ঢাকা, শুক্রবার, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৭ মে ২০২৪, ০৮ জিলকদ ১৪৪৫

আইন ও আদালত

কোম্পানি আইন যুগোপযোগী করতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে হাইকোর্টের ১৪ পরামর্শ

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪১৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২২, ২০২৩
কোম্পানি আইন যুগোপযোগী করতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে হাইকোর্টের ১৪ পরামর্শ

ঢাকা: জেলা ও বিভাগে আদালত প্রতিষ্ঠা, বর্তমান আইনকে সংশো্ধন করে ভারতের আদলে নতুন কোম্পানি আইন প্রণয়নসহ আইনটিকে যুগোপযোগী করতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে ১৪টি পরামর্শ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

টপ টেন ফেবিক্স অ্যান্ড টেইলার্স লিমিটেডের মালিকানা নিয়ে করা দুটি আবেদন নিষ্পত্তি করে এই রায় দিয়েছেন বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের একক বেঞ্চ।

২০২২ সালের ২৫ আগস্ট দেওয়া ওই রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি ২০ ফেব্রুয়ারি সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়।  

আদালতে আবেদনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মারগুব কবির ও আব্বাস উদ্দিন। বিবাদী পক্ষে ছিলেন আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল হক, মেহেদী হাসান চৌধুরী ও মুহাম্মদ হারুনুর রশীদ।

রায়ের পর্যবেক্ষণে হাইকোর্ট বলেছেন, বর্তমান কোম্পানি আইন, ১৯৯৪ অনেক ক্ষেত্রেই প্রয়োগের অনুপযোগী। কোম্পানি আইন ১৯৯৪ এটিকে বলা হলেও প্রকৃতপক্ষে এটি পুরোটাই কোম্পানি আইন ১৯১৩-ই রয়ে গেছে। এ অবস্থায় বাংলাদেশকে উন্নত দেশের পর্যায়ে নিতে হলে অবশ্যই ১০৯ বছরের পুরোনো কোম্পানি আইন আমূল পরিবর্তন একান্তভাবে অপরিহার্য।

আদালত আরও বলেন, প্রায় ১৭ কোটি জনসংখ্যার দেশে কয়েক লাখ প্রাইভেট ও পাবলিক লিমিটেড কোম্পানির জন্য একটি মাত্র কোম্পানি আদালত। অসংখ্য কোম্পানি বিরোধের জন্য একটি কোম্পানি বেঞ্চ থাকার কারণে কোম্পানির দৈনন্দিন কার্যক্রম চরম ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। দ্রুত বিরোধ নিষ্পত্তি করতে পারলে কোম্পানিগুলো নিজে উন্নত হয়ে দেশকেও উন্নত করতে ভূমিকা রাখতে পারবে। আধুনিক ও উন্নত বিশ্বের আদলে আমাদের কোম্পানি আইনকে ঢেলে না সাজালে উন্নত বিশ্বের পর্যায়ে উঠতে অনেক সময় লেগে যাবে।

মালিকানা নিয়ে দ্বন্ধের জেরে হাইকোর্টের কোম্পানি বেঞ্চে ২০১৯ এবং ২০২১ সালে দুটি আবেদন করে টপটেন ফেবিক্স অ্যান্ড টেইলার্স লিমিটেডের তিন ভাইয়ের এক ভাই। আবেদনকারীর নাম মো. উজ্জল। বিবাদী অপর দু’ভাই মো.সৈয়দ হোসেন ও আব্দুল আউয়াল।

সুপ্রিম কোর্টের রায়ের ভাষ্যমতে, ১৯৯০ সালে এলিফেন্ট রোডে টপটেন নামে একক মালিকানায় মো. সৈয়দ হোসেন কাপড় এবং সেলাইয়ের ব্যবসা শুরু করেন। পরবর্তীতে ২০১১ সালে আপন ছোট ভাই মো. উজ্জলকে ৩৫ শতাংশ এবং মো. আব্দুল আউয়ালকে পাঁচ শতাংশ শেয়ার দেন। বাকী ৬০ শতাংশ নিজে রাখেন। তবে কোম্পানি পরিচালনায় মতের অমিল হওয়ায় উজ্জল হাইকোর্টে দুটি আবেদন করেন।

শুনানি শেষে দেওয়া রায়ে হাইকোর্ট বলেন, আদেশ পাওয়ার তিন মাসের মধ্যে হুদা ভাসি চাটার্ড ফার্ম দিয়ে আবেদনকারীর শেয়ারের মূল্য যাচাই ও নির্ধারণ করতে হবে। পরবর্তী তিন মাসের মধ্যে আবেদনকারীর শেয়ার বড় ভাই সৈয়দ হোসেনকে কিনে নিতে নির্দেশ দেন।  

আদালত মনে করেন, কোম্পানি আইনটি ১০৯ বছরের পুরানো হওয়ার কারণেই এই বিরোধের উদ্ভব হয়েছে। তাই বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে আইনটি যুগোপযোগী করতে ১৪টি পরামর্শ দেন হাইকোর্ট।  

পরামর্শগুলো হলো- অতি দ্রুততার সঙ্গে ভারতের কোম্পানি আইনের আদলে বাংলাদেশের কোম্পানি আইন সংশোধন করে নতুন কোম্পানি আইন প্রণয়ন এবং প্রতি বছর এ আইনের হালনাগাদী করতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ; 

প্রতিটি জেলায় কোম্পানির সংখ্যানুপাতে এক বা একাধিক কোম্পানি আইনের ট্রাইব্যুানাল (Company Law Tribunal) গঠন করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ; প্রতিটি বিভাগে একটি করে কোম্পানি আপিল্যাট ট্রাইব্যুনাল (Company Appellate Tribunal) গঠন করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ; 

কোম্পানি আইনের অধীন অপরাধের জন্য বিশেষ ফৌজদারী আদালত প্রতিষ্ঠা করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ; 

যৌথমূলধনী কোম্পানি ও কার্যসমূহের পরিদফতরকে (আরজেএসসি) আধুনিকীকরণ ও আইনি কাঠামো শাক্তিশালী করতে এবং এর সেবার উন্নয়নে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ; 

Corporate Law Code বাংলায় প্রকাশ করে প্রত্যেক কোম্পানির অফিসে সংরক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেওয়া; 

প্রত্যেক কোম্পানিতে একজন স্থায়ী আইন কর্মকর্তার পদ তৈরি করে স্থায়ী আইন কর্মকর্তা রাখা এবং কোম্পানি আইনে অভিজ্ঞ একজন আইনজীবীকে পরামর্শক রাখা বাধ্যতামূলক করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ; 

প্রতিটি জেলায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন কোম্পানি গঠন, ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন এবং নিয়মিত প্রতিটি কোম্পানির কর্মকর্তাদেরকে বছরে অন্তত একবার এ প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করা বাধ্যতামূলক করা; 

প্রতি কোম্পানিতে একজন করে নিরপেক্ষ পরিচালক, কোম্পানির সচিব, অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষক নিয়োগ বাধ্যতামূলক করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ; 

পরিশোধিত মূলধন পাঁচ কোটি টাকার উপরে হলে প্রত্যেক কোম্পানিতে সার্বক্ষণিক কোম্পানি সচিব রাখা বাধ্যতামূলক করে (যারা আইসিএসবির সদস্য হবে) প্রয়োজনীয় পরিপত্র ইস্যু করা; 

কোম্পানির কার্যালয় যে শহরে নিবন্ধিত, সে শহরে এজিএম বাধ্যতামূলক করে দ্রুত পরিপত্র ইস্যু করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ; 

শেয়ারবাজারের আইনের সঙ্গে সংঘাত এড়ানো, কোম্পানির বার্ষিক সাধারণ সভায় (এজিএম) অনাহত পরিস্থিতির অবসান, রিটার্ন দাখিল সহজতর করা ইত্যাদি বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ; 

এজিএমে বা অন্য কোথাও কোম্পানির পক্ষ থেকে শেয়ারহোল্ডারদের কোনোরূপ উপহার, উপঢৌকন, নগদ অর্থ দেওয়া সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ করে বিধি প্রণয়ন। এজিএম অনুষ্ঠানে ব্যর্থ হলে সংশ্লিষ্ট কোম্পানির নিবন্ধন আপনা আপনি বাতিল মর্মে বিধি প্রণয়ন; 

লাভ-ক্ষতির হিসাব, উদ্বৃত্তপত্র, রিটার্ন বা করের বিষয় আরজেএসসিতে দাখিল করার বিষয়ে সুনির্দিষ্টভাবে বিধি-বিধান করার পরামর্শ দেন হাইকোর্ট।

বাংলাদেশ সময়: ১৪১৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২২, ২০২৩
ইএস/এসএ
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।