আমরা নিয়ম ভঙ্গ করে অনেক সময়েই নিয়ম না জানার অজুহাত দিয়ে থাকি। কিন্তু আইন না জানা কোনো অজুহাত হতে পারে না।
নিয়ম মেনে চলা ও সেই সাথে যথেষ্ট সতর্কতা অবলম্বন করা প্রত্যেক নাগরিকেরই দায়িত্ব। এ দায়িত্ব উৎপাদক ও ভোক্তা, ক্রেতা-বিক্রেতা তথা সাধারণ পথচারী সবার জন্যই সমানভাবে প্রযোজ্য।
এক সময় নিয়ম উৎপাদক তার উৎপাদিত জিনিসটি একবার ক্রেতা বা ভোক্তার কাছে হস্তান্তর করতে পারলে তার আর কোনো দায়িত্ব ছিল না। যেকোনোভাবেই হোক একবার হস্তান্তর করতে পারলেই হলো; দায়-দায়িত্ব সব শেষ।
কিন্তু ১৯৩২ সালের ডোনাগো বনাম স্টিভেনসন মামলার সিদ্ধান্তের পর স্থির হয়, কোনো দ্রব্যের উৎপাদনকারী যদি দ্রব্যটি এমন অবস্থায় বিক্রি করে যেনো ঐ অবস্থায়ই ব্যবহারকারীর কাছে পৌছায় এবং মাঝপথে অন্য কারো হস্তক্ষেপ বা পরীক্ষা নিরীক্ষার সুযোগ না থাকে তাহলে উৎপাদনকারী যথাযথ সাবধানতা অবলম্বন করবে যেনো ব্যবহারকারীর কোনো ক্ষতি না হয়।
তবে উৎপাদনকারীকে দায়ী করতে হলে বাজারে ত্রুটিযুক্ত পণ্য ছাড়াই যথেষ্ট বলে বিবেচিত হবে না। বিবাদী বা ভোক্তার সাথে তার একটা সম্পর্ক বা সান্নিধ্য প্রমাণ করতে হবে।
কোনো ব্যক্তি যদি একটা পুরান ক্ষয় হয়ে যাওয়া বা ভাঙ্গাচূড়া যন্ত্রাদি বিক্রি করে এই শর্তে যে, দ্রব্যটি সকল ত্রুটিসহ বিক্রি করা হয়েছে এবং কোনো ত্রুটির জন্য বিক্রেতা দায়ী থাকবে না। তাহলে পরবর্তীকালে কেউ সে যন্ত্র বা দ্রব্য ব্যবহার করে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও বিক্রেতাকে দায়ী করা যাবে না ।
এছাড়াও ব্যবহারকারীর হস্তগত হওয়ার আগেই যদি অন্য কেউ তা পরীক্ষা করে ত্রুটি সম্পর্কে অবহিত হওয়ার সুযোগ থেকে থাকে তাহলেও উৎপাদনকারীকে দায়ী করা যায় না।
আরো একটি মামলায় বিবাদী বাদীর কাছে একটি ক্রেনের যন্ত্রাংশ বিক্রি করেছিলে এবং বাদীর কর্মচারীরা সেগুলো একত্রিত করে পূণার্ঙ্গ ক্রেন হিসেবে ব্যবহার করবে এরকম ভেবেছিল।
বাদী নিজেই একজন অভিজ্ঞ প্রকৌশলী ছিলেন এবং যন্ত্রাংশগুলো একত্রিক করার সময় কিছু ত্রটি উদঘাটন করেছিল।
তারপরও তিনি যন্ত্রগুলো একত্রিত করে ক্রেন দিয়ে কাজ চালানোর সিদ্ধান্ত নেন। কাজ চালানোর সময় একট অংশ পড়ে বাদী আহত হন।
এক্ষেত্রে আপীল আদালত বিবাদীকে দায়ী করেন নি। কারণ, যন্ত্রাংশগুলো একত্রিত করার পর বিবাদীর তা পরীক্ষা করার সুযোগ হয়নি। তাই বিবাদীকে এক্ষেত্রে দায়ী করা হয়নি।
আরেকটি মামলায় বিবাদী একটি সাবমেরিন রং করার সময় যথাযথ সাবধানতা অবলম্বন করতে ব্যর্থ হয়। এর ফলে সাবমেরিনটি পরীক্ষামূলকভাবে চালানোকালে কয়েকজন ব্যক্তির মৃত্যু ঘটে।
কিন্তু টর্ট আইনের ক্ষতিপূরণের জন্য তাদের দায়ী করা হয় নি; কারণ, অসতর্কভাবে রং করার দরুণ যেকোনো ব্যক্তির মৃত্যু ঘটতে পারে ঘটতে পারে- যা কেউ আগে থেকে অনুমান করতে পারে না।
তবে কোনে বিশেষ ক্ষেত্রে বিবাদী সাবধানতা অবলম্বন করতে ব্যর্থ হয়েছে কি-না তা সুনির্দিষ্ট পরিস্থিতির আলোকে বিবেচনা করতে হবে।