ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইচ্ছেঘুড়ি

বিল্টু (শেষ পর্ব) | গৌতম দাশ

গল্প/ইচ্ছেঘুড়ি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১০৭ ঘণ্টা, জুলাই ১১, ২০১৭
বিল্টু (শেষ পর্ব) | গৌতম দাশ     বিল্টু

[পূর্বপ্রকাশের পর]
এখানে কি গরিবদের জন্য কোনো সেবা নেই? সোবান চাচা বললেন।
-দেখুন, আমার কিছুই করার নেই। এখানে টাকা ছাড়া কিছুই হয় না।

বিল্টু অনেকের হাতে পায়ে ধরলো কিন্তু লাভ হলো না। অবশেষে বিল্টু মাকে নিয়ে সরকারি হাসপাতালে গেলো।

অনেক দূর, তবুও গেলো। সোবান চাচা তার সঙ্গে আছেন এটাই তার ভরসা। আর হৃদয়ে আছে মাকে ভালো করার প্রবল ইচ্ছা। সেখানেও একই বিপত্তি দেখা গেলো, টাকা। অবশ্য সরকারি বলে টাকা একটু কম, মাত্র দশ হাজার টাকা।

কিন্তু বিল্টুর কাছে একটি টাকাও নেই। যা ছিল সব শেষ। সোবান চাচারও সব খালি হয়ে গেছে। এখন বিল্টুর মাথা শুধু ভনভন করছে। একদিকে মায়ের চিন্তা অন্যদিকে টাকার। হঠাৎ তার মনে পড়লো একদিন শমসেরের চাচা তাকে বলেছিল, বিল্টু, তোর গতর দেখছি ভালো। আমাদের লাইনে চলে আয়। অনেক টাকা পাবি। আর কাগজ কুড়োতে হবে না।

বিল্টু সোবান চাচাকে বললো, চাচা, আমি আসছি।
বিল্টু শমসেরের বাড়িতে গেলো। সে শমসেরকে ভয় পেত কিন্তু আজ কেন যেন ভয়-ডর নেই তার। এক চামচা বিল্টুকে শমসেরের কাছে নিয়ে গেলো। বিল্টু মায়ের অবস্থার কথা বললো শমসেরকে। হাতে পায়ে ধরলো তার। শমসের অবশ্য টাকা দিতে রাজি হলো তবে এক শর্তে। শমসেরের দলে কাজ করতে হবে তাকে।

বিল্টু এক কথায় রাজি হলো। টাকা নিয়ে সে হাসপাতালে গেলো। অপারেশন শুরু হলো। বিল্টু বেঞ্চে বসে আছে। পকেট থেকে একটা মোবাইল ফোন বের করলো বিল্টু। শমসের তাকে এটা দিয়ে বলেছে, ‘কল দিলেই চলে আসবি’। হঠাৎ ফোনটা শব্দ করে বেজে উঠলো। রিসিভ করতেই একটা কর্কশ আওয়াজ ভেসে এলো।
 
-বিল্টু, একটা কাজ আছে। জলদি আয়।
-কিন্তু মায়ের অপারেশন চলছে তো।
-কোনো কথা না। চলে আয়।
-ঠিক আছে। আসছি।

বিল্টু শমসেরের কাছে গেলো। শমসের বললো, ‘মোবাইলটা দে আর ওই গাড়িতে ওঠ। একটা জায়গায় যেতে হবে। ’ বিল্টু একটু ভয় পেলো। বললো, ‘কোথায় যাবো?’
শমসেরের দু’চোখ লাল হয়ে গেলো। বিল্টু আর কিছু বললোনা। শুধু ভয়ে ভয়েওই কালো গাড়িটার দিকে তাকালো। তার মনে হল যেন ওই কালো গাড়িটা তাকে গিলে খাওয়া জন্য নীরবে অপেক্ষা করছে। গাড়িটা চকচক করছে যেন দাঁত বের করে হাসছে সর্বনাশের অপেক্ষায়। বিল্টু এমন গাড়ি অনেক দেখেছে কিন্তু কেন জানি আজ এতো ভয় পাচ্ছে সে। এটা কি তার মনের দুর্বলতা নাকি মনের নির্বাক বারণ। কিছু বুঝতে পারছে না বিল্টু।

বিল্টু নিঃশব্দে গাড়িতে ঢুকলো। গাড়ির দরজা লাগিয়ে দেবার পর তার মুখ আরও শুকিয়ে গেলো। গাড়িতে সে একা। বাইরে থেকে গাড়ির ভেতরের কিছুই দেখা যায় না কিন্তু ভেতর থেকে বাইরের সবকিছু দেখা যায়। শমসেরের নিঃশব্দ হাসি বিল্টুর মনে কেন জানি বারবার ভয় জাগিয়ে তুলছে। হয়তো অজানার দিকে পা বাড়াচ্ছে বলে।

অনেকক্ষণ পর গাড়ি চলতে লাগলো। একজন ড্রাইভার, ড্রাইভারের পাশের সিটে বসা একজন অপরিচিত গুণ্ডা-মার্কা লোক আর বিল্টু। লোকটার গায়ের রং বেজায় কালো আর চোখ দুটো যেন রক্তবর্ণ। গাড়িতে শুধু এই তিনজন। অনেকদ‍ূর যাওয়ার পর আরও চারটি বিল্টুর বয়সী ছেলে গাড়িতে উঠলো। তারপর আরো তিনটে। সবাই অপরিচিত। বিল্টু সবাইকে জিজ্ঞেস করলো ওরা কোথায় যাচ্ছে। বিল্টুর মতো ওরাও জানে না যে ওরা কোথায় যাচ্ছে।

সবাই জিজ্ঞেস করতে লাগলো ওই গুণ্ডা-মার্কা লোকটিকে যে তাদের কোথায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। কিন্তু কোনো উত্তর এলো না। সবাই চেঁচামেচি করতে লাগলো। অবশেষে লোকটি পিছন ফিরে একটা পিস্তল ওদের দিকে তাক করে চোখ বড়বড় করে বললো, চুপ কর শালারা। তোদের পাচার করা হচ্ছে। বিল্টুর শুধু ওর মমতাময়ী মায়ের মুখখানা মনে পড়ে চোখ ভিজে উঠলো।

**বিল্টু (পর্ব-১) | গৌতম দাশ
**
বিল্টু (পর্ব-২) | গৌতম দাশ
**বিল্টু (পর্ব-৩) | গৌতম দাশ

ইচ্ছেঘুড়ি

বাংলাদেশ সময়: ১৭০২ ঘণ্টা, জুলাই ১১, ২০১৭
এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।