ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইচ্ছেঘুড়ি

লজ্জা | বাবলু ভঞ্জ চৌধুরী

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৫২ ঘণ্টা, আগস্ট ২৭, ২০১৭
লজ্জা | বাবলু ভঞ্জ চৌধুরী লজ্জা

এক চাঁদনী রাতে সবাই ঘুমিয়ে পড়লে এক কাঠবিড়ালি আর এক বেজি কলাই ক্ষেতে গিয়ে কলাই খাওয়া শুরু করলো। কলাই খেয়ে পেট ভরে গেলে তারা সেখানে ঠান্ডা কলাই লতার ওপর বসে হাই তুলতে তুলতে গল্প করতে লাগলো।

তখন বেশ ফুর ফুরে হাওয়া বইছে। তাদের সামনে কলাই ক্ষেতের ওপর দিয়ে বেলেমাটির একটা রাস্তা চলে গেছে।

সেই রাস্তা দেখে কাঠবিড়ালি বলল, দেখ বন্ধু! জোছনা লেগে রাস্তাটা কেমন চকচক করছে! দিনেরবেলায় লোকজনের জন্য তো রাস্তায় যাওয়াই যায় না, এখন এই চাঁদমাখা রাতে মনে হচ্ছে ওই রাস্তাটা শুধু তোমার আর আমার। '

বেজি বলল, 'বাহ ! তাইতো! চল বন্ধু ওই রাস্তায় গিয়ে খেলা করি। '

তারা তাড়াতাড়ি আরো ক'টা কলাই তুলে নিয়ে সেই রাস্তার ওপর উঠলো। ফাঁকা চকচকে রাস্তায় উঠে তারা মনের সুখে দৌড়াদৌড়ি হুটোপুটি করতে লাগলো। বেজি বলল, 'বন্ধু তোমার ক্রিকেট ব্যাটটা নিয়ে এসো, আমরা এখানে ক্রিকেট খেলবো। '

রাস্তার পাশে কয়েকটা খেজুরগাছে ভাড় পাতা ছিল। একটা ভাড়ের ওপর বসেছিল এক হুতোম পেঁচা। সে টুপ করে বেজি আর কাঠবিড়ালির সামনে নেমে পড়লো। তারপর জিজ্ঞেস করলো, বলোতো আমি আজ কি দিয়ে ভাত খেয়েছি? বেজি বলল, মাছ। পেঁচা বলল, হয়নি। কাঠবিড়ালি বলল, ডিম ভাজা। পেঁচা বলল, হয়নি। বেজি বলল, দুধ। পেঁচা বলল, এবারও হয়নি। কাঠবিড়ালি বলল, রসগোল্লা। পেঁচা বলল, হয়নি। কোনো কিছুই যখন হচ্ছে না, তখন বেজি হুতোম পেঁচাটাকে জিজ্ঞেস করলো, তাহলে তুমি কি দিয়ে খেয়েছ? হুতোম পেঁচা একটু হেসে বলল, আমি আজ ভাত-ই খাইনি।

একথা শুনে কাঠবিড়ালি আর বেজি বেজায় হাসলো। তারপর দুজন দুজনকে কাতুকুতু দিতে দিতে আর হাসতে হাসতে পাশের বাঁশবনে চলে গেলো।

বাঁশবনে কিছুক্ষণ ঘুমিয়ে থেকে কাঠবিড়ালি বেজিটাকে ডেকে বলল, বন্ধু, ভুল হয়ে গেছে, হুতোম পেঁচাটা বোধহয় গরিব, ওর খাবার জোটেনি, তাই হয়তো ওর খাওয়া হয়নি, হয়তো লজ্জায়-  সেকথা বলতে পারেনি, চলো, আমাদের এই কলাই ওকে দিয়ে আসি।

কাঠবিড়ালি ও বেজি সেই রাস্তায় গিয়ে দেখলো খিদেতে হুতোম পেঁচাটা মরে গেছে আর একটা বনবিড়াল সেটাকে টানতে টানতে কলাই ক্ষেতে নিয়ে যাচ্ছে। তাইনা দেখে কাঠবিড়ালি আর বেজি খুব কাঁদলো আর বলল, বনবিড়াল স্যার, আমাদের বন্ধু হুতোম পেঁচাকে দিন, আমরা ওর মরদেহ কবর দেবো। এই কথা শুনে বনবিড়াল খুব রেগে গেলো আর খ্যাচম্যাচ করে দাঁত বের করে বলল, দাঁড়া, তোদের ঘাড় মটকাবো।

একথা শুনে কাঠবিড়ালি আর বেজি ভয় পেয়ে এক দৌড়ে সেই বাঁশবনে ফিরে এলো।

কাঠবিড়ালি ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে বেজিকে বলল, যদি আমরা প্রথমে একটু খাবার দিতাম তাহলে হুতোম পেঁচাকে আজ বনবিড়ালের পেটে যেতে হতো না।
ইচ্ছেঘুড়ি

বাংলাদেশ সময়: ১৯২২ ঘণ্টা, আগস্ট ২৭, ২০১৭
এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।