ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইচ্ছেঘুড়ি

খুকি ও নেংটি ইঁদুর | বিএম বরকতউল্লাহ্

গল্প/ইচ্ছেঘুড়ি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০০২ ঘণ্টা, নভেম্বর ১১, ২০১৯
খুকি ও নেংটি ইঁদুর | বিএম বরকতউল্লাহ্

এক সেকেন্ডেরও কম সময়। ধরতে পারেনি। নইলে এতোক্ষণে বিড়ালের পেটে চালান হয়ে যেত নেংটি ইঁদুরটি। 

ইঁদুরটি এক দৌড়ে গিয়ে তার গর্তে ঢুকে পড়লো। আর বিড়ালটি ওৎ পেতে বসে আছে গর্তের কিনারে।

নয় বছরের খুকি ভাবতে লাগলো ছোট্ট ইঁদুরটির কথা।

ছোট্ট একটা প্রাণী ইঁদুর। কত বিপদের মধ্যে বেঁচে আছে সে! তার চারপাশে অসংখ্য শত্রু। তার গর্তটি ছাড়া আশ্রয় নেওয়ার আর কোনো জায়গা নেই। মানুষেরা দেখলে লাঠি নিয়ে তাড়ায়, কুকুর-বিড়াল দেখলে খেয়ে ফেলতে চায়। সাপ দেখলে ছোবল মারে। কাক-পেঁচারা দেখলে ছোঁ মেরে নিয়ে যায়।

কই, তার বন্ধু বলতে তো কেউ নেই! তার বিপদে এগিয়ে আসারও কেউ নেই। তার সমস্যায় সাহায্য করার কেউ নেই। কী ভয়ংকর আর বিপজ্জনক জীবন এই ছোট্ট ইঁদুরের! তার ঘর-সংসার আছে। তার ছেলেমেয়ে আছে। তাকে কামাই করে খেয়ে বেঁচে থাকতে হয়। তার ছেলেমেয়েদের খাওয়াতে হয়। তারপরেও ইঁদুরেরা দিব্যি বেঁচে আছে! কী করে সম্ভব?

নেংটি ইঁদুরকে নিয়ে চিন্তা করে খুকির মাথা গরম হয়ে যায়। সে ভাবে, আমি মা-বাবার আদুরে সন্তান। আমার চারপাশে যা কিছু আছে সবই আমার জন্যে। আমার কোনো দুঃখ নেই। আমার শত্রু নেই, সবাই আমার বন্ধু। আমি যখন যা চাই খুব সহজেই তা পেয়ে যাই। যা চাই না তাও পাই। আমার যা আছে তা আমার প্রয়োজনের চেয়ে অনেক বেশি। আমি খেতে না চাইলে আমাকে আদর করে খাইয়ে দেয়। কষ্ট যে কি জিনিস তা আমি জানি না। বিপদ আর সমস্যা কি তাও বুঝিনি। আমি কাঁদতেও পারি না। সবাই আমাকে আদর দিয়ে সবসময় হাসিখুশি করে রাখে। আমি একটা ননির পুতুল! 
আর ইঁদুরটি? 


খুকি কাজে লেগে গেলো 
পরের দিন শুক্রবার। ঘুম থেকে উঠে কাজের মেয়ের চোখ গোল হয়ে গেলো। সে এক দৌড়ে গেলো খুকির মা-বাবার ঘরে। খালাম্মা, খালু তাড়াতাড়ি ওঠেন। দেখে যান কি আজব কাণ্ড। ওঠেন, ওঠেন।
তারা ধড়ফড়িয়ে উঠে চোখ কচলাতে কচলাতে বললো, কী হয়েছে তোর? এভাবে ডাকাডাকি করছিস যে!
দেখেন আমাদের খুকির কাণ্ড দেখে যান।

খুকি আপন মনে নিজের কাজগুলো নিজের হাতে করছে। সে তার টেবিল গুছিয়ে নিলো। সে তার ছ্ট্টো গোটা রুম ঝাট দিলো। তারপর সে তার ছোট ছোট জামাগুলো নিয়ে গেলো কলপারে। সে নিজেই কাপড় ধুয়ে উঠোনের তারে ছড়িয়ে দিতে গেলো। সে তারের নাগাল পাচ্ছিল না। ঘর থেকে একটি টুল টেনে বের করে নিয়ে গেলো উঠোনে। সে তার কাপড়গুলো তারে ছড়িয়ে দিয়ে তাতে ক্লিপ এঁটে দিলো। তারপর হাতে ঝাড়ু নিয়ে উঠোন ঝাট দিতে শুরু করলো।

খুকির বাবা পাখির মতো উড়ে এলো। তার হাত থেকে ঝাড়ুটা কেড়ে নিয়ে বললো, মা, মা এগুলো কী করছো তুমি? এসব তো তোমার কাজ নয় মা। ঠাণ্ডা পানিতে কাপড় ধুলে তোমার ঠাণ্ডা লেগে যাবে না মা, বলো। এসব কাজ করার জন্যে তো আমাদের কাজের লোক আছে। তুমি হঠাৎ করে এতোসব কাজ শুরু করে দিলে কেন? তোমাকে কেউ কিছু বলেছে মা, বলো। কার এত বড়ো সাহস তোমাকে কিছু বলে, কঠিন বিচার হবে।

বাবা আমাকে কেউ কিচ্ছু বলেনি। ঝাড়ুটা আমার হাতে দাও তো। তুমি ঘরে গিয়ে বসো। দেখো আমি সুন্দর করে এই কাজগুলো করতে পারি। যাও, যাও, বলে খুকি তার বাবাকে ঠেলে ঘরে নিয়ে দিয়ে এলো। খুকির মা বাবা-মেয়ের ঝগড়া দেখছিল।

খুকি উঠোন ঝাট দিয়ে ঘরে এসে পড়তে বসে গেলো। তার মা এক গ্লাস দুধ নিয়ে তার সামনে ধরলো। বললো, মা, আমার লক্ষ্মী মা অনেক পরিশ্রম করেছ; এই নাও তোমার পুরস্কার।  

খুকি দুধে চুমুক দিলো। তার মা বললো, কাজ করা ভালো তবে তুমি এখন অনেক ছোট। শোনো মা, তোমার কাজগুলো করে দেওয়ার জন্যে লোক আছে। তুমি মন দিয়ে পড়ো। কাজ করতে হবে না তোমার।  

মা আমার কাজগুলো আমাকে করতে দাও। লেখাপড়া করেই এসব কাজ করা যায়। এখন থেকে আমার কোনো কাজে বাধা দিতে পারবে না। দেখো আমি পারি কিনা।

মা মুচকি হাসি দিয়ে চলে গেলো। খুকির মা খুকির বাবার সামনে গিয়ে খুকির মতো হাত আর মাথা ঝাকিয়ে বললো, লেখাপড়া করেই এসব কাজ করা যায়। এখন থেকে আমার কোনো কাজে বাধা দিতে পারবে না। দেখো আমি পারি কিনা। বলেই দুজনে হাহা হিহহি করে হাসতে লাগলো।

খুকিটা ইঁদুর হয়ে গেলো নাকি?
খুকি তার রুম থেকে ছুটে গিয়ে তার বাবা মাকে বললো, এখন থেকে আমাকে আর এত আদর করবে না। কথায় কথায় আমার কাজে সাহায্য করতে আসবে না। আমাকে আদর করে খাইয়ে দিতে হবে না। আমার কাজ আমি নিজের হাতে করব। বুঝেছ এবার?

মা-বাবা কৌতূহলী হয়ে বললো, আচ্ছা মা তুমি হঠাৎ করে এগুলো কী শুরু করলে, কী হয়েছে তোমার, শুনি।

খুকি তার হাতের আঙুল খামচি দেওয়ার মতো করে বললো, না, আমার কিছুই হয়নি। আমি একটা নেংটি ইঁদুর। কিচ্ কিচ্ কিচ্।  
মা আর বাবা খুকির কথা শুনে আনন্দে হেসে উঠলো।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৪৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ১০, ২০১৯
এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।