ঢাকা: শিশু আইনে প্রাপ্তবয়স্ক অপরাধীদের বিচারে অস্পষ্টতার বিষয়ে দুই সচিবের কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছেন হাইকোর্ট। রোববার (১৪ আগস্ট) বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি জেবিএম হাসানের বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
এক সপ্তাহের মধ্যে আইন মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ ও ড্রাফটিং বিভাগের সচিব এবং সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিবকে আদালতে ব্যাখ্যা দাখিল করতে হবে।
রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ একেএম মনিরুজ্জামান কবির ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মো. শহীদুল ইসলাম খান উপস্থিত ছিলেন।
শেখ একেএম মনিরুজ্জামান কবির বলেন, আদালত বলেছেন, এ আইন প্রণয়নের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের ব্যাখ্যা প্রয়োজন। পরবর্তী আদেশের জন্য ২৬ আগস্ট দিন ধার্য করেছেন।
সম্প্রতি ঢাকা, কক্সবাজার ও রংপুরে শিশু ধর্ষণ ও হত্যার চারটি মামলার আসামিরা হাইকোর্টে জামিনের আবেদন জানান। এসব মামলার সব আসামি প্রাপ্তবয়স্ক। শিশু আদালত তাদের জামিনের আবেদন গ্রহণ না করায় হাইকোর্ট রুল জারি করেন। একইসঙ্গে চারটি আদালতের বিচারকদের এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়।
পাশাপাশি আসামিদের জামিন প্রশ্নে রুলও জারি করেন।
পরে বিচারকরা লিখিত ব্যাখ্যা দাখিল করেন। ব্যাখ্যায় ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৪ এর বিচারক সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ‘দ্য চিলড্রেন অ্যাক্ট, ১৯৭৪ অনুযায়ী যেসব মামলার ভিকটিম শিশু এবং যেসব মামলার অভিযুক্ত ব্যক্তি শিশু, ওইসব মামলা আমলে নেওয়ার পর বিচারের জন্য কিশোর আদালতে পাঠানো হতো। কিন্তু শিশু আইন, ২০১৩ এর ১৭(১) ধারায় এ বিষয়ে অস্পষ্টতা দেখা দিয়েছে’।
কারণ, ওই ধারায় বলা হয়েছে, ‘আইনের সহিত সংঘাতে জড়িত শিশু বা আইনের সংস্পর্শে আসা শিশু কোনো মামলায় জড়িত থাকলে যেকোনো আইনের অধীনেই হোক না কেন, উক্ত মামলা বিচারের এখতিয়ার কেবল শিশু আদালতের থাকবে’। তবে আইনের ধারা ১৮, দফা-(ক) এ শিশু আদালতকে ফৌজদারি কার্যবিধির অধীন দায়রা আদালতের ক্ষমতাগুলো প্রদান করা হলেও এ আইনে শিশু আদালতকে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ এর কোনো ধারার অপরাধ আমলে নেওয়া কিংবা বিচারের সুনির্দিষ্ট এখতিয়ার প্রদান করা হয়নি। শিশু আইনের ৩৩(১) ধারা অনুযায়ী শিশু আদালত অভিযুক্ত কোনো শিশুকে মৃত্যুদণ্ড, যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান করতে পারবেন না। আইনের ৩৪(১) ধারা অনুযায়ী কোনো শিশু মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় অপরাধে দোষী প্রমাণিত হলেও তাকে অনুর্ধ্ব ১০ বছর এবং সর্বনিম্ন ৩ বছর মেয়াদে আটকাদেশ প্রদানের বিধান রয়েছে।
কিন্তু এ আইনে অপরাধের শিকার বা সাক্ষী শিশু হলে এবং অভিযুক্ত ব্যক্তি প্রাপ্তবয়স্ক হলে তার সাজার বিধান সন্নিবেশিত করা হয়নি। ফলে অভিযুক্ত শিশু অপরাধীর অপরাধ প্রমাণিত হলে শিশু আদালতের সর্বোচ্চ ১০ বছর কারাদণ্ড বা আটকাদেশ প্রদানের ক্ষমতা থাকলেও ভিকটিম বা সাক্ষী শিশু হলে এবং অভিযুক্ত ব্যক্তি প্রাপ্তবয়স্ক হলে অপরাধীর সাজা কি হবে তা এ শিশু আইনে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।
ব্যাখ্যায় আরো বলা হয়, ‘শিশু আইনের অস্পষ্টতা বা সীমাবদ্ধতা বিবেচনায় নিয়ে ন্যায়বিচারের স্বার্থে এ বিষয়ে হাইকোর্টের সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা চাচ্ছি। এ নির্দেশনা পেলে ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন সব মামলায় তা অবশ্যই অনুসরণ করবো’।
রংপুরের ১ম আদালতের অতিরিক্ত দায়রা জজ ও শিশু আদালতের বিচারক মো. রোকনুজ্জামান ব্যাখ্যায় বলেছেন, ‘যেকোনো মামলায় ভিকটিম শিশু এবং আসামি প্রাপ্তবয়স্ক হলে আসামির জামিন এবং বিচার প্রক্রিয়া বিষয়ে সুনির্দিষ্টভাবে ভিন্ন কোনো বিধান শিশু আইনে উল্লেখ করা হয়নি। মামলা দায়ের ও বিচারের ক্ষেত্রে ভিকটিম শিশু এবং আসামি প্রাপ্তবয়স্ক হলে আসামির জামিন বা পুলিশ হেফাজতে গ্রহণ বিষয়ে শুনানি এবং বিচার পদ্ধতি কোন আদালতে কিভাবে হবে সে বিষয়েও শিশু আইনে সুস্পষ্ট নির্দেশনা নেই। ফলে শিশু আইনের (৪), ১৭(১) এবং ৫২ ধারার উল্লেখিত অন্তর্নিহিত বিধান অনুযায়ী জামিনের দরখাস্তটি গ্রহণ ও শুনানি করা হয়’।
‘তবে এ বিষয়ে মূল আইনে অস্পষ্টতা রয়েছে মর্মে প্রতীয়মান হয়েছে। ফলে হাইকোর্ট কোনো নির্দেশনা প্রদান করলে বিদ্যমান অস্পষ্টতা দূর হতে পারে’।
এ ব্যাখ্যা আসার পর ৯ আগস্ট হাইকোর্ট রায়ের জন্য ১৪ আগস্ট দিন ধার্য করেন। কিন্তু আদালত রায় ঘোষণা না করে সচিবদের কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছেন।
বাংলাদেশ সময়:১৬০২ ঘণ্টা, আগস্ট ১৪,২০১৬
ইএস/জেডএস/এএসআর