ঢাকা: বাড়ি ছাড়ার বিষয়ে কেবল বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদই নয়, আপিল বিভাগের রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন জানাবে দুর্নীতি দমন কমিশনও (দুদক)।
শনিবার (০৬ আগস্ট) বাংলানিউজকে এমনটাই জানিয়েছেন এ মামলায় দুদকের কৌসুলি খুরশীদ আলম খান।
গত ০২ আগস্ট দেওয়া রায়ে মওদুদ আহমদ ও তার ভাই মনজুর আহমদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা বাড়ি আত্মসাতের মামলা বাতিল করেছেন আপিল বিভাগ। একইসঙ্গে গুলশান-২ এর ১৫৯ নম্বর প্লটের বাড়িটির মিউটেশন (নামজারি) মওদুদ আহমদের ভাই মনজুর আহমদের নামে করার জন্য হাইকোর্টের দেওয়া রায় বাতিল করেছেন।
খুরশীদ আলম খান বলেন, ‘দুদকের মামলা বাতিল করে আপিল বিভাগ যে রায় দিয়েছেন, তা পুনর্বিবেচনার আবেদন করবে দুদক। কারণ, আমাদের মামলা বাতিল করাটা আইনসম্মত হয়নি। এ কারণে আমরা রিভিউ আবেদন জানাবো আপিল বিভাগের কাছে। এরপর আদালত যে সিদ্ধান্ত দেন সেটা মেনে নেবো’।
তিনি বলেন, ‘আমরা অলরেডি রায় পুনর্বিবেচনার আবেদনের কাজ শুরু করে দিয়েছি’।
২০১৩ সালের ১৭ ডিসেম্বর বাড়িটি নিয়ে দুদকের উপ-পরিচালক হারুনুর রশীদ রাজধানীর গুলশান থানায় মওদুদ আহমদ ও তার ভাই মনজুর আহমদের বিরুদ্ধে মামলা করেন।
২০১৪ সালের ১৪ জুন এ মামলায় অভিযোগ আমলে নেন বিচারিক আদালত। এর বিরুদ্ধে তাদের আবেদন গত বছরের ২৩ জুন খারিজ করে দেন হাইকোর্ট।
পরে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল করেন মওদুদ আহমদ। এ আবেদনের শুনানি শেষে ০২ আগস্ট আপিল বিভাগ মামলাটি বাতিল করে রায় দেন।
এ মামলার পূর্ণাঙ্গ রায় ইতোমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে।
রায়ে বলা হয়, ‘এখানে দেখা যায়, মওদুদ আহমদের ভাই মনজুর আহমদের (একটি মামলার বাদী) বক্তব্য অনুযায়ী অস্ট্রিয়ার নাগরিক ইনজে প্লাজ পূর্ব পাকিস্তানে ব্যবসা করার সময় মো. এহসান নামের এক পাকিস্তানি ব্যবসায়ীকে বিয়ে করেন। বিয়ের পর ১৯৬৫ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর তত্কালীন ডিআইটির (রাজউক) কাছ থেকে গুলশানে এক বিঘা ১৩ কাঠার একটি প্লট ইনজে প্লাজের নামে বরাদ্দ নিয়ে বাড়ি বানান। ১৯৭৩ সালের ২ আগস্ট বাড়িটি মওদুদ আহমদের নামে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দেন ইনজে মারিয়া। এরই মধ্যে এই বাড়িটি পরিত্যক্ত সম্পত্তি হিসেবে ঘোষণা করে সরকার। এ কারণে তিনজন অস্ট্রিয় রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশ সফর করে ওই সম্পত্তির মালিকানা প্লাজের নামে দিতে সরকারকে অনুরোধ করেন। পরে ইনজে মারিয়া প্লাজ ১৯৮১ সালে মওদুদের সঙ্গে একটি চুক্তি করে জমিটি লিজ দেন। তখন থেকেই মওদুদ আহমদ পরিবার নিয়ে সেখানে বসবাস শুরু করেন’।
‘অন্য এক মামলার বাদী মহসিন দরবারের বক্তব্য অনুযায়ী, ১৯৮৪ সালের ২৫ জুন ইনজে মারিয়া প্লাজ এ জমি বিক্রির জন্য মহসিন দরবারকে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দেন। ১৯৮৫ সালে পাওয়ার অব অ্যাটর্নির শর্ত অনুযায়ী জমির মূল্য বাবদ কিছু টাকা পরিশোধ করেন মহসিন দরবার। তাকে সম্পত্তি হস্তান্তরও করা হয়। পরে মনজুর আহমদ এ সম্পত্তি নিজের দাবি করে এবং স্বত্ব ঘোষণা চেয়ে ঢাকার প্রথম সাব জজ আদালতে ১৯৯৩ সালে একটি মামলা করেন। এতে রাজউককেও বিবাদী করা হয়। রাজউক লিখিত জবাব দিয়ে জানায়, রাজউককে এসব পাওয়ার অব অ্যাটর্নির বিষয়ে কোনো নোটিশ দেওয়া হয়নি। এমনকি সম্পত্তি হস্তান্তরের জন্য রাজউকের কোনো অনুমতিও নেওয়া হয়নি’।
ওই বাড়ি নিয়ে চুক্তিনামা বাস্তবায়িত না হওয়ায় মামলা করেন মওদুদ আহমদের ভাই। ১৯৯৩ সালের ২৩ জানুয়ারি নিম্ন আদালতে (তত্কালীন সাব জজ আদালত) মামলাটি খারিজ হয়। এ খারিজ আদেশের বিরুদ্ধে ২০০১ সালের ২৩ অক্টোবর হাইকোর্টে প্রথম আপিল করেন মওদুদ আহমদের ভাই। এ আবেদনের চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০০৫ সালের ১৫ ডিসেম্বর হাইকোর্ট রায় দেন। রায়ে আবেদনকারীপক্ষ ডিক্রি পান।
হাইকোর্টের এ রায়ের বিরুদ্ধে রাজউক ২০০৮ সালে লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করে, তবে তামাদি দিয়ে বারিত হওয়ায় তা আপিল বিভাগে খারিজ হয়। এর বিরুদ্ধে রাজউক ২০১৪ সালে পুনর্বিবেচনার আবেদন করে, যা শুনানির জন্য গ্রহণের মাধ্যমে আপিল হিসেবে গণ্য হয়।
আপিল বিভাগ ০২ আগস্ট এ আপিলও মঞ্জুর করে রায় দেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৪২৩ ঘণ্টা, আগস্ট ০৬, ২০১৬
ইএস/এএসআর