ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আইন ও আদালত

সাবেক ডিএমপি কমিশনারসহ ১৭ পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে পরোয়ানা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪১৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৭, ২০২৪
সাবেক ডিএমপি কমিশনারসহ ১৭ পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে পরোয়ানা হাবিবুর রহমান হাবিব

ঢাকা: জুলাই-আগস্টে গণহত্যার অভিযোগে দায়ের করা মামলায় ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান হাবিবসহ বাহিনীর সাবেক ১৭ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

রোববার (২৭ অক্টোবর) চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল এ আদেশ দেন।

আদেশের বিষয়টি জানিয়েছেন ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মো. তাজুল ইসলাম। তিনি জানান, আগামী ২০ নভেম্বর আসামিদের আদালতে হাজির করার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

পুলিশ কর্মকর্তাদের পাশাপাশি জুলাই-আগস্টের গণহত্যার মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রীর দুই উপদেষ্টা, সাবেক ১০ মন্ত্রী, এক সেনা কর্মকর্তা ও সাবেক এক সচিবকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাজির করার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

চিফ প্রসিকিউটর মো. তাজুল ইসলাম বলেন, আমরা আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে তিনটি অ্যাপ্লিকেশন দিয়েছি। এর একটা ছিল আগে যাদের বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট ইস্যু হয়েছিল এবং যারা ওয়ারেন্ট ইস্যুর আগে গ্রেপ্তার হয়েছিল তাদের গ্রেপ্তার দেখানোর জন্য দুটি আবেদন করা হয়েছে। সেই অ্যাপ্লিকেশনে মোট ২০ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন মঞ্জুর করা হয়েছে এবং তাদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।

তিনি বলেন, যারা গ্রেপ্তার হয়েছেন তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেন- সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) ফারুক খান, ড. দীপু মনি, রাশেদ খান মেনন, হাসানুল হক ইনু, জুনাইদ আহমেদ পলক, ডক্টর তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, সালমান এফ রহমান, সাবেক কৃষি মন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক, শাজাহান খান, কামাল আহমেদ মজুমদার, গোলাম দস্তগীর গাজী, সাবেক বিচারপতি এইচ এম শামসুদ্দীন চৌধুরী মানিক, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব জাহাঙ্গীর আলম।

একটি পিটিশনের মাধ্যমে যে ১৪ জন ইতোমধ্যে গ্রেপ্তার হয়েছেন তাদের গণহত্যার মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করা হয়েছে। আদালত আবেদন মঞ্জুর করে আগামী ১৮ নভেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে তাদের উপস্থিত করার নির্দেশ দিয়েছেন।

চিফ প্রসিকিউটর আরও বলেন, দ্বিতীয় আরও একটি পিটিশনে আমরা ৬ জনের বিরুদ্ধে শোন অ্যারেস্ট দেখানোর জন্য আবেদন করেছিলাম। তারা হচ্ছেন- সাবেক আইজিপি আবদুল্লাহ আল মামুন, বরখাস্তকৃত মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসান, আব্দুল্লাহ আল কাফি, আরাফাত হোসেন, আবুল হাসান ও মাজহারুল ইসলাম। তারা বিভিন্ন মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে জেলে আছেন। তাদের বিরুদ্ধে যেহেতু আমরা সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেয়েছি, তাই তাদেরও এই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করা হয়েছিল। তাদের গ্রেপ্তার দেখিয়ে আগামী ২০ নভেম্বর এ আদালতে উপস্থিত করার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।

মো. তাজুল ইসলাম বলেন, তৃতীয় যে আবেদনটি আমরা করেছি সেখানে ১৭ জনের বিরুদ্ধে নতুন করে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করার জন্য আবেদন করেছিলাম। আদালত সে আবেদনও মঞ্জুর করে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন। সেই ১৭ জনের সবার নাম আমরা বলতে পারছি না নিরাপত্তাজনিত কারণে। এ ছাড়া যাতে এই আদেশ পৌঁছানোর আগে তারা পালিয়ে যেতে না পারেন। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য নাম ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার হাবিবুর রহমান। তিনিসহ বাকি ১৬ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা চেয়েছি; আদালত তা জারি করেছেন। আদালত তাদের আগামী ২০ নভেম্বর উপস্থিত করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন।

এ আইনজীবী আরও বলেন, আমরা জনগণের কাছে মেসেজ দিতে চাই, জুলাইয়ের ঘটনায় যে সমস্ত পুলিশ অফিসার সরাসরি যুক্ত ছিল এবং যাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে, শুধুমাত্র তাদেরকে গ্রেপ্তার করা বা দেখানোর জন্য আবেদন করছি। অসাধারণ যে সকল পুলিশ কর্মকর্তা আছে যারা গণহত্যার সঙ্গে জড়িত ছিল না, আর যারা ক্রাইম অ্যাগেইনস্ট হিউমিনিটির সঙ্গে যুক্ত ছিল না তাদের ভয়-ভীতির কোনো কারণ নেই। কারণ, আমরা কোনো নির্দোষ ব্যক্তির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা চাইব না। শুধু মাত্র যাদের বিরুদ্ধে প্রমাণ পাচ্ছি তাদের বিষয়ে চাইছি। ঢালাওভাবে কারও বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা চাওয়া হবে না।

তিনি আরও বলেন, যেসব পুলিশ কর্মকর্তা গণহত্যার সঙ্গে যুক্ত ছিল তাদের নাম আমরা ধারাবাহিকভাবে সবার সামনে নিয়ে আসবো। হয়তো এখানে কিছুটা সময় লাগবে। কিন্তু কোনো দোষীকে বাদ দেওয়া হবে না। অথবা কোনোভাবে প্রভাবিত হয়ে, অপরাধ করেছে এমন কোনো ব্যক্তিকে ছাড় দেওয়া হবে না।

তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে গণহত্যার সকল মামলার বাদী হবেন চিফ প্রসিকিউটর। আমাদের কাছে জনগণ বা ভুক্তভোগী পরিবার যেসব নিয়ে আসেন- এগুলো শুধুমাত্র তথ্য। এই তথ্যগুলোকে তদন্ত সংস্থা গ্রহণ করে, পরে পর্যালোচনা করে একটি রিপোর্ট তৈরি করা হয়। সেই রিপোর্ট চিফ প্রসিকিউটরের কাছে দেওয়া হলে তিনি কোর্টের কাছে আবেদন করেন অ্যারেস্ট ইস্যু করার জন্য। আজকে পর্যন্ত দুটি মিস কেস করা হয়েছে। প্রথম মিস কেসের মধ্যে শেখ হাসিনা এবং দ্বিতীয় মিস কেসে ওবায়দুল কাদেরসহ মন্ত্রীপরিষদের সদস্যরা এবং তৃতীয়ত মিস কেসে পুলিশ সদস্যদের নেওয়া হয়েছে। প্রথম যখন এই মামলা করা হয়েছে আমরা অপরাধীদের নাম প্রকাশ করিনি, যাতে তারা কেউ পালিয়ে যেতে না পারে।    

যেসব প্রমাণের ভিত্তিতে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে- ছাত্র-জনতাকে সমূলে বা আংশিকভাবে ধ্বংস করে দেওয়ার জন্য; তাদের ওপর প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের জন্য এবং এপিসি ও হেলিকপ্টার ব্যবহার করে নিরস্ত্র সিভিলিয়ানদের হত্যা করার জন্য। শুধু হত্যাই করা হয়নি, মরদেহগুলোকে বিকৃত করা ও গুম করা, জানাজা করতে না দেওয়া, ডেথ সার্টিফিকেট ইস্যু করতে না দেওয়াসহ যত মানবেতর অপরাধ আছে, তারা সেগুলো করেছে। তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হচ্ছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৪১৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৭, ২০২৪
ইএসএস/এইচএ/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।