ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইচ্ছেঘুড়ি

ফুল মিয়ার স্কুলে যাওয়া (পর্ব-২) | আনিকা তাবাসসুম

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪০৯ ঘণ্টা, জুন ২০, ২০১৭
ফুল মিয়ার স্কুলে যাওয়া (পর্ব-২) | আনিকা তাবাসসুম ফুল মিয়ার স্কুলে যাওয়া

দৌড়ে গিয়ে ফুল মিয়ার ছোট্ট ছাগলছানাটাকে আদর করলো কুলসুম। এই দেখ ফুল, আমাগের স্কুলখানা কি সুন্দর। একটা মীনা কার্টুনের বই দিচ্ছে? ওমা তাইতো, দেখি দেখি। কুলসুমের হাত থেকে বইটা নিলো ও। সুন্দর পরিষ্কার জামা পরা মীনার ছবি দেখলো ফুল মিয়া। আফা কি সুন্দর এই বইটা! আচ্ছা আফা, আমি স্কুলে গেলেও কি এরকম বই পামু? শুধু তুই কেন, সবাই পাইবো।

বললো কুলসুম। আফা তাইলে তুমি বাজানরে কও, আমিও তোমার সাথে স্কুলে যামু।

হ কমুনে এখন ল বাড়ির দিকে যাই। আমার খুব ক্ষিধা পাইছে।

ছোট্ট হাতে ছাগলের খুঁটিটা তুলতে চেষ্টা করেও তুলতে পারছিল না ফুল মিয়া। দাঁড়া আমিও তোর সাথে হাত লাগাই। বলেই বইগুলোকে ঘাসের উপরে রেখে খুঁটিটাতে হাত লাগালো কুলসুম, হেইও বলে দু’জনে মিলে টান দিতেই খুঁটিটা সমেত দু’জনেই ঘাসের উপর চিৎ হয়ে পড়ে গেলো।

হাসতে হাসতে দু’জনেই কুটিকুটি। ল হইছে এইবার চল বাড়িতে যাই। জামার ধুলো ঝাড়তে ঝাড়তে বললো কুলসুম। মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানিয়ে দু’জনেই বাড়ির পথ ধরলো। কিছুটা এগোতেই দু’এক ফোঁটা করে বৃষ্টি পড়া শুরু করলো। এবার যতদূর সম্ভব বইগুলোক বুকের সাথে চেপে ধরলো কুলসুম। কারণ বইগুলোকে কোনো মতেই ভিজতে দেয়া চলবে না। দৌড়া ফুল। জোরেশোরে বৃষ্টি নামার আগেই ওরা বাড়িতে পৌঁছে গেলো।

কুলসুম ওর বাড়ির দিকে চলে যেতেই ছাগলগুলোকে বারান্দায় কোণায় বাঁশের খুটির সাথে বাঁধলো ফুল মিয়া। মা, মা জান কি হইছে? কি হইছে রে বাপ? জিজ্ঞেস করলো মা। মা আইজ না কুলসুম আফাগো স্কুলে কি সুন্দর একখান মীনা কার্টুনের বই দিছে। বই এর ভিতরে কি সুন্দর সুন্দর ছেলেমেয়েগো ছবি’!

 ‘তাই নাকি বাপ, বলল মা। ‘হ মা। আফায় কইছে আমি স্কুলে গেলেও এই রকম বই পামু। মা বাজানরে কইয়া আমারে স্কুলে ভর্তি করাইয়া দেওনা। এই চরের হক্কলেই ত স্কুলে যায়। আর আমিও তো এখন বড় হইয়া গেছি।

কুলসুম আফার লগে আমিও স্কুলে যাইতে পারমু। মা আমারে দাও না স্কুলে ভর্তি করাইয়া’। বেশ একটু কাঁদ কাঁদ গলায় বললো ফুল মিয়া। ‘স্কুলে যাইতে তো মেলা খরচ রে বাজান। আমরা গরিব মানুষ এতো টেকা পামু কই। ’ না মা, তুমি জান না। এইগুলা সরকারি স্কুল। এই স্কুলে যাইতে কোনো টেকা পয়সা খরচ হয় না। কুলসুম আফা আমারে কইছে। ’ একটানে কথাগুলো বলে গেলে ফুল মিয়া। ‘আইচ্ছা, তোর বাজান বাড়িতে আসুক, আমি হেরে বুঝাইয়া কমু নে। যা হাত পা ধুইয়া আয়। আমি তোর খাওন বাড়তাছি। ’ বলল মা।

চলবে....
**

ফুল মিয়ার স্কুলে যাওয়া | আনিকা তাবাসসুম


বাংলাদেশ সময়: ২১১৫ ঘণ্টা, জুন ১৪, ২০১৭
এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।