ঢাকা, শনিবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আইন ও আদালত

কক্সবাজার জেলা জজকে ক্ষমা করে দিয়েছেন হাইকোর্ট

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৪৬ ঘণ্টা, জুলাই ২৭, ২০২৩
কক্সবাজার জেলা জজকে ক্ষমা করে দিয়েছেন হাইকোর্ট

ঢাকা: এক মামলায় আসামিদের বিধিবিধান অনুসরণ না করে জামিন দেওয়ার ঘটনায় নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়ার পর কক্সবাজারের জেলা ও দায়রা জজকে ক্ষমা করে দিয়েছেন হাইকোর্ট।

যেই মামলায় নয় আসামিকে জামিন দেওয়ার বিষয় নিয়ে জেলা জজকে তলব করা হয়েছিল সেই জামিনাদেশ কেন বাতিল করা হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন উচ্চ আদালত।

বৃহস্পতিবার (২৭ জুলাই) শুনানি শেষে বিচারপতি মো. হাবিবুল গনি ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

আদালতে জেলা জজ মোহাম্মদ ইসমাইলের আইনজীবী ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এএফ হাসান আরিফ। আবেদনের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী এ বি এম আলতাফ হোসেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত তালুকদার।

আইনজীবী এএফ হাসান আরিফ জানান, জামিনের বিষয়ে রুল হয়েছে। এখন নিয়ম অনুসারে দুই পক্ষ শুনানি করবেন। আর জেলা জজের নিঃশর্ত ক্ষমা গ্রহণ করেছেন। আরও কিছু কথা বলেছেন। তাড়াহুড়ো (নয় আসামির জামিন আবেদন শুনানির ক্ষেত্রে) করে করেছেন। একই জিনিস পরের দিন (শুনানি) করলে বিতর্কিত হতো না। উনাকে সতর্ক করে দিয়েছেন।    

পরে জেলা জজের পক্ষের আরেক আইনজীবী জানান, যেহেতু তিনি ক্ষমা চেয়েছেন সেহেতু ওনাকে ক্ষমা করে দিয়েছেন। উনি একজন সিনিয়র জেলা জজ। ভুল হয়েছে, ক্ষমা করে দিয়েছেন।

আদালত থেকে বেরিয়ে জেলা জজ বলেন, স্যারদের (হাইকোর্ট বেঞ্চ) কথা হলো একদিন পরে শুনলে (৯ আসামির জামিন আবেদন) ভালো হতো।

এক প্রশ্নে তিনি বলেন, এটাতে প্রসিডিউরাল কিছুতো ভুল আছে। এজন্যই তো ক্ষমা চেয়েছি।  

এর আগে গত ১৯ ও ২০ জুলাই জামিন দেওয়ার বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে তলবে হাজির হওয়ার পর কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইলকে ভর্ৎসনা করেছেন উচ্চ আদালত।

ওইদিন আদালত বলেছেন, আপনি একজন সিনিয়র জেলা জজ। দীর্ঘদিন বিচারকাজ করেছেন। আপনি আদালতের আদেশ টেম্পারিং করেছেন। এতে আপনার বুক কাঁপল না? টেম্পারিং করে আপনি ভুল করেননি। আপনি জেনে বুঝে ক্রাইম করেছেন। একটি অন্যায় ঢাকতে গিয়ে আরও কয়েকটি অন্যায় করেছেন।

শুনানির এক পর্যায়ে মোহাম্মদ ইসমাইলের দেওয়া জামিন আদেশ নিয়ে হাইকোর্ট বলেন, আদেশে কিছু পরিবর্তন করতে হলে সব পক্ষকে ডেকে তা করতে হয়। কিন্তু হাইকোর্টে আসার আগে তিনি তার আদেশ টেম্পারিং করেছেন।

এর জন্য ক্ষমা চেয়ে বিচারক মোহাম্মদ ইসমাইল বলেন, ‘আদেশে দুটি শব্দ ভুল হয়েছে…। এর জন্য মাফ চাই। ’

হাইকোর্ট আরও বলেন, ‘আপনি খণ্ডন (আদেশের অনধিকার পরিবর্তনের বিষয়ে) করতে চাচ্ছেন? আপনার মধ্যে তো কোনো অনুতাপ দেখি না। আপনি বাধ্য হয়ে (ক্ষমা চাওয়ার কথা) বলছেন। অনুশোচনা ভেতর থেকে আসতে হয়। কিন্তু আপনার তা ভেতর থেকে আসেনি। ’

জামিন দেওয়ার বিষয়ে ব্যাখ্যা জানাতে গত ২১ জুন কক্সবাজারের জেলা ও দায়রা জজকে তলব করেছিলেন হাইকোর্ট।

তলবে হাজির হওয়ার পর তিনি নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়েছেন।

এর আগে জজ আদালতে দেওয়া ওই জামিনের বিরুদ্ধে আবেদনটি করেছিলেন মামলার বাদী রামু উপজেলার দক্ষিণ মিঠাছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান খোদেস্তা বেগম (রিনা)।

আবেদনকারী থেকে জানা যায়, জমির দখল নিয়ে ২৮ ফেব্রুয়ারি ভয়ভীতি প্রদর্শন ও আইন-শৃঙ্খলা বিঘ্ন ঘটানোর অভিযোগে মিঠাছড়ি ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইউনুছ ভুট্টোসহ নয়জনের বিরুদ্ধে খোদেস্তা বেগম কক্সবাজারের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালত-১ ও আইন-শৃঙ্খলা বিঘ্নকারী দ্রুত বিচার আদালতে নালিশি মামলা করেন।

এ মামলায় আসামিরা আগাম জামিন চেয়ে আবেদন করলে ১১ এপ্রিল হাইকোর্ট তাদের ছয় সপ্তাহের মধ্যে কক্সবাজারের মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেন।

এ নির্দেশ অনুসারে ২১ মে আসামিরা আত্মসমর্পণ করে জামিন চাইলে সংশ্লিষ্ট আদালত নয় আসামিকে জামিন না দিয়ে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

এর বিরুদ্ধে ওইদিনই আসামিরা কক্সবাজারের জেলা ও দায়রা জজ আদালতে জামিন চেয়ে আবেদন করলে আদালত তাদের জামিন দেন। জেলা ও দায়রা জজ আদালতের এ আদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আবেদন (ফৌজদারি রিভিশন) করেন খোদেস্তা।

আবেদনের পর আইনজীবী এ বি এম আলতাফ হোসেন জানিয়েছিলেন, জেলা জজ আদালতে জামিন আবেদনের সঙ্গে হাকিম আদালতের জামিন নামঞ্জুরের আদেশসহ অন্যান্য কাগজপত্রের প্রত্যয়িত অনুলিপি বা প্রত্যয়িত অনুলিপির ফটোকপি দাখিল করা হয়নি। তারপরও জেলা ও দায়রা জজ আদালত তাদের জামিন দিয়েছেন। হাজতবাসের মেয়াদসহ সার্বিক বিবেচনায় আসামিদের জামিন মঞ্জুর করা হয় বলে আদেশে আদেশে উল্লেখ করেন জেলা জজ। অথচ নয় আসামি এক মুহূর্তও হাজতে ছিলেন না।

শুনানি শেষে ২১ জুন এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে জেলা জজকে তলব করেন উচ্চ আদালত।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৪৪ ঘণ্টা, জুলাই ২৭, ২০২৩
ইএস/আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।