ঢাকা: ভ্রাম্যমাণ আদালতে এক শিক্ষার্থীকে দুই বছরের কারাদণ্ড দেওয়ার ঘটনায় টাঙ্গাইলের সখিপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মাকসুদুল আলমকে টাঙ্গাইল থেকে প্রত্যাহারের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
একই সঙ্গে ওই সাজা দেওয়াকে অবৈধ বলে ঘোষণা করে এ বিষয়ে বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।
মঙ্গলবার (১৮ অক্টোবর) এসব আদেশ দেন বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি আশীষ রঞ্জন দাসের হাইকোর্ট বেঞ্চ।
গত ২৭ সেপ্টেম্বর হাইকোর্টের নির্দেশে কারাদণ্ড দেওয়ার ওই ঘটনার ব্যাখ্যা দিতে হাজিরা দেন ইউএনও রফিকুল ও ওসি মোহাম্মদ মাকসুদুল। কারাদণ্ড পাওয়া নবম শ্রেণির ওই স্কুলছাত্রও আদালতে ঘটনার বর্ণনা দেয়।
আদালতে ইউএনও ও ওসির পক্ষে ছিলেন যথাক্রমে আইনজীবী নুরুল ইসলাম সুজন ও শ ম রেজাউল করিম।
শুনানি শেষে এ বিষয়ে আদেশের জন্য ১৮ অক্টোবর দিন ধার্য করেন হাইকোর্ট।
ওই শিক্ষার্থীকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের কারাদণ্ড দেওয়ার ঘটনা নিয়ে একটি ইংরেজি দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদনটি গত ২০ সেপ্টেম্বর আদালতের নজরে আনেন আইনজীবী খুরশীদ আলম খান। এরপর দুই কর্মকর্তাকে তলব করেন হাইকোর্ট।
খুরশীদ আলম খান সাংবাদিকদের বলেন, ওই ছেলেটাকে যে সাজাটা দেওয়া হয়েছিল, সেটা অবৈধ এবং আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভূত। আদালত ওই সাজা বাতিল করে দিয়েছেন। এবং ২৭ সেপ্টেম্বর আদালতে দেওয়া স্কুল ছাত্রের জবানবন্দির আলোকে টাঙ্গাইলের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বিচার বিভাগীয় তদন্ত করবেন। এছাড়াও তদন্তের স্বার্থে সখিপুরের ইউএনও ও ওসিকে প্রত্যাহার করে ঢাকা বিভাগের বাইরে যেকোনো একটা জায়গায় পোস্টিং দিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এবং পুলিশ মহাপরিদর্শককে নির্দেশ দিয়েছেন উচ্চ আদালত।
২৭ সেপ্টেম্বর ইউএনওর আইনজীবী নুরুল ইসলাম সুজন আদালতে বলেন, সংবাদপত্রের প্রতিবেদনে ঘটনা যেভাবে এসেছে, তা সঠিক না।
ওসির আইনজীবী শ ম রেজাউল করিম বলেন, ওই শিক্ষার্থীকে গাঁজাসহ আটক করে ভ্রাম্যমাণ আদালতে দেওয়া হয়েছিল। গাঁজা পাওয়ার ঘটনায় তাকে দণ্ড দেওয়া হয়েছে। পাসপোর্ট অনুযায়ী শিক্ষার্থীর জন্ম ১৯৯৫ সালে। সুতরাং, সে কিশোর নয়।
তবে ওই ইংরেজি পত্রিকার প্রতিবেদনে বলা হয়, টাঙ্গাইল-৮ (বাসাইল-সখিপুর) আসনের সংসদ সদস্য অনুপম শাজাহান জয় গত ১৬ সেপ্টেম্বর রাতে থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। যেখানে অভিযোগ করা হয়, একটি ফেসবুক আইডি থেকে তাকে হুমকি দেওয়া হয়েছে।
ওই জিডির অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ উপজেলার প্রতিমা বঙ্কি এলাকা থেকে ওই স্কুলছাত্রকে আটক করে ১৮ সেপ্টেম্বর ভ্রাম্যমাণ আদালতে হাজির করে। পরে ইউএনও ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম তাকে দুই বছরের কারাদণ্ড দেন।
সাজার আদেশের পরদিন সকালে ওই কিশোরকে টাঙ্গাইল জেলা কারাগারে পাঠিয়ে দেন ওসি মাকসুদুল আলম।
স্কুলছাত্র আদালতে তাকে পুলিশ, ইউএনও স্থানীয় এমপি নির্যাতন করেছেন বলে উল্লেখ করে।
আদালত তার দেওয়া বক্তব্য লিখিত আকারে ১৮ অক্টোবরের মধ্যে দাখিল করতে বলেন। পাশাপাশি ওই ইংরেজি পত্রিকা কর্তৃপক্ষকেও তাদের হলফনামা দাখিল করতে বলেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৪১ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৮, ২০১৬
ইএস/এএসআর