ঢাকা: লজ্জা থাকলে সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে. এম. নুরুল হুদা ভোটের অধিকার হরণ করায় পরিবারের সামনে মুখ দেখাতে পারতেন না, তাই ৫ আগস্টের পর নিজেই আত্মহত্যা করতেন। সোমবার (২৩ জুন) ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমানের আদালতে রিমান্ড শুনানিকালে তিনি এ মন্তব্য করেন।
এদিন কে. এম. নুরুল হুদাকে আদালতে হাজির করে শেরেবাংলা নগর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) শামসুজ্জোহা সরকার ১০ দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন।
রিমান্ড শুনানিকালে তিনি বলেন, তার পরামর্শে দিনের ভোট রাতে করে মিথ্যা বিবৃতি ও ফল ঘোষণা করা হয়েছে। তিনি জনগণের সাংবিধানিক অধিকার হরণ করেছেন। নির্বাচন বাতিল করতে দাবি করা হলেও তিনি সেটি করেননি।
এরপর রাষ্ট্রপক্ষে মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী রিমান্ড আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন।
শুনানিকালে তিনি বলেন, ফ্যাসিস্ট হাসিনার ফ্যাসিজমে ভূমিকা রাখা ব্যক্তিদের মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছেন নুরুল হুদা। এরপর আমরা শুনলাম তিনি জনগণের হাতে কট। তিনি জনগণের মৌলিক অধিকার ও ভোটের অধিকার হরণ করেছেন। জনতা তার ওপর এতোটাই ক্ষুব্ধ যে রাস্তায় বের হলে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে। উনাকে ‘ফুলের’ মালাও দিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, এরা সেদিন মানুষ ও জনতার পক্ষে থাকলে হাসিনা এতো বড় ফ্যাসিস্ট হতো না। তার আমলে ২০১৮ সালে কমিশনের সবাই অংশ নিয়েছে। তারা সমস্ত রাজনৈতিক দলের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন এবং জনগণের ভোটের অধিকার হরণ করেছেন। তিনি ডিসিকে অর্ডার দিয়েছেন রাতেই ভোট করে রাখতে। তাদেরকে বিরিয়ানি দিয়েছে এমনকি ভোট চুরির জন্য টাকাও দিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, এরপরও তিনি বলেছেন জনগণ ভোট দিয়েছে। কতটা নির্লজ্জ হলে এখনও তারা হাসে। আমার মনে হয় অন্য কেউ হলে নিজেই আত্মহত্যা করতো। তাকে বলা হয় নিশি রাতের নির্বাচন কমিশনার। আমি জানি না, তিনি কীভাবে পরিবারের সামনে কীভাবে মুখ দেখান।
এরপর তিনি মামলায় তদন্ত কর্মকর্তার করা ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুরের আবেদন জানান।
এরপর আসামিপক্ষে আইনজীবীরা বলেন, নুরুল হুদা একজন মুক্তিযোদ্ধা। তিনি ৯ নম্বর সেক্টরে মেজর জলিলের অধীনে সাবসেক্টর কমান্ডার ছিলেন। তার বয়স দেখানো হয়েছে ৭৭ বছর। প্রকৃতপক্ষে বয়স আরও বেশি। তিনি বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত। তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগের সবগুলো জামিনযোগ্য। রিমান্ডে নেওয়ার মতো কোনো যুক্তি প্রসিকিউশন দেখাতে পারেননি। তাই আমরা রিমান্ড বাতিলসহ জামিনের প্রার্থনা করছি।
শুনানি শেষে বিচারক তার ৪ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদেশ দেন।
গত ২২ জুন সন্ধ্যার দিকে রাজধানীর উত্তরা এলাকা থেকে সাবেক সিইসিকে গ্রেপ্তার করা হয়। এদিন স্থানীয় জনগণ তাকে আটক করে পুলিশের হাতে সোপর্দ করে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা যায়, লুঙ্গি পরিহিত নুরুল হুদাকে আটক করে জুতার মালা পরিয়ে দিয়েছে বিক্ষুব্ধ জনতা।
এর আগে রোববার সকালে শেরে বাংলা নগর থানায় দশম, একাদশ ও দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন পরিচালনাকারী কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ, কে এম নুরুল হুদা ও কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশনের বিরুদ্ধে মামলা করে বিএনপি।
দলের জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বাদী হয়ে মামলাটি করেছেন। মামলায় সাবেক তিন প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ ২৪ জনকে এজাহারনামীয় আসামি করা হয়
কেআই/এমজে
