ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

আইন ও আদালত

শিশু নির্যাতন বন্ধে আইনের প্রয়োগ জরুরি

ল’ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫১৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৫, ২০১৫
শিশু নির্যাতন বন্ধে আইনের প্রয়োগ জরুরি ছবি: প্রতীকী

আগামী দিনের জাতি গঠনে শিশু অধিকার সুরক্ষা ও শিশু কল্যাণ নিশ্চিত করা অপরিহার্য। শিশু আইনের বাস্তবায়ন ছাড়া শিশু অধিকার রক্ষা করা যাবে না।

শিশু অধিকার বিষয়ক যে পুরনো আইন আমাদের ছিল তা সময়ের চাহিদা পূরণে যথার্থ ছিল না। তাই ১৯৭৪ সালের আইনটি বাতিল করে ২০১৩ সালে প্রণীত হয় নতুন শিশু আইন।
 
দীর্ঘদিনের চাহিদা পূরণে এরকম একটি আইন জরুরি ছিল। তবে, শুধু আইন থাকলেই হবে না আইনের যথাযথ প্রয়োগ থাকতে হবে।

সাম্প্রতিককালে গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যে কয়েকটি শিশু নির্যাতনের ঘটনা আমরা প্রত্যক্ষ করেছি তা উদ্বেগজনক। মধ্যযুগীয় বর্বরতাকেও হার মানায়। এধরনের পৈশাচিক ঘটনার সাথে যারা জড়িত তাদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করা ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য জরুরি। দোষীদের যেকোনো মূল্যে বিচার করতে হবে।

শুধু আইন থাকাই যথেষ্ট নয়। শিশুদের জন্য একটি মানবিক রাষ্ট্র ও বিশ্ব গড়তে হলে সবাইকেই সচেতন হতে হবে। সব ধরণের সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে শিশুদের প্রতি। বাস্তবতার নিরিখে আইন প্রণয়ন ও প্রয়োগ করতে হবে।

আন্তর্জাতিক আইনের আলোকেই আমাদের শিশু আইনটি করা হয়। জাতিসংঘের শিশু অধিকার সনদে শিশুদের বিশেষ অধিকারের কথা বলা আছে। এ বিশেষ অধিকারগুলো শিশুর বেড়ে ওঠা ও নিরাপদ শৈশবের জন্য অপরিহার্য। এগুলো আমাদের আইনেও স্থান পেয়েছে। কাজেই, আন্তর্জাতিক আইনের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ জাতীয় আইনের প্রয়োগ করে শিশু অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

শিশুদের জবরদস্তিমূলক বা ঝুঁকিপূর্ণ শ্রম থেকে বিরত রাখার ব্যবস্থা করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। আজকের নিরাপদ শৈশব আগামী দিনের নিরাপদ রাষ্ট্র গঠনের নিয়ামক। অসহায় শিশুদের জন্য নিরাপদ শৈশব নিশ্চিত করার জন্য সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি পর্যায়েও উদ্যোগ নিতে হবে। সাধারণ মানুষকেও এগিয়ে আসতে হবে।  

শিশুদের শুধু ঝুঁকিপূর্ণ কাজ থেকে বিরতই নয়, সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড থেকে বিরত রাখার বিধানও আছে। রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে শিশুদের ব্যবহার গুরুতর অপরাধ। এটি কোনোভাবেই নৈতিক ও আইনগতভাবে গ্রহণযোগ্য নয়। এক্ষেত্রে রাজনীতিবীদ, জনগণ তথা আইন-শৃংখলা বাহিনীকে এগিয়ে আসতে হবে।

শিশু বিষয়ক অপরাধগুলোর বিচার করার জন্য পৃথক আদালত প্রতিষ্ঠার বিধান আইনে আছে। কাজেই শিশু আদালতের মাধ্যমেই শিশু অপরাধের বিচার হওয়া জরুরি। শিশু বা কিশোর অপরাধীদের দ্রুত সংশোধন কেন্দ্রে প্রেরণ করার ব্যবস্থা করতে হবে। শিশু বা কিশোর অপরাধীদের শাস্তি দেয়া আইনের উদ্দেশ্য নয়, তাদেরকে সংশোধন করে সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলাই আইনের উদ্দেশ্য।
 
এছাড়া এ আইনের আরো কয়েকটি উল্লেখযোগ্য দিক আছে। যার যথাযথ প্রয়োগ করতে পারলে শিশু অধিকার রক্ষা ও তাদের সংশোধনের ক্ষেত্রে ইতিবাচক ফল বয়ে আনবে। এ আইনে প্রবেশন কর্মকর্তা নিয়োগের বিধান আছে। আগের আইনেও ছিল। মেট্রোপলিটন, জেলা ও উপজেলা এলাকায় একাধিক প্রবেশন কর্মকর্তা নিয়োগ করার বিধান বর্তমান আইনে আছে। এর বাস্তবায়ন করতে হবে।

আছে শিশুকল্যাণ বোর্ড স্থাপনের বিধানও। আইনানুযায়ী জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে শিশুকল্যাণ বোর্ড গঠন করার কথা বলা আছে। কিন্তু বাস্তবে এ বোর্ড আদৌ কাজ করছে কিনা সন্দেহ। থানায় শিশুবিষয়ক ডেস্ক স্থাপনের বিধান আছে। এর প্রয়োগ করতে হবে। শিশু সংশ্লিষ্ট বিষয়ক পৃথকভাবেই দেখতে হবে।  
 
কিশোর অপরাধের বিচার কেবল শিশু বা কিশোর আদালতে করার বিধান আছে। যা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া অভিযোগপত্র দেওয়ার ক্ষেত্রও শিশু ও  প্রাপ্তবয়স্ক অপরাধীদের পৃথকভাবে বিবচেনা করতে হবে। এসব আইন ও বিধান কাগজে সীমাবদ্ধ রাখলে কোনো সুফল পাওয়া যাবে না।

শিশুর প্রতি কোনো অপরাধ করা হলে তার বিরুদ্ধে শাস্তির যে বিধানগুলো আছে তার প্রয়োগ করতে হবে। কেউ যদি কোনো শিশুকে কোনো অপরাধে সম্পৃক্ত করে তবে সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের কারাদণ্ড এবং এক লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডের বিধান আছে। এছাড়া রাজনৈতিক কাজে শিশুদের ব্যবহার করলে সর্বোচ্চ তিন বছরের কারাদণ্ডের বিধানও আছে।

কিন্তু এতো কঠোর আইন থাকার পরও শিশু নির্যাতন কমছে না। ক্রমাগত তার সাথে যেনো নতুন মাত্রা যোগ হচ্ছে। তাই বিদ্যমান আইনের প্রয়োগ করে অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৫২০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৫, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।