ঢাকা, মঙ্গলবার, ৯ পৌষ ১৪৩১, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

আইন ও আদালত

ভুয়া পরোয়ানায় জেল খাটলেন নিরপরাধ আবদুল কাদের!

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৫৭ ঘণ্টা, মার্চ ২২, ২০২৩
ভুয়া পরোয়ানায় জেল খাটলেন নিরপরাধ আবদুল কাদের!

লক্ষ্মীপুর: কোনো মামলার আসামি না হয়েও দুটি ভুয়া পরোয়ানায় গ্রেফতার হয়ে চারদিন জেল খাটতে হয়েছে আবদুল কাদের ওরফে কালু (৩৫) নামে নিরপরাধ এক ব্যক্তিকে।  

মঙ্গলবার (২১ মার্চ) সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ভিক্টোরিয়া চাকমা মামলার কাগজপত্র পর্যালোচনা করে তাকে কারাগার থেকে মুক্তির ছাড়পত্র দেন।

ওই দিন বিকেলে তিনি জেলা কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন।  

ভুক্তভোগী আবদুল কাদের কালু লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার কাজিরচর গ্রামের নুরুল হকের ছেলে। তিনি একজন পান বিক্রেতা।  

জানা গেছে, গত শুক্রবার (১৭ মার্চ) দুপুরে রায়পুরের মিতালি বাজার থেকে আবদুল কাদেরকে গ্রেফতার করা হয়। রায়পুর থানার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) আফজাল তাকে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে যান। গ্রেফতারের কারণ জানতে চাইলে ওই পুলিশ কর্মকর্তা আবদুল কাদেরের স্বজনদের জানান, বরিশালের কোতোয়ালি থানার দুটি মাদক মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানাভুক্ত আসামি আবদুল কাদের। তার নামে আদালতের গ্রেফতারি পরোয়ানা রয়েছে। মামলা দুটি হলো- জিআর নম্বর ৯২৫/২০২১ (চার কেজি গাঁজা) এবং ৯২৬/২০২১ (১৫ গ্রাম গাঁজা)।

গ্রেফতারের পর ওই দিন বিকেলে রায়পুর থানা পুলিশ আবদুল কাদেরকে লক্ষ্মীপুর আদালতে সোপর্দ করলে আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

এছাড়া গ্রেফতারকৃত আবদুল কাদেরের ছবি অন্য আসামিদের ছবির সঙ্গে রায়পুর থানা পুলিশের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে পোস্ট করা হয়।  

পরে ওই মামলার কাগজপত্র নিয়ে আদালতে আসেন আবদুল কাদেরের বাবা ও স্ত্রী। তারা অ্যাডভোকেটের মাধ্যমে জানতে পারেন, গ্রেফতারি পরোয়ানায় নাম আছে, কিন্তু মূল দুটি মামলার এজাহারে তার নাম নেই।

তারা আরও জানতে পারেন, দুই মামলার বাদী বরিশালের কোতোয়ালি থানার পুলিশ কর্মকর্তা ফিরোজ আলম ও মেহেদী হাসান। এর মধ্যে এক মামলায় আসামি চারজন, অপর মামলায় আসামি দুজন। তারা হলেন- মো. নয়ন ও খাদিজা আক্তার জুথি এবং সোহাগ মোল্লা, নাঈম হাওলাদার, টিটু বেপারী ও মো. রুবেল। জিআর ৯২৬ নম্বর মামলাটি গত বছর নিষ্পত্তি হয়ে গেছে। ওই মামলার দুজন আসামিকে প্রবেশন দেন আদালত।  

আবদুল কাদেরের আইনজীবী আবদুল আহাদ শাকিল পাটোয়ারী বাংলানিউজকে বলেন, আবদুল কাদেরের কৃষক বাবা নুরুল হক ও স্ত্রী নয়ন বেগম লক্ষ্মীপুর আদালতে এসে পরোয়ানার ফটোকপি নিয়ে আমার কাছে আসেন। তখন আমি জেলা জজ আদালতে মামলা দুটির বিষয়ে খোঁজ নিই।  

তিনি বলেন, আমরা মামলা নম্বর নিয়ে বরিশাল কোতোয়ালি থানায় খবর নিই। ২০২১ সালের মামলা হওয়ায় থানা থেকে তেমন কিছু জানাতে পারেনি। মামলা নম্বর নিয়ে আমি নিজেই বরিশাল আদালতের আইনজীবী বন্ধুর মাধ্যমে খোঁজ নিই। মামলার নথি দেখি। মামলা দুটি মূলত মাদক মামলা। একটি মামলার রায় হয়ে গেছে। অন্যটি বিচারাধীন। দুটি মাদক মামলায় আবদুল কাদের কালু নামের কোনো আসামি নেই। তখন বিষয়টি আমরা আদালতে আবেদন করে উত্থাপন করি। এরপর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলি অঞ্চল রায়পুরের বিচারক ভিক্টোরিয়া চাকমা মামলার কাগজপত্র পর্যালোচনা করে মঙ্গলবার (২১ মার্চ) আবদুল কাদের কালুকে মামলার দায় থেকে ছাড়পত্র দেন। এটি ভুয়া পরোয়ানা ছিল। গ্রেফতারি পরোয়ানায় তার নাম দিয়ে ভুয়া পরোয়ানা তৈরি করে নাম-ঠিকানা লিখে রায়পুর থানায় পাঠানো হয়। সেই অনুযায়ী তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

আইনজীবী মো. আবদুল আহাদ শাকিল পাটোয়ারী দাবি করেন, দেশের আদালতগুলোতে এক শ্রেণির অসাধু দালাল চক্র এমন জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত। কখনো কখনো আইন পেশায় নিয়োজিত ব্যক্তিরাও এর সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। এটা প্রতিরোধ করা দরকার।

ভুক্তভোগী আবদুল কাদের কালুর বাবা নুরুল হক বলেন, বাইরে আমাদের কোনো শত্রু নেই। আমার ছেলে মিতালি বাজারে পানের দোকান দিয়ে কোনো রকম সংসার চালায়। কে বা কারা কেন কীভাবে তার নামে ভুয়া পরোয়ানা তৈরি করেছে, তা বলতে পারছি না। অপরাধ না করেও আমার নিরীহ ছেলে চারদিন জেল খেটেছে। আমি কার কাছে এর বিচার দেব?

জানতে চাইলে রায়পুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শিপন বড়ুয়া বাংলানিউজকে বলেন, গ্রেফতারি পরোয়ানা ভুয়া কিনা সেটা আমাদের জানার কথা নয়। আদালত থেকে থানায় ওয়ারেন্টের কপি আসে, সেই হিসেবে আমরা আসামি গ্রেফতার করি। ওয়ারেন্টের কপি অনুসারে আমরা আবদুল কাদরকে গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করেছিলাম। সেটা যে ভুয়া ছিল, তা জানতাম না।  

বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৬ ঘণ্টা, মার্চ ২২, ২০২৩
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।