ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইচ্ছেঘুড়ি

সেরালির ঘরে ‘ভূতের ছাও’ | বিএম বরকতউল্লাহ্

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৫৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২, ২০১৮
সেরালির ঘরে ‘ভূতের ছাও’ | বিএম বরকতউল্লাহ্ প্রতীকী ছবি

সেরালির ঘরে ‘ভূতের ছাও’
সেরালির বোঝার বাকি নেই যে, তার ঘরে কতগুলো ‘ভূতের ছাও’ জন্ম নিয়েছে। লোভী ও হাঁড়কিপটে সেরালি চট করে দারুণ একটা পরিকল্পনা করে ফেললো। যে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে সে অনেক অর্থ-সম্পদের মালিক হতে পারবে। 

সেরালি মনে মনে বলে, এই দুনিয়ায় আমি বড়ো ক্ষণস্থায়ী। কিন্তু টাকা হলে টেনে-টুনে দীর্ঘস্থায়ী হওয়া যায়।

টাকার উপরে আর কিছু নেই, দেখি কী আছে কপালে!

সেরালি বাজার থেকে অনেক টাকা খরচ করে মজাদার খাবার এনে সন্তানদের খেতে দিলো। ওরা মহানন্দে গপাগপ করে খাবার খেয়ে বাবার খুব ভক্ত হয়ে গেলো। সেরালি যখনই ঘরে ঢোকে তখনই ছেলে-মেয়েরা ছুটে এসে তাকে ঘিরে ধরে। বাবার সঙ্গে সন্তানদের গভীর সম্পর্ক হয়ে গেলো। ওরা বাবা বলতে পাগলো।  

সেরালি একদিন সন্তানদের ডেকে নিয়ে খোশগল্প করতে বসলো। সে কিছুক্ষণ গল্প করে বললো, আচ্ছা, বাবা-সোনারা, তোমরা কে কত রকমের বাঁদরামি করতে পারো আমাকে একটু করে দেখাও তো দেখি!

হায়! হায়! মুহূর্তের মধ্যে ঘরে তেলেসমাতি কাণ্ড শুরু হয়ে গেলো! ওরা চোখের পলকে রূপ পরিবর্তন করে রাজ্যের দুষ্টুমি শুরু করলো। কেউ সাপ, কেউ ব্যাঙ, কেউ গরু, কেউ বানর, কেউ বা ভয়ঙ্কর মানুষের রূপ ধরে অদ্ভুত আচরণ করতে লাগলো। সেরালি এসব দেখে ভয়ে পেয়ে গেলো। দু'চোখ বন্ধ করে বসে রইলো।  

এক ছেলে সেরালিকে চোখ বন্ধ করে বসে থাকতে দেখে হাত টেনে নিয়ে বললো, বাবা, তুমি ঘুমাও নাকি। চোখ খোলো। আমাদের শয়তানি দেখবা না? সেরালি চোখ মেলে দেখে তার সামনে বিশাল হা করে আছে এক আজব প্রাণী- যার মুখ মাটি থেকে ঘরের চাল পর্যন্ত লম্বা। চিকনালি এই হা দেখে ভিরমি খেয়ে মাটিতে পড়ে গেলো। ছেলে-মেয়েরা তাকে টেনে-টুনে তুলে কী করলো সে কিছুই টের পায়নি।  

সেরালির জ্ঞান ফেরার পর দেখে, রাজার পোশাক পরে হাতির ওপর বসে আছে। তার সামনে অসংখ্য শিশু আর হিংস্র পশু-পাখি আনন্দে হই-হুল্লোড় করছে। ওরা পরম শ্রদ্ধার সঙ্গে বলছে, আমরা বাবাকে রাজা বানিয়ে হাতির ওপর সিংহাসনে বসিয়েছি। আমরা বাবাকে ঠিক রাজার মতোই দেখতে চাই আর রাজার মতো করে রাখতে চাই।  

আনন্দে ও গর্বে সেরালির বুকটা ফুলে উঠলো। সে হাঃ হাঃ হাঃ, হিঃ হিঃ হিঃ করে হাসতে লাগলো। সে একলাফে হাতির পিঠ থেকে নেমে রাজার ভঙ্গিতে বললো, হে বিচিত্র বৎস আমার, তোমাদের শক্তি-সামর্থ্য আর নৈপুণ্য দেখে আমি অভিভূত। তোমাদের মতো সন্তানের বাবা হতে পেরে আমি গর্ববোধ করছি। আমার বিশ্বাস, তোমাদের নিয়ে আমি যে পরিকল্পনা করেছি, তা বাস্তবে রূপায়িত করতে তোমরা সক্ষম হবে। তোমাদের কর্মকুশলতা ও দক্ষতা আমাদের জীবনমান পাল্টে দেবে এতে কোনো সন্দেহ নেই। হে আমার প্রাণপ্রিয় বৎসসকল, তোমরা কি আমার পরিকল্পনা বাস্তবে রূপ দিতে পারবে? 

তার সন্তানেরা সমস্বরে বললো, হে আমাদের প্রাণপ্রিয় বাবা! আপনার ঘরে আমরা জন্ম নিয়েছি। আপনার অবাধ্য হওয়ার সাধ্য আমাদের নেই। আমরা অনেক অসাধ্যকে সাধন করতে পারি। এখন আপনি যা আদেশ করবেন আমরা তা-ই পালন করবো। আমাদের ওপর আপনি ষোলোআনা ভরসা রাখতে পারেন। এখন আমাদের আদেশ করুন বাবা, আমরা আপনার আদেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করে ধন্য হতে চাই!

সেরালি গুণধর সন্তানদের কথায় যারপরনাই খুশি হলো এবং তাদের সঙ্গে দীর্ঘ সময় শলা-পরামর্শ করে খুশিমনে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো।

‘আঁটকুড়ার ঘরে সন্তান হয়েছে- মৃত গাছে শাখা গজিয়েছে। ’ এ রকম কথা ছড়িয়ে পড়ল চারিদিকে।

ঘটনার হাত পা গজাতে শুরু করলো। তারপর নানা রটনা। লোক থেকে লোকে, গ্রাম থেকে গ্রামে ছড়িয়ে গেলো আঁটকুড়ে সেরালির বাবা হওয়ার অদ্ভুত ঘটনা। কৌতূহলী নারী-পুরুষের লাইন পড়ে গেলো সেরালির বাড়িতে।  

‘এ খোদার সৃষ্টিরহস্য ছাড়া আর কী হতে পারে! এ এক আজব রহস্য। এ রহস্য ভেদ করার শক্তি কার আছে! খোদার লীলাখেলার শেষ নেই!’ এমন কথা সবার মুখে মুখে ফিরছে এখন।  

বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০২, ২০১৭
এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।