ঢাকা, শুক্রবার, ১৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ৩০ মে ২০২৫, ০২ জিলহজ ১৪৪৬

আইন ও আদালত

‘ইশরাকের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নির্বাচন কমিশনের’

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪:৩৬, মে ২৯, ২০২৫
‘ইশরাকের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নির্বাচন কমিশনের’ ফাইল ফটো

ঢাকা: বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র ঘোষণার গেজেট স্থগিত চেয়ে করা লিভ টু আপিল পর্যবেক্ষণসহ নিষ্পত্তি করে দিয়েছেন আপিল বিভাগ।

বৃহস্পতিবার (২৯ মে) প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন আপিল বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

আদালতে রিটকারীর পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মোহাম্মদ হোসেন। ইশরাক হোসেনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন। নির্বাচন কমিশনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মুহাম্মদ ইয়াসিন খান।

আইনজীবী মোহাম্মদ হোসেন বলেন, আজকে রিট মামলাটি আপিল বিভাগ নিষ্পত্তি করে দিয়েছেন। আমরা আশা করবো নির্বাচন কমিশন শিগগিরই এটার (নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালের রায়) বিরুদ্ধে আপিল দায়ের করবে। আর যদি ব্যর্থ হয় তাহলে আমরা আবার আইনগত ব্যবস্থা নেব।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, (গেজেটের) মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। এখন শপথ পড়ানোর স্কোপ (সুযোগ) নেই।

তবে আইনজীবী এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, আদালত গেজেটের ওপর স্থগিতাদেশ দেননি। কোর্ট একটা অবজারভেশন দিয়েছেন যে নির্বাচন কমিশন স্বাধীন। যেহেতু সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান, তারাই এ ব্যাপারে (ইশরাকের মেয়র পদের গেজেট নিয়ে) সিদ্ধান্ত নেবে।

তিনি আরও বলেন, আজকে তাদের (রিটকারীর) লিভ মঞ্জুর করেনি। কোনো স্থগিতাদেশ দেননি। নিষ্পত্তি করে বলেছেন, নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হবে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন তো আগে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আগে যে মতামত দিয়েছে সেটা থেকে তারা সরে আসার সুযোগ নেই। তারা একই রকম সিদ্ধান্ত নিলে সরকার শপথ করাতে বাধ্য।    

এর আগে গত ২২ মে বিচারপতি মো. আকরাম হোসেন চৌধুরী ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর হাইকোর্ট বেঞ্চ রিট খারিজ করে আদেশ দেন। ফলে মেয়র পদে ইশরাক হোসেনের শপথে বাধা কেটে যায় বলে জানান তার আইনজীবী।

ওই দিন বিকেলে সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে সাত পৃষ্ঠার এ আদেশ প্রকাশ করা হয়। এরপর ২৬ মে আপিল বিভাগে আবেদন করেন রিটকারী।

২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নির্বাচন হয়। তাতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শেখ ফজলে নূর তাপস মেয়র নির্বাচিত হন। নির্বাচন কমিশন ২ ফেব্রুয়ারি ভোটের ফলাফলের গেজেট প্রকাশ করে। এরপর শপথ নিয়ে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন তাপস।

সেই নির্বাচনে ঢাকা দক্ষিণের মেয়র পদে তাপস পেয়েছিলেন সোয়া চার লাখ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির প্রার্থী ইশরাক পান দুই লাখ ৩৬ হাজার ভোট। নির্বাচনে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ তুলে ফল বাতিল চেয়ে ২০২০ সালের ৩ মার্চ মামলা করেন বিএনপি নেতা ইশরাক।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত বছরের আগস্ট মাসে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশের সব সিটি করপোরেশনের মেয়রদের অপসারণ করা হয়। এরপর ঢাকা দক্ষিণ সিটির প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন অতিরিক্ত সচিব শাহজাহান মিয়া।

এর মধ্যে গত ২৭ মার্চ ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ২০২০ সালের নির্বাচনে ফজলে নূর তাপসকে বিজয়ী ঘোষণার ফল বাতিল করে বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে মেয়র ঘোষণা করেন ঢাকার প্রথম যুগ্ম জেলা জজ ও নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. নুরুল ইসলাম।

আদালত ১০ দিনের মধ্যে গেজেট প্রকাশের নির্দেশ দেন। এ রায় পাওয়ার পর ২৭ এপ্রিল গেজেট প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন।

এদিকে গেজেট প্রকাশের দিন ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ঘোষণা করে দেওয়া রায় ও ডিক্রির বিরুদ্ধে আপিল করতে আইনি নোটিশ দেন রফিকুল ইসলাম ও মামুনুর রশিদ নামে দুই ব্যক্তি। নোটিশে গেজেট প্রকাশ এবং ইশরাককে শপথ নেওয়া থেকে বিরত থাকতে বলা হয়।

তখন ওই দুই ব্যক্তির আইনজীবী বলেন, যথাযথ প্রক্রিয়া না মেনে দ্রুত রায়টি দেওয়া হয়েছে। আমরা মনে করেছিলাম, ইসি এই আদেশকে চ্যালেঞ্জ করবে। চ্যালেঞ্জ করল না। আবার খবরে দেখলাম, আইন উপদেষ্টা বলছিলেন, আইন মন্ত্রণালয়ের যে মতামত চাওয়া হয়েছিল, সেজন্য অপেক্ষা না করে এই নোটিফিকেশন জারি করে দেওয়া হয়েছে। ট্রাইব্যুনাল এমন কোনো আদেশ দিতে পারেন না যে আদেশের কোনো কার্যকারিতা নেই। এখানে টার্ম শেষ হয়ে গেছে। অধ্যাদেশের মাধ্যমে মেয়র পদশূন্য করে দেওয়া হয়েছে।

পরে মামুনুর রশিদ হাইকোর্টে রিট করেন। রিটে ২৭ মার্চের রায় এবং ২৭ এপ্রিলের গেজেট কেন বেআইনি হবে না এবং ইশরাক হোসেনের শপথ পরিচালনা থেকে বিরত রাখার নির্দেশনা কেন দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারির আর্জি জানানো হয়। এ রুল বিবেচনাধীন থাকা অবস্থায় রায় ও গেজেটের কার্যক্রম স্থগিত চাওয়া হয়েছিল।

ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে শপথ পড়ানোর দাবিতে গত সপ্তাহে আন্দোলন করছিলেন তার সমর্থকেরা। নগর ভবনের সামনে টানা অবস্থান নিয়ে পরে গত ২১ মে থেকে মৎস্য ভবন, কাকরাইল ও যমুনার সামনের রাস্তায় অবস্থান করছিলেন তারা। ২২ মে বিকেলে অবশ্য ৪৮ ঘণ্টার জন্য আন্দোলন স্থগিত ঘোষণা করেন ইশরাক।

ইএস/জেএইচ/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।