ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইচ্ছেঘুড়ি

রহস্য দ্বীপ (পর্ব-৬৪)

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৪৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৭, ২০১৭
রহস্য দ্বীপ (পর্ব-৬৪) রহস্য দ্বীপ

[পূর্বপ্রকাশের পর]
১৩. গরমকাল পেরিয়ে যায়
কেউই বাচ্চাদের কাজে নাক গলাতে আসে না। ওরা সবাই দ্বীপে একত্রে বসবাস করে, খেলে, কাজ করে, খাবার খায় আর পানীয় পান করে, গোসল করে। নিজের ইচ্ছেমতো সবকিছু করে। পাশাপাশি খামারটিকে ঠিকঠাক চালু রাখতে তাদের নির্দিষ্ট কিছু কাজও করতে হয়।

কখনো কখনো ওদের কিছু দরকার পড়লে জ্যাক আর মাইক রাতে নৌকায় করে জ্যাকের দাদার বা হ্যারিয়েট খালার খামারে তা আনতে যায়। এক রাতে মাইক তার খালার বাড়িতে ঢুকতে পারে এবং তার আর মেয়েদের কয়েকটা কাপড় নিয়ে আসে।

মেয়েদের দু’তিনটা জামা আর নিজের একটা হাফপ্যান্ট ও একটা কোট।  

কাপড়-চোপড় নিয়ে ওদের খুব ঝামেলা পোহাতে হয়, কারণ দ্বীপে আসার পর সেসব ময়লা হয় আর ছিঁড়ে যায়, আর বদলাবার মতন কোনো কাপড় মেয়েদের নেই বলে সেগুলো ধোয়া বা সেলাই করা কষ্টকর হয়ে পড়ে। জ্যাক তার দাদার খামারে প্রচুর ফল, আগের মতোই আলু আর শালগম পায়, যা তখনও বিক্রি করা হয়নি। হাতের কাছে ডিম, খরগোশ, মাছ, আর ডেইজির দুধ পাওয়ায় ওরা প্রতিদিন পেট ভরে খেতে পায়।  

তাদের বীজগুলোও খুব দ্রুত গজায়। পেগির প্রথমবার সরিষা, ঝাল-শাক তোলা আর সিদ্ধ ডিমের সঙ্গে লেটুস পাতা মিশিয়ে সালাদ বানাবার দিনটি সত্যিই গর্বের! মূলার স্বাদও খুব চমৎকার আর ঝাঁঝালো, তাতে খাবার সময় জ্যাকের চোখেও জল চলে আসে! তাদের লাগানো সবজি বিস্ময়করভাবে বেড়ে ওঠে এবং সময় খুব দ্রুত সময় গড়ায়।

শিম এখন কাঁটা গাছের একেবারে ওপরে পৌঁছে গেছে, আর নিচের দিকে যাতে ভালো করে ফুল ধরতে পারে জ্যাক তাই ওর আগাগুলো ছেঁটে দেয়।  
বেয়ে পাড়ার জন্য আমরা মই বানাতে চাই না, জ্যাক বলে।  
মনে হচ্ছে, প্রচুর ধরবে লাল ফুলগুলো দেখো!
খুব সুন্দর ঘ্রাণ! গন্ধ শুকে নোরা বলে।  
শিমের স্বাদও দারুণ! জ্যাক বলে।

গ্রীষ্মের সময় বলে আবহাওয়া খুব গরম আর ফর্সা। বাচ্চারা সবাই দরজার বাইরে বড় বড় কাঁটা ঝোপের ছাউনির আড়ালে তাদের দেওয়া সবুজ শোবার ঘর নামের খোলা বিছানায় এসে ঘুমায়। প্রতি সপ্তাহেই নতুন করে গুল্ম আর ফার্ন বিছিয়ে তাদের সেই বিছানাগুলোকে মেরামত করতে হয়, কারণ ততদিনে ওগুলো শরীরের ভারে একেবারে চেপ্টা হয়ে গেছে, তাই ওর ওপর ঘুমানো আগের মতো আর আরামদায়ক মনে হয় না। তবে কাজটা খুবই মজার, বাচ্চারা তাই কাজটা মনের আনন্দেই করে।

আমরা খুব বাদামি! একদিন সবাই আগুন ঘিরে বসে রান্না করা মূলা আলু খাবার সময়, মাইক বলে। সবাই এর ওর দিকে তাকায়।  

আমরা জামের মতোই বাদামি, নোরা বলে।  
কোন জামের কথা বলছ? জ্যাক বলে। আমি কোনো বাদামি জামের কথা শুনিনি। বেশিরভাগ জামই তো লাল!
আচ্ছা, আমরা তাহলে ওক-আপেলের মতন! নোরা বলে। আসলেই ওদের অবস্থা সেরকমই। হাত, পা, মুখ, গলা, হাঁটু- একেবারে জিপসিদের মতোই কালো! এরই মধ্যে বাচ্চারা বেশ মুটিয়েও গেছে, কারণ আজব সব মিশেল খাবার খেলেও ওরা অঢেল সরওয়ালা দুধ খাচ্ছে।

দ্বীপের জীবন শান্তিময় সাদামাটা হলেও তাতে যথেষ্ট উত্তেজনা রয়েছে। প্রতিদিন জ্যাক খুব আয়োজন করে ডেইজিকে গুহায় নিয়ে যায় এবং তাকে জোর করে ঠেসে সরু সুড়ঙ্গ দিয়ে পেছনের গুহায় নেওয়া হয়। প্রথমবার সে ভয়ানক তোড়জোড় করে। হাম্বা হাম্বা করে চেঁচিয়ে জোরাজুরি করে, এমনকি লাথিও মারে। কিন্তু জ্যাক শক্তভাবে ধরে আদর করে তাকে ভেতরে নিয়ে যায়। সেখানে ভেতরের গুহায় নিয়ে গিয়ে সে তাকে আগের রাতে দাদার খামার থেকে সদ্য পেড়ে আনা তরতাজা রসালো একটা শালগম খেতে দেয়। ডেইজি খুশি হয়। সে তা চিবায় এবং সুড়ঙ্গ দিয়ে ফিরে আসার সময় পুরোপুরি শান্ত থাকে।

পরের বার সে আবারও চিৎকার শুরু করে, তবে লাথি মারে না, বা উঁচুস্বরে হাম্বা হাম্বা করেও ডাকে না। তিনবারের বার তাকে পুরোপুরি প্রসন্ন মনে যেতে দেখা যায়, কারণ এবার সে জানে ওখানে গুহার ভেতর তার জন্য মজার একটা শালগম অপেক্ষা করছে। চারবারের বার সে আপনা থেকেই পথ চিনে গুহার ভেতর ঢোকে এবং একা একাই ভেতরে একেবারে শেষ মাথায় গিয়ে থামে।

ভয়ানক চাপাচাপি করে যেতে হচ্ছে, পেছন থেকে, মাইক বলে। ডেইজি যদি আরো মোটা হয় তখন তো ও আর এর ভেতর দিয়ে যেতে পারবে না, জ্যাক।

চলবে….

বাংলাদেশ সময়: ১৭৪০ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৭, ২০১৭
এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।