুইচ্চা মাছের ভর্তা করে রেখেছে। ’
অগা স্যার বললেন, ‘আরে দাঁড়া! চা দিতে বলেছি। চা-টা খেয়ে তারপরে যাই। ’

ওয়েটার চা নিয়ে এলো। এসেই ‘অগা স্যার অগা স্যার’ শুরু করলো।
কী বিড়ম্বনা! অগা স্যার লজ্জা ও অপমানে বন্ধুর দিকে তাকাতে পারছিলেন না। একেবারে অসহায় হয়ে পড়লেন। অবশেষে ঘটনার তীব্রতায় বন্ধুকে জড়িয়ে ধরে তার কাঁধে মাথা রেখে কুঁই কুঁই করে কাঁদতে লাগলেন।

বলতে লাগলেন, ‘বন্ধু তুই আমাকে বাঁচা! আমার কোনো বড় শত্রু আমাকে অপমান করার জন্য বিদেশ পর্যন্ত পৌঁছে গেছে। সবাইকে বলে বেড়াচ্ছে আমি একজন অগা। এসেছিলাম গবেষণা বিষয়ক অতি মূল্যবান প্রবন্ধ পড়তে। তা বুঝি আর হলো না! কী করবো, তুই বলে দে!’

ড. সালামতুল্লা এক মুহূর্তে আসল ঘটনা বুঝতে পারলেন। সহজ-সরল, নিরহংকার বন্ধুকে সান্ত্বনা দিয়ে বললেন, ‘আরে বোকা, নাইরেজিয়ায় অগা মানে ইউর এক্সিলেন্সি! বুঝতে পেরেছিস? তাই শ্রদ্ধা জানানোর জন্য তোকে সবাই অগা বলছে! এটা মোটেই সেই অগা নয়। তুই হলি গিয়ে এই সেমিনারের সবচেয়ে সম্মানিত বক্তা। তোকে তাই সবাই অগা বলছে। বুঝেছিস? আমাদের দেশের পণ্ডিত আর নাইজেরিয়ার অগা ব্যাপারটা একই আর কী! এবার থেকে আর মন খারাপ করিস না। ’

অগা স্যার সেই থেকে সত্যি সত্যি অগা হয়েছিলেন। আমরা অবশ্য ঘটনাটি অনেক পরে জানতে পেরেছিলাম।  

বাংলাদেশ সময়: ১৬৩২ ঘণ্টা, মার্চ ৩১, ২০১৭
এএ

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।