ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইচ্ছেঘুড়ি

মেঘ রাজকন্যা | নাজিয়া ফেরদৌস

গল্প/ইচ্ছেঘুড়ি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৪৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ২০, ২০১৭
মেঘ রাজকন্যা | নাজিয়া ফেরদৌস মেঘ রাজকন্যা/প্রতীকী ছবি

এক ছিল বৃষ্টির দেশ। সেখানে দিন রাত শুধু বৃষ্টি আর বৃষ্টি পড়তো। আসলে বৃষ্টিগুলো ছিল মেঘেদের কান্না। মেঘেদের রাজ্যে কোন রাজকন্যা ছিল না। তাই তারা দিন রাত কান্না করতো। কিন্তু মেঘেদের কান্নার কারণে পৃথিবীতে এতো বৃষ্টি হলো যে লোকজন অস্থির হয়ে উঠলো। তারা ঠিক করলো মেঘের রাজার কাছে যাবে। 

মেঘ রাজা তখন ঘুমাচ্ছিলেন, রাজকন্যার আশায় তারও খুব খারাপ অবস্থা। পৃথিবীর লোকেরা মেঘরাজাকে বৃষ্টি থামাতে বললো।

কিন্তু মেঘরাজা তা শুনে আরো কান্না শুরু করে দিলেন। বৃষ্টি গেলো বেড়ে। মহাবিপদ দেখে পৃথিবীর লোকেরা গেলো এবার সূর্যের কাছে। সূর্য বললো মেঘেরা ঠিক সময়ে পৃথিবীতে বৃষ্টি দেয়নি বলে তাদের শাস্তি হয়েছে। যদি তারা রাজকন্যা পেতে চায় তাহলে তাদের দূর দেশে গিয়ে যেখানে পানির খুব অভাব সেখানে বৃষ্টি ঝরাতে হবে। তবেই তারা রাজকন্যা পাবে। সূর্য ছড়া কাটলো- যেই দেশে পানি নেই, সেই দেশে বন্যা/দিলে পাবে মেঘরাজা সুন্দরী কন্যা।
লোকেরা জলদি গিয়ে মেঘরাজাকে সে কথা জানালো। মেঘরাজা মেঘেদের যেতে বললো দূর দেশে। মেঘরাজা যাদের বৃষ্টির জন্য নিয়োগ দিয়েছিলেন তারা ছিল দুষ্টু মেঘ। তারা শুধু খেতো আর ঘুমাতো। একটুও কাজ করতো না। রাজার কথায় সেই মেঘেরা চললো তাদের কাঁথা বালিশ নিয়ে। দূর দেশে যেতে হবে যে! 

এদিকে মেঘেরা চলে গেলে পৃথিবীর মানুষও শান্তি পেলো। মেঘেরা খায় আর যায়, খায় আর যায়। কোথায় বৃষ্টি দিতে হবে তা একবারও দেখে না। কিছুদূর যাওয়ার পরই মেঘেরা বললো ‘অনেক হেঁটেছি রে আর তো পারি না। একটু জিরিয়ে নিই। ’ এই বলে তারা ঘুমিয়ে পড়লো। কিন্তু যে দেশের উপর তারা ঘুমালো সেখানে পানি নেই। পানির অভাবে সব নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।  

খালে পানি নেই, বিলে পানি নেই, কুয়োতেও পানি নেই। সবাই পানির জন্য মেঘরাজার কাছে প্রার্থনা করছে। কিন্তু তাদের কান্না আর প্রার্থনা মেঘেরা শুনতেই পেলো না। যখন তাদের ঘুম ভাঙলো তখন রাত হয়ে গেছে। মেঘেরা ভাবলো অনেক ঘুরেছি আর না ঘুরলেও হবে। তারা আর কোথাও গেলো না, বাড়ি ফিরে এলো। রাজা বললেন বৃষ্টি দিয়েছো? মেঘেরা ভয়ে ভয়ে মিথ্যে করেই বলে দিলো ‘জ্বী রাজা মশাই খুব বৃষ্টি দিয়েছি’।  

রাজা তো মহাখুশি। এবার তার রাজকন্যা নিশ্চয়ই হবে। কিন্তু মাস গেলো, বছর গেল, রানির তবু রাজকন্যা হলো না। নতুন নতুন রাজপুত্র জন্ম নিলো। রাজা বুঝলেন কোন গণ্ডগোল আছে। তিনি গুপ্তচর পাঠালেন। গুপ্তচর খবর দিলো মেঘেরা সারাদিন শুধু ঘুমায় আর বৃষ্টির কথা ভুলে যায়। হঠাৎ মনে হলে এমন জোরে বৃষ্টি দেয় যে ঝড়ে সব নষ্ট হয়ে যায়। শুনে রাজার তো খুব রাগ হলো।  

রাজা এবার নিজেই বৃষ্টি দিতে যাবেন বলে ঠিক করলেন। তিনি মেঘসৈন্য নিয়ে রওয়ানা হলেন খরার দেশের খোঁজে। অনেক অনেক দিন রাজা চললেন। অবশেষে দেখা গেলো শুকনো মাটি, খরখরে খরার দেশ। একটি ছোট মেয়ে খালি মাঠে বসে পানির জন্য কাঁদছিল। তার অবস্থা দেখে রাজার খুব কান্না পেলো। আর সঙ্গে সঙ্গে সেখানে শুরু হলো বৃষ্টি। খরার দেশ আবার সুন্দর হয়ে উঠলো। সেই মেয়েটি পানি পেয়ে খেলতে লাগলো।  

বৃষ্টি রাজা খুশি মনে বাড়ি ফিরলেন। এবার মেঘের রাজ্যে এক রাজকন্যার জন্ম হলো। মেঘের মতো সাদা তার রং। দেশজুড়ে খুশি আর ধরে না। রাজা সেই অলস মেঘগুলোকে শাস্তি দিলেন আর তাদের বদলে রাখলেন এমন মেঘ যারা ঠিক সময়মতো কাজ করে। মেঘের রাজ্যে তারপর রাজকন্যাকে নিয়ে শুরু হলো আনন্দ।

ichchheghuri
বাংলাদেশ সময়: ২০৩৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ২০, ২০১৭
এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।