ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আইন ও আদালত

৭ বছর বঞ্চনার পর অবশেষে তারা সহকারী জজ

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫০৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৮, ২০২৪
৭ বছর বঞ্চনার পর অবশেষে তারা সহকারী জজ

ঢাকা: অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে সহকারী জজ পদে আসীন হতে প্রয়োজনীয় সব পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছিলেন তারা। হয়েছিলেন সুপারিশপ্রাপ্তও।

কিন্তু ভেরিফিকেশনের নামে নেগেটিভ রিপোর্ট দেওয়ায় আটকে যায় তাদের সব প্রচেষ্টা। বঞ্চনা আর হতাশা নিয়ে কেটে যায় ৭ বছর।

কিন্তু নিয়তির লিখন আর হয়নি খণ্ডন। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বিচারক পদে আসীন হওয়ার জন্য দরজা খুলে যায়। ২০১৫ সালে জারি করা বিজ্ঞপ্তি অনুসারে ১০ বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস (বিজেএস) পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ভেরিফিকেশনের নামে বঞ্চিত পাঁচ প্রার্থীর বিষয়ে গত ২৫ সেপ্টেম্বর প্রজ্ঞাপন জারি করেছে আইন মন্ত্রণালয়। আগামী ১ অক্টোবর তাদের নির্ধারিত কর্মস্থলে সহকারী জজ হিসেবে যোগদানের জন্য বলা হয়েছে।

এ পাঁচজন হলেন- লক্ষ্মীপুরের আহসান হাবীব; তাকে সহকারী জজ হিসেবে বরিশালে পদায়ন করা হয়েছে। চট্টগ্রামের এস এম ইয়াসীর আরাফাত ও মো.আমিনুল হক ছিদ্দিকী; তাদের কুষ্টিয়া ও হবিগঞ্জে পদায়ন করা হয়েছে; ঢাকার আবদুল্লাহ আল হাসিবকে যশোর ও চাঁদপুরের আবদুল্লাহ আল নোমানকে সিরাজগঞ্জের সহকারী জজ হিসেবে পদায়ন করা হয়েছে।

ঘটনার পূর্বাপর
২০১৫ সালে ১০ম বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষার জন্য বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। সে অনুসারে পরীক্ষা শেষে ২০১৭ সালের ৩ এপ্রিল তাদের নিয়োগের জন্য সুপারিশ করা হয়। এ বিষয়ে ২০১৮ সালে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। কিন্তু ভেরিফিকেশন রিপোর্ট নেগেটিভ আসায় তাদের নামে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়নি।

পরবর্তীতে এ পাঁচজন উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হন। ২০১৯ সালে হাইকোর্টে রিট করেন তারা। ওই রিটে হাইকোর্ট রুল জারি করেন। সেই রুল যথাযথ ঘোষণা করে ২০২২ সালে রায় দেন হাইকোর্ট। কিন্তু সেই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে যায় রাষ্ট্রপক্ষ।

পাঁচজনের একজন যা বললেন
প্রজ্ঞাপন জারি হওয়ার পর পাঁচজনের একজন নিজের ফেসবুক আইডিতে নিজের মতামত তুলে ধরেন। তিনি তার লেখনীতে উল্লেখ করেন, ‘২০১৫ সালের বিজ্ঞপ্তি, ২০১৭ সালে সুপারিশ প্রাপ্তি, আর ২০১৮ সালে প্রজ্ঞাপন। সংক্ষেপে ১০ম বিজেএসের ইতিহাস। কিন্তু আমরা কিছু সুপারিশপ্রাপ্তের কপালে ২০১৮ সালে প্রজ্ঞাপন জোটেনি... কারণ বলতে গেলে অনেক; এলাকার কিছু কুচক্রি লোকের হিংসা, শাসক গোষ্ঠীর নেতিবাচক ভূমিকা, দশম বিজেএসে আমার সাথেই সুপারিশপ্রাপ্ত সারথি, বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধু-সিনিয়র-জুনিয়রদের অপ্রত্যাশিত নেতিবাচক হস্তক্ষেপ... সব মিলিয়ে আমার রিপোর্ট নেগেটিভ।

সেই কঠিন সময়ে আমার অনেক শুভাকাঙ্ক্ষী পাশে ছিলেন, চেষ্টা করেছেন সহযোগিতা করার। আল্লাহ তাদের উত্তম প্রতিদান দান করুন। আর যারা অপচেষ্টা চালিয়েছেন তারাও প্রায় ৭ বছর সফল ছিলেন মাশাআল্লাহ! আপনাদের আল্লাহ হেদায়েত দান করুন। আপনাদের প্রতি এখন আমার আর কোনো ক্ষোভ নাই আলহামদুলিল্লাহ। আপনাদের এরকম আচরণের পিছনে আমার কোনো অপরাধ বা দোষ থাকলে নিজগুণে ক্ষমা করে দিবেন। আমিও আপনাদের ক্ষমা করে দিলাম। আল্লাহ আমার এই পথচলা সহজ করে দিন। এতদিন পর যাদের দোয়ার উসিলায় এমন একটা সুযোগ আল্লাহ করে দিয়েছেন তাদের আল্লাহ উত্তম প্রতিদান দান করুন। ’

আইনজীবীর বক্তব্য
আইনজীবী ফয়েজউল্লাহ ফয়েজ বলেন, তারা দশম বিজেএস পরীক্ষায় ২০১৭ সালে সুপারিশপ্রাপ্ত। তাদের পক্ষে হাইকোর্টে রিট পিটিশনের আইনজীবী ছিলাম আমি। তাদের মধ্যে একজন আমার বন্ধু, ভর্তি পরীক্ষায় ফার্স্ট হয়েছিলেন এবং অনার্স মাস্টার্স দুটোতেই ফার্স্ট ক্লাস পেয়েছেন, ব্যাচের সেরা ৫ জনের একজন অথচ তাকে বঞ্চিত রেখেছে দীর্ঘদিন।

হাইকোর্টের রায় হয়েছে যে সালে, সেই সালে কিন্তু তার বিরুদ্ধে ফ্যাসিস্ট সরকার লিভ টু আপিল করে এবং দীর্ঘদিনের প্রেসিডেন্ট ভেঙে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি লিভ দিয়ে দেন। অথচ তার আগে আপিল বিভাগের এ ধরনের যত লিভ পিটিশন হয়েছে তা সব খারিজ হয়েছে।

আর ইয়াসির আরাফাত ইতোমধ্যেই অ্যাডমিন ক্যাডারে জয়েন করেছেন। বাকি চারজনের সবাই যোগদান করবেন কিনা শিওর না। তাদের সাথে যে অবিচার আওয়ামী সরকার এবং আপিল বিভাগ করেছে তার বিচার হওয়া দরকার। আর তাদের জ্যেষ্ঠতা দেওয়ার কথা প্রজ্ঞাপনে আছে। তবে সে অনুসারে সুযোগ সুবিধা না পেলে তো তারা আবার বৈষম্যের শিকার হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৫০৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৮, ২০২৪
ইএস/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।