ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

আইন ও আদালত

বিনা পরোয়ানায় গ্রেফতারের ক্ষেত্রে পুলিশের করণীয়

খাদেমুল ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০১২ ঘণ্টা, মার্চ ১৮, ২০২৩
বিনা পরোয়ানায় গ্রেফতারের ক্ষেত্রে পুলিশের করণীয় প্রতীকী ছবি।

কোনো নাগরিককে গ্রেফতারের জন্য পুলিশের কাছে অবশ্যই আদালতের গ্রেফতারি পরোয়ানা (অ্যারেস্ট ওয়ারেন্ট) থাকতে হবে। তবে এই পরোয়ানা ব্যতীতও সুনির্দিষ্ট কিছু কারণে একজন ব্যক্তিকে পুলিশ গ্রেফতার করতে পারে।



ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ধারায় পুলিশকে এই ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। এই ক্ষমতা বিশেষ নয়টি ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ। পরোয়ানা ব্যতীত গ্রেফতারে পুলিশের প্রতি সর্বোচ্চ আদালতের কয়েকটি নির্দেশনা রয়েছে। আর গ্রেফতার পরবর্তী পদক্ষেপও সুনির্দিষ্টভাবে আইনে বর্ণনা করা হয়েছে।

ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ধারা অনুযায়ী বিনা পরোয়ানায় গ্রেফতারের কারণগুলো:

প্রথমত: কোনো ব্যক্তি আমলযোগ্য অপরাধের সঙ্গে যুক্ত বা যুক্ত থাকার অভিযোগ বা সন্দেহ হলে।  
দ্বিতীয়ত: আইনসঙ্গত কারণ ব্যতীত যার কাছে ঘর ভাঙার কোনো সরঞ্জাম রয়েছে।
তৃতীয়ত: এই বিধি অথবা সরকারের আদেশ দ্বারা যাহাকে অপরাধী ঘোষণা করা হয়েছে।
চতুর্থত: চোরাই মাল থাকলে বা মাল সম্পর্কিত কোনো অপরাধে যুক্ত থাকার সন্দেহ থাকলে।
পঞ্চমত: পুলিশ অফিসারের কাজে বাধাদান, আইনসঙ্গত হেফাজত থেকে পলায়ন বা পলায়নের চেষ্টা করলে।
ষষ্ঠত: বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী হতে পলায়নকারী বলে যাকে যুক্তিসংগতভাবে সন্দেহ করা যেতে পারে।
সপ্তমত: বাংলাদেশে করলে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হতো, দেশের বাইরে এরূপ কোনো অপরাধ করলে।
অষ্টমত: কোনো মুক্তিকামী আসামি যে ৫৬৫(৩) ধারা অনুযায়ী প্রণীত কোনো নিয়ম লঙ্ঘন করলে।
নবমত: গ্রেফতারের জন্য অন্য কোনো পুলিশ অফিসারের কাছ হতে অনুরোধ পাওয়া গেলে।

ভবঘুরে ও অভ্যাসগত অপরাধীর ক্ষেত্রে করণীয়:

ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৫ ও ৫৬ ধারা অনুযায়ী ভবঘুরে অথবা অভ্যাসগত অপরাধী অন্যকে ভীতি প্রদর্শন বা প্রদর্শনের চেষ্টা করলে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওই ব্যক্তিকে গ্রেফতারে পদক্ষেপ নিতে পারবেন। এছাড়া কোনো ব্যক্তি নাম, পরিচয় ও বাসস্থান গোপন করলে ৫৭ ধারা অনুযায়ী পুলিশ তাকে গ্রেফতার করতে পারবেন।

থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নাম, পরিচয় পেলে মুচলেকাসহ এই বিধানের অধীন গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিকে ছেড়ে দেবেন। ছেড়ে দেওয়ার একটি প্রতিবেদন তিনি চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বা চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটকে দেবেন। ৪০ ঘণ্টার মধ্যে নাম পরিচয় না পাওয়া গেলে বা মুচলেকা প্রদানে ব্যর্থ হলে তাকে সঙ্গে সঙ্গে নিকটস্থ এখতিয়ার সম্পন্ন ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে অগ্রবর্তী করতে হবে।  

ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে উপস্থিত করার সময় গ্রেফতারের স্থান থেকে আদালতে যাওয়ার সময় বাদে সর্বোচ্চ ২৪ ঘণ্টা হবে।

গ্রেফতারের ক্ষেত্রে পুলিশের অনুসরণীয় নিয়মাবলী:

১৯৯৮ সালে ডিবি পুলিশ ঢাকার সিদ্ধেশ্বরী এলাকা থেকে ইনডিপেন্ডেন্ট ইউনির্ভাসিটির ছাত্র শামীম রেজা রুবেলকে ৫৪ ধারায় গ্রেফতার করে এবং পরে পুলিশ হেফাজতে থাকা অবস্থায় রুবেল মারা যান।

সেই ঘটনায় হওয়া রিটের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৬ সালের ২৪ মে দেশের সর্বোচ্চ আদালত গ্রেফতারে কিছু নির্দেশনা দেন।  এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য- আটকের পর ওই ব্যক্তির আটকের নাম, তারিখ ও সময় লেখা স্মারক প্রস্তুত করতে হবে। আটকের ১২ ঘণ্টার মধ্যে একজন নিকটাত্মীয় বা ক্ষেত্র বিশেষে বন্ধুকে জানাতে হবে। আটকের সময় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তাকে পরিচয় দিতে হবে এবং আটকের সময় যারা উপস্থিত থাকবেন তাদের সামনে পরিচয়পত্র প্রদর্শন করতে হবে।

কোনো ব্যক্তিকে জখম অবস্থায় আটক করা হলে, তার কারণ উল্লেখ করতে হবে। একই সঙ্গে তাকে নিকটবর্তী হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা দিতে হবে এবং চিকিৎসকের কাছ থেকে একটি সার্টিফিকেট নিতে হবে। আটককৃত ব্যক্তি কোনো আইনজীবীর সঙ্গে পরামর্শ করতে চাইলে অথবা নিকটাত্মীয়র সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তাকে সেই সুযোগ দিতে হবে।

লেখক: অ্যাডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট।

বাংলাদেশ সময়: ২০০৫ ঘণ্টা, মার্চ ১৮, ২০২৩
কেআই/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।