ঢাকা: ঢাকা পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশন কর্তৃপক্ষের (ওয়াসা) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তাকসিম এ খানসহ বেশ কয়েকজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ওঠা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগের বিষয়ে অনুসন্ধান চলছে বলে হাইকোর্টকে জানিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক।
দুদকের দেওয়া এ প্রতিবেদন দেখে ওয়াসার এমডির নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ নিয়ে করা রিট মঙ্গলবার (৬ ডিসেম্বর) নিষ্পত্তি করে আদেশ দেন বিচারপতি বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাইকোর্ট বেঞ্চ।
আদালতে রিটের পক্ষে আইনজীবী সুমন নিজেই শুনানি করেন। ওয়াসার পক্ষে ছিলেন আইনজীবী এ এম মাসুম, তার সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী সৈয়দ মাহসিব হোসেন। দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী খুরশীদ আলম খান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক।
পরে দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেন, যেহেতু তাকসিম এ খানের নিয়োগসহ অন্যান্য বিষয় নিয়ে হাইকোর্টের আরেকটি বেঞ্চে রুল বিচারাধীন। আর দুর্নীতির অভিযোগের বিষয়ে দুদকের অনুসন্ধান চলছে, তাই হাইকোর্ট মনে করে এ বিষয়ে বাড়তি আরেকটি রুল জারি করার কোনো প্রয়োজন নেই। এ কারণে সৈয়দ সায়েদুল হক সুমনের রিটটি নিষ্পত্তি করে আদেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
খুরশীদ আলম খান আরও বলেন, আদালত বলেছেন, ওনার (তাকসিম এ খানের) নিয়াগ সংক্রান্ত জালিয়াতির প্রমাণ থাকলে রিটকারী আইনজীবী সেগুলো দুদককে দিয়ে সহযোগিতা করতে পারেন। আর কোনো রকম প্রভাবিত না হয়ে, পক্ষপাতহীনভাবে আইন ও বিধি অনুযায়ী কমিশনকে অনুসন্ধান কাজ চালিয়ে যেতে বলেছেন আদালত।
দুদকের প্রতিবেদনে বলা হয়, পদ্মা জশলদিয়া প্রকল্পের প্রায় ১১০০ কোটি টাকা, গন্ধবপুর পানি শোধনাগার প্রকল্পের প্রায় ১০০০ কোটি, দাশেরকান্দি পয়শোধনাগার প্রকল্পের প্রায় ১০০০ কোটি, গুলশান বাড়িদারা লেক দূষণ প্রকেল্পের প্রায় ৫০ কোটি, সায়েদাবাদ পানি শোধনাগার ফেজ-২ এর পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের মাধ্যমে প্রায় ১৫ কোটি টাকার দুর্নীতি এবং ঢাকা ওয়াটার সাপ্লাই নেটওয়ার্ক ইমপ্রুভমেন্ট প্রকল্পে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগের বিষয়ে অনুসন্ধান চলছে। এছাড়া তাকসিম এ খানের বিভিন্ন ব্যাংক হিসাব ও এসব হিসাবের কাগজপত্র সংগ্রহ করে পর্যালোচনা করা হয়েছে।
ঢাকা ওয়াসা কর্মচারী বগুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেডের সদস্য নয় এমন লোকদের দিয়ে ২০১১ সালের ৩০ মে কমিটি গঠন করে এই কমিটির মাধ্যমে সমিতির ঠিকাদারী বিলের ৪১ কোটি ৭০ লাখ ৮০ হাজার ৭৫০ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে তাকসিম এ খানের বিরুদ্ধে। এছাড়া প্রায় ৩৫ কোটি টাকা মূল্যের ৬২ হাজার ৪৮১টি পানির মিটার সমিতির অনুমতি না নিয়ে অন্যত্র স্থানান্তর ও ২০১২ সালের ১৭ জানুয়ারি চিঠি পাঠিয়ে সমিতির জনতা ব্যাংকের কারওয়ান বাজার শাখার হিসাবের সব লেনদেন স্থগিতের অভিযোগও দুদকের অনুসন্ধান করছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ৭ জন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অবৈধভাবে নিয়োগ ও পদোন্নতি পাওয়ার অভিযোগ রয়েছে। এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে এসব কর্মকর্তাকে নোটিস পাঠানোর পর জিজ্ঞাসাবাদ করে তাদের বক্তব্য নেওয়া হয়েছে। এছাড়া অভিযোগের বিষয়ে আরও তথ্য সংগ্রহের কাজ চলমান রয়েছে।
রোববার রিটটি করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। রিটের পরে তিনি জানিয়েছিলেন, নিয়োগ প্রবিধানের শর্ত না মেনে ২০০৯ সালে তাকসিম এ খানকে নিয়োগ দেওয়া হয়। ওয়াসার এমডি হতে হলে যে ধরনের অভিজ্ঞতা থাকা দরকার, সেটি তার ছিল না।
ফলে তার নিয়োগে যে অনিয়ম হয়েছে, তার অনুসন্ধানের নির্দেশনা রিটে চাওয়া হয়েছে। রিট আবেদনে নিয়োগ প্রবিধানের শর্ত না মেনে ২০০৯ সালের ১৪ অক্টোবর ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে তাকসিম এ খানের নিয়োগ কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ও বেআইনি ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারির আর্জি জানানো হয়েছে।
পরদিন সোমবার শুনানিতে দুদকের আইনজীবী বলেন, ওয়াসার এমডির বিষয়ে একটি অনুসন্ধান চলছে। সেটির বিস্তারিত আগামীকাল (মঙ্গলবার) দুপুরে জানাব। এরপর মঙ্গলবার আদেশের জন্য দিন ধার্য করেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৪০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৬, ২০২২
ইএস/এসএ