ঢাকা: ফাঁসি বহাল রেখে পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর দেশের শীর্ষ যুদ্ধাপরাধী মীর কাসেম আলীর সাজা কার্যকরের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ থেকে পূর্ণাঙ্গ রায়টি পাঠানো হয়েছে বিচারিক আদালত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে।
সেখান থেকে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত মীর কাসেম আলীকে শোনাতে রায় যাবে গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২ এ। সেখানকার কনডেম সেলে বন্দি মীর কাসেমকে রায় শুনিয়ে তার কাছে জানতে চাওয়া হবে, তিনি রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাইবেন কি-না।
প্রাণভিক্ষা না চাইলে বা চাওয়ার পর আবেদন নাকচ হলে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে আর কোনো বাধা থাকবে না। আইন অনুসারে তখন সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী যেকোনো সময় ফাঁসির রায় কার্যকর করবে কারা কর্তৃপক্ষ।
মঙ্গলবার (৩০ আগস্ট) বিকালে জামায়াতের কর্মপরিষদ সদস্য মীর কাসেম আলীর ফাঁসি বহাল রেখে দেওয়া রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশিত হয়। সন্ধ্যা সোয়া ছয়টার দিকে আপিল বিভাগ থেকে ২৯ পৃষ্ঠার রায়টি পাঠানো হয় ট্রাইব্যুনালে।
সুপ্রিম কোর্টের ডেপুটি রেজিস্ট্রার মেহেদী হাসান রায়ের কপি ট্রাইব্যুনালে নিয়ে আসেন। ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার শহীদুল আলম ঝিনুক তা গ্রহন করেন।
ট্রাইব্যুনাল সূত্র জানায়, সুপ্রিম কোর্ট থেকে আসা মীর কাসেমের রায়ে ট্রাইব্যুনালের তিন বিচারপতির স্বাক্ষরের প্রক্রিয়া চলছে। বিচারপতিদের স্বাক্ষর শেষে তা রাতের মধ্যে কারাগারে পাঠানো হবে।
এর আগে সকালে ফাঁসির রায়ের পুনর্বিবেচনা চেয়ে মীর কাসেমের রিভিউ আবেদন খারিজ করে সংক্ষিপ্ত রায় ঘোষণা করেন প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার নেতৃত্বে পাঁচ বিচারপতির আপিল বেঞ্চ। অন্য বিচারপতিরা হলেন- বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী, বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার ও মোহাম্মদ বজলুর রহমান।
সর্বোচ্চ আদালতের পূর্ণাঙ্গ এ রায় প্রকাশের মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনীর সহযোগী কিলিং স্কোয়াড আলবদর বাহিনীর তৃতীয় শীর্ষ নেতা মীর কাসেমকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে রায় কার্যকরের বিষয়টি চূড়ান্ত ধাপে পৌঁছে। সর্বশেষ ধাপে এখন কেবলমাত্র অপরাধ স্বীকার করে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাইতে পারবেন তিনি।
মীর কাসেমকে ফাঁসিকাষ্ঠে ঝুলতে হচ্ছে চট্টগ্রামের ডালিম হোটেলের নির্যাতনকেন্দ্রে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে শহীদ কিশোর মুক্তিযোদ্ধা জসিম উদ্দিনকে হত্যার দায়ে। আপিল মামলার রায়ে মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে ওই হত্যাকাণ্ড সংঘটনের দায় (১১ নম্বর অভিযোগ) প্রমাণিত হওয়ায় তাকে সর্বোচ্চ দণ্ডাদেশ দেওয়া হয়। রিভিউ আবেদনের রায়েও এ সাজা বহাল রেখেছেন সর্বোচ্চ আদালত।
এদিকে রিভিউ আবেদন খারিজ হওয়ার পর পুনর্বহাল হয়েছে বিচারিক আদালতের জারি করা মীর কাসেমের মৃত্যু পরোয়ানা।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এর দেওয়া মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে গত ০৮ মার্চ মীর কাসেম আলীর আপিল মামলার সংক্ষিপ্ত আকারে চূড়ান্ত রায় দেন সর্বোচ্চ আদালত।
গত ০৬ জুন ২৪৪ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করেন আপিল বিভাগ।
রায়টি রাতেই বিচারিক আদালতে গেলে মৃত্যু পরোয়ানা জারি করেন ট্রাইব্যুনাল। এর পর পরই মৃত্যু পরোয়ানাসহ পূর্ণাঙ্গ রায় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারসহ স্বরাষ্ট্র ও আইন মন্ত্রণালয়, ঢাকার ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট (জেলা প্রশাসক) কার্যালয়সহ সংশ্লিষ্টদের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
পরদিন ০৭ জুন সকালে কাশিমপুর কারাগার পার্ট-২ এর কনডেম সেলে থাকা কাসেম আলীকে মৃত্যু পরোয়ানা ও পূর্ণাঙ্গ রায় পড়ে শোনানো হয়।
এরপর গত ১৯ জুন রিভিউ আবেদন করেন মীর কাসেম আলী। সেদিন থেকে মৃত্যু পরোয়ানাটি স্থগিত ছিল।
বাংলাদেশ সময়: ১৮১৮ ঘণ্টা, আগস্ট ৩০, ২০১৬
ইএস/টিএইচ/এএসআর
** মীর কাসেমের ফাঁসি বহালের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ
** মীর কাসেমের ফাঁসি বহাল
** ‘মিথ্যা অভিযোগ, মিথ্যা সাক্ষ্য-প্রমাণে এ সাজা’
** বুধবার সকাল-সন্ধ্যা জামায়াতের হরতাল
** ‘মৃত্যুদণ্ড কার্যকরে কোনো বাধা নেই’
** মীর কাসেমের রিভিউ আবেদনের রায়ের অপেক্ষা
** মীর কাসেম আলীর রায় নিয়ে উদ্বিগ্ন অ্যাটর্নি জেনারেল
** মীর কাসেমের রিভিউ আবেদনের রায় কার্যতালিকায়