নাটোর: নাটোরে যৌতুকের কারণে স্ত্রীকে হত্যার দায়ে স্বামী মো. শরিফুল ইসলামকে (৩৫) মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
সোমবার (৩০ অক্টোবর) দুপুরে নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনালের বিচারক (জেলা ও দায়রা জজ) মুহাম্মদ আব্দুর রহিম এই আদেশ দেন। এসময় আসামি আদালতে উপস্থিত ছিলেন। এসময় অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় মোছা. সাহারা বেগম, মো. জহুরুল ইসলাম ওরফে জনি ও মোছা. সামিরুন আক্তার ওরফে সুমাকে খালাস দিয়েছেন আদালত।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত শরিফুল ইসলাম সদর উপজেলার করোটা গ্রামের মো. সামসুল হকের ছেলে।
নাটোর নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনালের স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটর (বিশেষ পিপি) অ্যাডভোকেট আনিসুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বাংলানিউজকে জানান, ২০১৪ সালের ১৮ নভেম্বর নাটোর সদর উপজেলার গোয়ালডাঙ্গা গ্রামের জয়নাল আবেদীনের মেয়ে হাসনা হেনার সঙ্গে শরিফুল ইসলামের বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে শরিফুল যৌতুকের জন্য তার স্ত্রী হাসনা হেনাকে নির্যাতন করতেন। একপর্যায়ে ২০১৫ সালের ৫ ডিসেম্বর তাদের মধ্যে বিচ্ছেদ হয়।
পরে যৌতুকের টাকা দাবি বা এনিয়ে হাসনা হেনাকে কোনো নির্যাতন করা হবে না মর্মে অঙ্গীকার করলে উভয় পরিবারের সম্মতিতে ফের ২০১৬ সালের ১৮ জানুয়ারি তাদের দুজনের আবার রেজিস্ট্রি কাবিনমুলে বিয়ে হয়। এই বিয়ের পর আবারও যৌতুকের জন্য হাসনা হেনার ওপর নির্যাতন শুরু করেন শরিফুল।
এ অবস্থায় মেয়ের সুখ, শান্তির কথা চিন্তা করে শরিফুলকে যৌতুক বাবদ এক লাখ টাকা দেন বাবা জয়নাল আবেদিন। কিন্তু এরপরও তিনি মাঝে মধ্যে নির্যাতন করেন। পরে আরও দুই লাখ টাকা যৌতুক দাবি করে হাসনা হেনার কাছে।
তিনি আরও জানান, শরিফুল ইসলাম তার মা সাহারা বেগম, দুলাভাই জহুরুল ইসলাম ওরফে জনি ও তার বোন সামিরুন আক্তার সুমা স্ত্রী হাসনা হেনার ওপর নির্যাতন চালাতে থাকে। ২০১৭ সালের ১ সেপ্টেম্বর রাতে নির্যাতনের একপর্যায়ে হাসনা হেনাকে শ্বাসরোধ করে হত্যার পর মুখে বিষ ঢেলে মরদেহ ফেলে রেখে পালিয়ে যান তারা।
পরে খবর পেয়ে হাসনার মা মর্জিনা বেগমসহ পরিবারের অন্য সদস্যরা এসে মেয়েকে মৃত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন। খবর পেয়ে পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়।
এ ঘটনায় হাসনা হেনার মা মর্জিনা বেগম বাদি হয়ে শরিফুল ইসলাম, তার মা সাহারা বেগম, দুলাভাই জহুরুল ইসলাম ওনফে জনি ও তার বোন সামিরুন আক্তার সুমাকে অভিযুক্ত করে নাটোর সদর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। পরে মামলার তদন্ত শেষে পুলিশ আদালতে চার্জশিট জমা দেন।
এ মামলার দীর্ঘ শুনানি ও সাক্ষ্য প্রমাণ শেষে বিচারক আজ আসামি শরিফুল ইসলামকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশসহ ৩০ হাজার টাকা জরিমানার আদেশ দেন। অপর তিন আসামির বিরুদ্ধে অপরাধ প্রমাণিত না হওয়ায় তাদের খালাস দেন বিচারক।
বাংলাদেশ সময়: ১৬২৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩০, ২০২৩
এসএম