ঢাকা, বুধবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

আইন ও আদালত

উৎপাত? মামলা করুন টর্ট আইনে

মানবাধিকার ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১০০ ঘণ্টা, মার্চ ২৩, ২০১৪
উৎপাত? মামলা করুন টর্ট আইনে

চারদিকে উৎপাত। হাটে-মাঠে-ঘাটে।

দরজা-জানালা বন্ধ করেও উৎপাত থেকে রেহাই নেই। সবকিছু দেখে মনে হয় যেনো দেশে ‍ উৎপাত নিরোধক কোনো আইন নেই।

আমরা হয়তো জানিই না যে উৎপাত কী। উৎপাত যেনো জীবনেরই অনুসঙ্গ-তাই উৎপাতে আর বিরক্ত হই না।

উন্নত দেশগুলোতে উৎপাত করা একটি মারাত্মক অপরাধ। এটি ভয়ানক দেওয়ানি অপরাধ ও শাস্তিযোগ্য। সেখানে শান্তিভঙ্গ করা বা উৎপাত করা ফৌজদারি অপরাধের মতোই দণ্ডযোগ্য।

উৎপাতের সৃষ্টি হয় কখন?
অন্যের ভোগে বা স্বাচ্ছন্দ্যে ব্যাঘাত ঘটানোই উৎপাত। একজন ব্যক্তি আইন মেনে আরেকজনকে বিরক্ত না করে যদি তার ন্যায় সঙ্গত অধিকার ভোগ করে তাতে কারো ব্যাঘাত ঘটানোর অধিকার নেই। এই ব্যাঘাত ঘটানোই হলো উৎপাত।

উৎপাতের দায়-দায়িত্ব সৃষ্টি হয় এমন কোনো অবস্থার সৃষ্টি করলে যার ফলে অন্যের ভোগে বা স্বাচ্ছন্দ্যে ব্যাঘাত সৃষ্টি হয়।

উৎপাত নাকি অবহেলা?
উৎপাত আর কর্তব্য অবহেলা এক নয়।   কেউ ক্রমাগত উৎপাত করলেও বিষয়টিকে আমরা অবহেলা বা ‍অজ্ঞতা বলে ক্ষমার চোখে দেখি। ফলে উৎপাতের পরিমাণ বাড়ে বৈ কমে না।

সম্ভাব্য ও অনুমেয় ক্ষতির জন্য সাবধানতা অবলম্বনে কেই ব্যর্থ হলে বিষয়টিকে আমরা অবহেলা বলে গণ্য করতে ‍পারি। কিন্তু উৎপাত নয়। কেউ তার এ কাজের জন্য ক্ষতিগ্রস্ত হলে তাকে আমরা অবহেলার দায়ে দায়ি করতে পারি।

যদিও কোনো কোনো ক্ষেত্রে একই কাজের জন্য অবহেলা অথবা উপাতের প্রতিকার পাওয়া যায়, কিন্তু এ দুটি বিষয় এক নয়। যদিও আইনের ভাষায় দুটি বিষয়ই টর্ট আইনের অন্তর্গত।

একটি মামলার ঘটনা
ও গরম্যান বনাম ও গরম মামলার ঘটনাটি এরকম- অনেক মৌমাছি বিবাদীর অঙ্গনে (জায়গায়) রাখা হয়েছিল, কিন্ত স্থানটি মৌমাছি রাখার জন্য উপযুক্ত ছিল না। ফলে মৌমাছি সে স্থান থেকে বের হয়ে এসে বাদিকে আক্রমণ করে। বিবাদীকে উৎপাতের দায়ে একজন বিচারক দায়ী করেন কিন্তু অপর একজন বিচারক তাকে অবহেলার জন্য দায়ী করেন।

বর্তমানে অবহেলা স্বতন্ত্র টর্ট হিসেবে আত্মপ্রকাশের আগে অনেক ক্ষেত্রে উপাতের সঙ্গে জড়িত ছিল।

আরো একটি ঘটনা
মেরামতের অভাবে কোনো একটি বাড়ির সিমেন্ট প্লাস্টার খসে পড়ে। পথচারীকে আঘাত করলে উৎপাতের দায়িত্ব সৃষ্টি হয়। কিন্তু বাড়ির অঙ্গনেই এভাবে কাউকে আঘাত করলে তা অবহেলার কারণ ঘটায়।

কারণ সেখানে সতকর্তা অবলম্ব করা দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। বতর্মানে অনেক ক্ষেত্রেই তাদের স্বাতন্ত্র বজায় থাকে।

অসতকর্ভাবে অস্ত্রপচর অবহেলার সমান-এটি উৎপাত নয়।

তবে অবহেলার পরিধি উৎপাতের পরিধির চেয়েও ব্যাপক।

অবহেলার ক্ষেত্রে প্রধান প্রশ্ন হচ্ছে বিবাদীর সাবধানতা অবলম্বন করা দায়িত্ব ছিল কিনা এবং বিবাদী সে দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করেছে কি-না। উৎপাতের ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বনের প্রশ্ন ওঠে না। বিবাদীর আচরণই মুখ্য বিষয়। যথাযথ সাবধানতা অবলম্বন করার পরও যদি উৎপাতের সৃষ্টি হয় তারপরও বিবাদী দায়ী।
কিন্তু কারো জমিতে কোনো আগন্তুক যদি উৎপাতের কারণ সৃষ্টি করে তবে জমির মালিক অসতর্তার জন্য অবহেলার দায়ে দায়ী। কারণ, তার জমিতে এসে কেউ উৎপাত সৃষ্টি করলে তার দায় দায়িত্ব মালিককেও নিতে হবে।

অবহেলার ক্ষেত্রে বাদীর অবদান বিবাদীর দায়-দায়িত্ব আনুপাতিক হারে হ্রাস করে। উৎপাতের স্থলে বাদী নিজেই এসেছিল-এরকম আপত্তি গ্রহণযোগ্য নয়। পরিস্থিতি, স্থান, পদ্ধতি, ফলাফল, সংবেদনশীলতা ইত্যাদির আলোকে বিচার করতে হবে, সেখানে উৎপাতের প্রতিকার পাওয়া যাবে কি-না।

আইনে ক্ষমতাপ্রাপ্ত হলে উৎপাত বৈধ হয়ে যায়, কিন্তু অবহেলার জন্য আইন ক্ষমতা প্রদান করে না।

উৎপাতের প্রতিকারের জন্য বাদীকে দখল বা মালিকানা প্রমাণ করতে হয়। কিন্তু অবহেলার ক্ষেত্রে কোনো স্বত্ত্ব প্রমাণের প্রয়োজন নেই, বাদীর প্রতি ক্ষতি অনুমেয় কি-না তাই বিবেচ্য।

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।