ঢাকা: জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে বিবাহিত ও অন্তঃসত্ত্বা ছাত্রীদের আসন বরাদ্দ বন্ধের নির্দেশনা প্রত্যাহার চেয়ে লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়েছে।
বুধবার (২৭ সেপ্টেম্বর) সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. সোলায়মান (তুষার) বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যসহ চারজনকে এই নোটিশ পাঠান।
নোটিশ প্রাপ্তির পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে নারী শিক্ষার্থীদের প্রতি বৈষম্যমূলক বিধানটি বাতিল করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থার আহ্বান জানানো হয়। অন্যথায় উচ্চ আদালতের শরণাপন্ন হওয়ার কথা উল্লেখ করেন নোটিশদাতা।
নোটিশে তিনি উল্লেখ করেন, সম্প্রতি গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের মাধ্যমে জানতে পারি, বিবাহিত ও অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার কারণে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে ছাত্রীরা আবাসিক সিট পাবেন না বলে নোটিশ দেওয়া হয়েছে। হলে “আবাসিকতা লাভ ও বসবাসের শর্তাবলী এবং আচরণ ও শৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিধিমালা ২০২১” এর ১৭ নং ধারা অনুযায়ী বিবাহিত ও অন্তঃসত্ত্বা ছাত্রীরা আবাসিক সিট পাবেন না, বিধায় তারা অতিদ্রুত হলের সিট বা আসন ছেড়ে দেবেন। অন্যথায়, প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে মর্মে গত ২৫ সেপ্টেম্বর বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে নোটিশ দেওয়া হয়েছে।
এই বিধানের ফলে কার্যত বিবাহিত ও অন্তঃসত্ত্বা ছাত্রীরা হলের আবাসিক সুবিধা নিয়ে উচ্চ শিক্ষা অর্জনের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবেন। বিষয়টি নিয়ে বর্তমানে ছাত্রীদের মধ্যে মারাত্মক অসন্তোষ এবং ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। দেশের একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন বৈষম্যমূলক বিধান থাকার বিষয়টি নিয়ে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক গণমাধ্যমে গুরুত্বের সঙ্গে সংবাদ প্রকাশিত হচ্ছে। বাংলাদেশের সংবিধানের ২৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী- সব নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান এবং ২৮ (১) (২) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী কেবল ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ, নারী-পুরুষভেদ বা জন্মস্থানের কারণে কোনো নাগরিকের প্রতি রাষ্ট্র বৈষম্য প্রদর্শন করবে না। রাষ্ট্র ও গণজীবনের সর্বস্তরে নারী-পুরুষ সমান অধিকার লাভ করবেন।
বিবাহিত ও অন্তঃসত্ত্বা ছাত্রীদের জন্য এমন নিয়ম নারীদের উচ্চ শিক্ষা অর্জনের পথে অন্তরায় এবং বাংলাদেশের সংবিধানের ২৭ ও ২৮ অনুচ্ছেদের সঙ্গে সম্পূর্ণ সাংঘর্ষিক।
গেল ২৫ সেপ্টেম্বর হল প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. দীপিকা রাণী সরকারের সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে বিবাহিত ও অন্তঃসত্ত্বা ছাত্রীদের আসন বরাদ্দ বন্ধ সংক্রান্ত নির্দেশনা দেওয়া হয়। তিনি বলেন, হলের বিধিমালার ১৭ নম্বর ধারা অনুযায়ী কোনো বিবাহিত ছাত্রী হলে সিটের আবেদন করতে পারবেন না। আমরা বিধি অনুযায়ী এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
তিনি আরও বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক ছাত্রী আছেন, যাদের বাবা নেই, মা নেই। তারা হলের সিটের জন্য কান্নাকাটি করেন। তাদেরই হলে সিট প্রয়োজন। সিট পেলে তাদের পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ায় সুবিধা হবে। কিন্তু অনেক বিবাহিত মেয়ে আছেন, যাদের পরিবারের সামর্থ্য আছে খরচ বহন করার। প্রয়োজনে তারা আমাদের দরখাস্ত দিক যে, হল ছেড়ে বাসা নিতে এক মাস বা দুই মাসের সময় প্রয়োজন। আমরা তা কনসিডার করব।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৩১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২৩
কেআই/আরএইচ