ঢাকা: একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে জামালপুরের আট রাজাকার-আলবদরের মধ্যে তিনজনকে মৃত্যুদণ্ড ও পাঁচজনকে আমৃত্যু কারাদণ্ডাদেশের রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন প্রসিকিউশন। অন্যদিকে গ্রেফতার হয়ে কারাগারে থাকা আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত দু’জন রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবেন বলে জানিয়েছেন তাদের আইনজীবী।
সোমবার (১৮ জুলাই) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর রায়ে ফাঁসির আদেশপ্রাপ্তরা হলেন- আলবদর বাহিনীর প্রতিষ্ঠাতা মুহাম্মদ আশরাফ হোসাইন, মোহাম্মদ আবদুল মান্নান ও মোহাম্মদ আবদুল বারী। আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- জামালপুর জেলা জামায়াতের সাবেক আমির অ্যাডভোকেট শামসুল আলম ওরফে বদর ভাই ও সাবেক জামায়াত নেতা এস এম ইউসুফ আলী, অধ্যাপক শরীফ আহমেদ ওরফে শরীফ হোসেন, মো. হারুন ও মোহাম্মদ আবুল হাসেম।
আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যা, গণহত্যা, আটক, অপহরণ, নির্যাতন, লুটপাট ও মরদেহ গুমের পাঁচটি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়। এসব অভিযোগের মধ্যে ১ ও ৫ নম্বর বাদে বাকি তিনটিই প্রমাণিত হওয়ায় এসব সাজা দেন ট্রাইব্যুনাল।
প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ বলেন, ‘আমরা এই রায়ে সন্তুষ্ট’। তবে ১ ও ৫ নম্বর অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে না পারায় নিজেদের সীমাবদ্ধতার কথা স্বীকার করেন তিনি।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তুরিন বলেন, ‘আমাদের সীমাবদ্ধতা আছে স্বীকার করছি। তবে অনেক আগের ঘটনার কারণে তদন্ত কর্মকর্তাদের তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহের ক্ষেত্রে হয়তো সীমাবদ্ধতা ছিল’।
পাঁচজনের আমৃত্যু কারাদণ্ডের রায়ের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ সাজা চেয়ে আপিল করবেন কি-না- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘রায় পড়ে ও পর্যালোচনা করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবো’।
অন্যদিকে গ্রেফতারকৃত দুই আসামি অ্যাডভোকেট শামসুল আলম ওরফে বদর ভাই ও সাবেক জামায়াত নেতা এস এম ইউসুফ আলী তাদের আমৃত্যু কারাদণ্ডাদেশের রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আপিল করবেন বলে জানান তাদের আইনজীবী গাজী তামিম।
পলাতক অন্য ছয় আসামিকে আপিল করতে হলে নির্ধারিত একমাসের মধ্যে আত্মসমর্পণ অথবা গ্রেফতার হতে হবে।
আসামিদের মধ্যে গ্রেফতার হওয়া দু’জন মুক্তিযুদ্ধে রাজাকার বাহিনীর সদস্য ছিলেন। পলাতক বাকি ছয়জন ছিলেন আলবদর বাহিনীর।
মামলাটির প্রধান আসামি পলাতক আশরাফ হোসেন আলবদর বাহিনীর জামালপুর মহকুমা কমান্ডার ছিলেন। তার মাধ্যমেই মূলত ইসলামী ছাত্রসংঘের বাছাই করা কর্মীদের নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে জামায়াতের কিলিং স্কোয়াড আলবদর বাহিনী গঠিত হয়।
আট রাজাকার-আলবদরের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলোর মধ্যে ছিল জামালপুরে রাজাকার-আলবদর বাহিনী ও শান্তি কমিটি গঠন, স্থানীয় সাধনা ঔষধালয় দখল করে আলবদর বাহিনী ও শান্তি কমিটির কার্যালয় স্থাপন এবং সিংহজানি হাইস্কুলে আলবদরদের প্রশিক্ষণ প্রদান। এছাড়া ছিল পিটিআই হোস্টেল ও আশেক মাহমুদ কলেজের ডিগ্রি হোস্টেল দখল করে নির্যাতন কেন্দ্র গড়ে সেগুলোতে ১০ হাজারের বেশি মানুষকে হত্যা-গণহত্যা, আটক, অপহরণ, নির্যাতন ও গুম।
বাংলাদেশ সময়: ১৩০০ ঘণ্টা, জুলাই ১৮, ২০১৬
ইএস/এএসআর