ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইচ্ছেঘুড়ি

জন্মদিন | অরণ্য প্রভা

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৩৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ২, ২০১৭
জন্মদিন | অরণ্য প্রভা প্রতীকী ছবি

১.
জন্মদিনে মায়ের সাথে রাজিবদের বাসায় এসে বিদ্যুতের মন আনন্দে ভরে ওঠে। যে রুমটা কেক কাটার জন্য সাজানো হয়েছে সেখানে শো-কেসে থরে থরে সাজানো রাজিবের খেলনা। অন্য শিশুদের যখন কেকমুখী মোম জ্বালানোর পূর্বমুহূর্তের ব্যস্ততায় আনন্দের ঢেউ খেলে যাচ্ছে, তখন বিদ্যুতের দৃষ্টি শুধুই শো-কেসের দিকে। সে দৃষ্টি তীক্ষ্ণ আর মনোযোগী। আর মনে মনে কী যেন বিড়বিড় করে বলতে থাকে। 

বলবেই না কেন? ওর বয়স মাত্র চার বছর। মোম জেলে হ্যাপি বার্থ ডে বলার সাথে সাথে যখন পার্টি-স্প্রে করা হয়, তখন তুষারপাতের মতো স্প্রে-র স্ফুরণগুলো বেলুনে পড়ছে আবার কারো কালো চুলের ওপর পড়ে বরফের কুচির মতো লাগছে।

কেক খাওয়ার পর্বের মাঝেই শুরু হয় জরি মাখানো উল্লাস। এ-ওর গাল ছুঁয়ে দিলেই হচ্ছে, সোনালি, আরেকজনের রুপালি। হরেক রকমের টুসটুসে গালগুলো জরিতে রঙিন হচ্ছে। উচ্ছ্বাসের মাঝেই বানুর হাতে উপহার সামগ্রী জমা হতে থাকে। বিদ্যুৎ ওরে মায়ের আঁচল ধরিয়ে বলে- মা, মারে, এত্তগুলা উপার সব রাজিব ভাইয়োর?
ওর মা বলেন, হ। আরো পাইবো, ওই শো-কেসে দ্যাখোস নি, ওগুলা সব জন্মদিনের পাইছে, বুচ্ছোস? 
বিদ্যুৎ কণ্ঠ ভারী করে বলে, মারে আমার জম্মদিন হয় না ক্যান?
মা বিদ্যুতের কথার ভ্রুক্ষেপ না করে উপহারগুলো থরে থারে সাজাতে থাকে।

২.
বেশ কয়েকদিন ধরে কান্নাকাটি করতে করতে বানুকে ধৈর্যের চূড়ান্ত সীমায় পৌঁছে দিয়েছে বিদ্যুৎ। ছেলের ঘ্যানর ঘ্যানর আর ভাল্লাগে না। পাঁচ-ছয়টা বাড়িতে কাজ শেষ করে যখন বস্তির ঘরে ঢোকে তখন মায়াভরা চোখে দাঁড়িয়ে কাঁদতে কাঁদতে বিদ্যুৎ বলে, মারে আমার জন্মদিন কবে হইবো? বিদ্যুৎকে বুকি জড়িয়ে বানু তখন বলতে থাকে- হবে বাবা, আর কদিন পরেই হবে। মাসটা যাইয়া লউক, তারপর তোর জন্মদিন করমু।

বিদ্যুৎকে ঘরে রেখে বানু বাসাবাড়িতে কাজের উদ্দেশ্যে বেরোলে, বিদ্যুৎ বস্তির অন্যঘরে গিয়ে বড়দের জিজ্ঞাস করে- এ মাস শ্যাষ হইতে আর কদিন আছে বিকাশ? 
বিকাশ বলে, এই তো আইজক্যা ৩০ তারিখ আর মাত্র ১ দিন। ক্যান, তুই মাস গনোস ক্যান বিদ্যুৎ, মাস দিয়া তুই কী করবি?
বিদ্যুৎ আবেগ আর উচ্ছ্বাস মিশিয়ে বলে, আমার জন্মদিন হইবো। সেদিন কী মজা হইবে! আমি তোরে দাওয়াত দিমু। আরে কত্ত মজা, জানিস আমারে সবাই উপার দিবো, বড় বড় খেলনা, ইমোট কন্টোল লাগানো গাড়ি, ব্যাটারিলাগানো মোয়াইল। বিকাশ ভাবতে থাকে, এ বস্তিতে তো কোনোদিন কারো জন্মদিন হয়নি। সত্যি সত্যি কি বিদ্যুতের জন্মদিন হইবো?


৩.
আজ বিদ্যুতের জন্মদিন। বানু যে বাসাগুলোতে কাজ করে তাদের সবাইরে দাওয়াত করেছে। বস্তিরও আট-দশ ঘরেও দাওয়াত করেছে। পাশের বেকারি থেকে ৫০০ টাকা দিয়া কেক বানিয়ে এনেছে। কেকটা ছোট বলে বিদ্যুতের মনে ভরে নি। মকে বলেছে, এত্তটুকুন কেক? মা তখন উত্তর দেননি।  

বস্তির সবাই এলেও বাসাবাড়িতে কাজ করা কোনো অতিথিই আসছে না দেখে বানু পথপানে গাইগুঁই করছে। বস্তির কেউ ঢুকলেই বিদ্যুৎ দৌড়ে গিয়ে আড়চোখে দেখতে চেষ্টা করে উপহারের প্যাকেকটা কেমন? না, মনে ভরে না। এ পর্যন্ত যারা এসেছে সবাই বিদ্যুতের মুখের দিকে তাকিয়ে দেখে ওর মুখটা মলিন, দুশ্চিন্তার ছায়া, আনন্দের অনেক ঘাটতি। বিকাশ অবশেষে বলেই বসলো- কিরে বিদ্যুৎ তুই এমন মনমরা হয়ে আছিস ক্যান? তোর না আজ জন্মদিন। তুই কেক কাটবি, কত্ত মজা হবে, তুই খুশি হোস নি?

ইতোমধ্যেই বাসাবাড়িতে কাজ করা একজন অতিথি আসেন। ইয়া বড় একটা উপহার বাক্স নিয়ে। তা দেখে বিদ্যুতের মনটা যেন বিদ্যুতায়িত হয়ে ঝিলিক মারে। সময় চলে যায়, বানু আঁকুপাক করে। বাসাবাড়িতে কাজকরা অন্যরা না-আসায় বানুরও আনন্দের মাঝে শূন্যতা বিরাজ করে। আনন্দ শেষে সবাই চলে গেলে উপহারগুলোর সামনে দাঁড়িয়ে বিদ্যুতের মনে ভেসে ওঠে রাজিবের জন্মদিনের উপহার সামগ্রী।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৩০ ঘণ্টা, অক্টোবর ০২, ২০১৭
এমজেএফ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।