ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আইন ও আদালত

‘উন্নত জীবনের আশায় ঢাকায় এসে আজ আমি আসামি’

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৩৫ ঘণ্টা, মার্চ ২০, ২০২৩
‘উন্নত জীবনের আশায় ঢাকায় এসে আজ আমি আসামি’ প্রতীকী ছবি

ঢাকা: ‘লালমনিরহাট সরকারি কলেজ থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে অনার্স ও মাস্টার্স করি। তারপর উন্নত জীবন নিয়ে ভালো করে বাঁচার আশায় ঢাকায় এসে জয়যাত্রা টেলিভিশনে চাকুরি নেই।

এই স্বপ্ন দেখিয়ে আব্দুর রহমান তুহিন আমাকে ঢাকায় নিয়ে আসেন। আর সেই তুহিনের মামলায়ই আসামি হয়ে আজ আমি কাঠগড়ায়। ’ 

কথাগুলো বলছিলেন আইপি টিভি জয়যাত্রার স্টাফ রিপোর্টার মাহফুজুর রহমান। একথা বলে কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে অঝোরে কাঁদতে থাকেন তিনি।  

সাংবাদিক হিসেবে চাকরি দেওয়ার কথা বলে টাকা নিয়ে প্রতারণার দায়ে প্রতিষ্ঠানটির মালিক ও আ.লীগের মহিলা বিষয়ক উপ-কমিটি থেকে বহিষ্কৃত নেত্রীহেলেনা জাহাঙ্গীরের সঙ্গে আরও যে চারজনের দুই বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয় তাদের একজন এই মাহফুজুর রহমান।  

ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তোফাজ্জল হোসেন এই ৫ জনকে কারাদণ্ডের পাশাপাশি দুই হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও দুই মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন।  

হেলেনা জাহাঙ্গীর ও জয়যাত্রা টেলিভিশনের মহাব্যবস্থাপক হাজেরা খাতুন রায়ের সময় উপস্থিত না থাকায় তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়। জামিনে থাকা বাকি তিনজনকে সাজা পরোয়ানা দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়।

রায়ের আগে কাঠগড়ায় থাকা অপর দুই আসামি জয়যাত্রা টিভির সমন্বয়ক সানাউল্যাহ নুরী ও প্রধান বার্তা সম্পাদক কামরুজ্জামান আরিফের বক্তব্যও শুনেন বিচারক।  

সানাউল্যাহ নুরী বলেন, আমি বিএ পাশ করেছি। বর্তমানে একটি জাতীয় পত্রিকায় গাজীপুরে স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে কাজ করছি।  

অপরদিকে কামরুজ্জামান আরিফ বলেন, আমি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশুনা শেষ করেছি। এখন এসএ টিভিতে কাজ করছি। আগে আরও চারটি টেলিভিশনে কাজ করেছি। আমি জয়যাত্রা টিভির চিফ নিউজ এডিটর ছিলাম। আমার কাজ ছিল নিউজ দেখা। আমি কোনো নিয়োগ বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত ছিলাম না।  

এরপর বিচারক রায় দেন। রায়ে তিনি বলেন, আসামিরা জয়যাত্রা নামক আইপি টিভিতে কাজ করেছেন, এ ব্যাপারে কেউ দ্বিমত করেননি। তারা চাকরি দেওয়ার কথা বলে নিয়োগপত্র ছাড়াই সাংবাদিক নিয়োগ দিতেন। এর মাধ্যমে তাদের বিরুদ্ধে একই উদ্দেশ্যে পরস্পর যোগসাজশে প্রতারণার অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে। তাই আসামিদের দুই বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং দুই হাজার টাকা করে জরিমানা অনাদায়ে আরও দুই মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হলো।  

গত ১৪ মার্চ রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে একই আদালত রায়ের জন্য এ দিন ঠিক করেন।

জয়যাত্রা টিভির ভোলা জেলা প্রতিনিধি আবদুর রহমান তুহিন ২০২১ সালের ২ আগস্ট পল্লবী থানায় হেলেনা জাহাঙ্গীরসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে মামলাটি করেন।

মামলায় অভিযোগ করা হয়, জয়যাত্রা টিভির স্থানীয় সংবাদদাতা হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার জন্য ভোলা জেলার আবদুর রহমান তুহিনের কাছ থেকে ৫৪ হাজার টাকা নেন হেলেনা জাহাঙ্গীর। প্রতিবেদক হিসেবে রহমান কয়েক মাস কাজ করলেও কোনো বেতন পাননি। অন্যদিকে তার কাছ থেকে প্রতিমাসে তিন হাজার টাকা নেয় টেলিভিশন কর্তৃপক্ষ।

২০২১ সালের ২১ নভেম্বর ঢাকার সিএমএম আদালতে হেলেনা জাহাঙ্গীরসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) পরিদর্শক শাহিনুর ইসলাম।  

২০২২ সালের ১৮ এপ্রিল অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত। মামলার বিচার চলাকালে আদালত ১৩ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ করেন।

বাংলাদেশ সময়: ২১২৫ ঘণ্টা, মার্চ ২০, ২০২৩
কেআই/এসএএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।