ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আইন ও আদালত

৫৪ ধারায় গ্রেফতার নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের ১০ নীতিমালা

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৩২ ঘণ্টা, নভেম্বর ১০, ২০১৬
৫৪ ধারায় গ্রেফতার নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের ১০ নীতিমালা

বিনা পরোয়ানায় গ্রেফতার (৫৪ ধারা) নিয়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর জন্য ১০ দফা নীতিমালা করে দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্ট।

ঢাকা: বিনা পরোয়ানায় গ্রেফতার (৫৪ ধারা) নিয়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর জন্য ১০ দফা নীতিমালা করে দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্ট।

একইসঙ্গে ম্যাজিস্ট্রেটদের জন্য নয় দফা নীতিমালা ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্ব পালনের বিষয়ে সাত দফা নির্দেশনা দিয়েছেন সর্বোচ্চ আদালত।


 
ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ধারা ও রিমান্ড সংক্রান্ত ১৬৭ ধারা সংশোধনের নির্দেশনার বিষয়ে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায়ে এসব নীতিমালা করা হয়।

বৃহস্পতিবার (১০ নভেম্বর) সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে ৩৯৬ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায়টি প্রকাশিত হয়। গত ২৪ মে এ বিষয়ে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে সরকারের আপিল খারিজ করে ওই রায় দিয়েছিলেন আপিল বিভাগ।

ওই সময় আদালত সংক্ষিপ্ত রায়ে বলেছিলেন, ‘ডিসমিস। তবে কিছু মডিফিকেশন থাকবে। কিছু গাইডলাইন দিয়ে দেবো’।

সে অনুসারে এসব গাইডলাইন দেন পূর্ণাঙ্গ রায়ে।
 
আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জন্য গাইডলাইনে সর্বোচ্চ আদালত বলেন, ‘গ্রেফতারের স্থান ও সময়ে ব্যক্তির স্বাক্ষরসহ গ্রেফতারের পরপরই সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা এ বিষয়ে একটি মেমোরেন্ডাম তৈরি করবেন। গ্রেফতারের সময় ও স্থান এবং আটক রাখার জায়গা গ্রেফতারকৃত ব্যক্তির আত্মীয়কে জানাতে হবে। আত্মীয়-স্বজনকে না পেলে বিষয়টি ব্যক্তির নির্দেশনা অনুসারে তার বন্ধুকে জানাতে হবে। এ কাজে ১২ ঘণ্টা অতিক্রম করা যাবে না’।
 
‘কোন যুক্তিতে, কাউকে কোনো তথ্যে বা অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে, ঠিকানাসহ তা কেস ডায়েরিতে লিখতে হবে। আটক ব্যক্তি কোনো কর্মকর্তার তদারকিতে রয়েছেন, তাও উল্লেখ করতে হবে। বিশেষ ক্ষমতা আইনে গ্রেফতারের জন্য কাউকে ৫৪ ধারায় গ্রেফতার করা যাবে না। গ্রেফতারের সময় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও উপস্থিত মানুষের সামনে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের তাদের পরিচয় বলতে হবে, প্রয়োজনে পরিচয়পত্র দেখাতে হবে’।
 
রায়ে আদালত আরও বলেন, ‘গ্রেফতারকৃত ব্যক্তির শরীরে কোনো আঘাত থাকলে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের তা রেকর্ড করে চিকিৎসার জন্য তাকে কাছের হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে এবং সংশ্লিষ্ট ডাক্তারের কাছ থেকে সনদপত্রাদি নিতে হবে’।

‘ব্যক্তির গ্রেফতার যদি তার বাসা বা কর্মক্ষেত্র থেকে না হয়, সেক্ষেত্রে থানায় নেওয়ার ১২ ঘণ্টার মধ্যে বিষয়টি তার স্বজনকে লিখিতভাবে জানাতে হবে’।

‘গ্রেফতারকৃত ব্যক্তি চাইলে তাকে যেকোনো স্বজনের সঙ্গে সাক্ষাৎ বা আইনজীবীর কাছ থেকে পরামর্শ গ্রহণের সুযোগ দিতে হবে। কোনো ব্যক্তিকে যখন আদালতে হাজির করা হবে, তখন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা তার ফরওয়ার্ডিং লেটারে উল্লেখ করবেন যে, কেন ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তদন্ত শেষ করা সম্ভব নয়। ব্যক্তির বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ সুনির্দিষ্ট বলে তিনি মনে করছেন, তাও উল্লেখ করতে হবে’।
 
ম্যাজিস্ট্রেট, বিচারকদের জন্য গাইডলাইনে বলা হয়েছে, ‘ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৭ (২) ধারা অনুসারে ডায়েরির অনুলিপি ছাড়া আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কাউকে আদালতে হাজির করে আটকাদেশ চাইলে ম্যাজিস্ট্রেট, আদালত, ট্রাইব্যুনাল একটি বন্ড গ্রহণ করে তাকে মুক্তি দিয়ে দেবেন’।

‘আটক থাকা কোনো ব্যক্তিকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অন্য কোনো সুনির্দিষ্ট মামলায় যদি গ্রেফতার দেখাতে চায়, সেক্ষেত্রে যদি ডায়েরির অনুলিপিসহ তাকে হাজির না করা হয়, তাহলে আদালত তা মঞ্জুর করবেন না। গ্রেফতার দেখানোর আবেদনের ভিত্তি না থাকলে বিচারক আবেদন খারিজ করে দেবেন’।
 
‘উপরোক্ত শর্ত অনুসারে গ্রেফতারকৃত ব্যক্তির আটকের পর থেকে ১৫ দিনের মধ্যে মামলার তদন্ত শেষ না হলে এবং মামলাটি যদি দায়রা আদালত বা ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক এক্সক্লুসিভলি বিচারযোগ্য হয়, সেক্ষেত্রে এ ধরনের ব্যক্তিকে ৩৪৪ ধারা অনুসারে রিমান্ড দিতে পারেন, যা একবারে ১৫ দিনের বেশি হবে না’।

সর্বোচ্চ আদালত বলেন, ‘ফরওয়ার্ডিং লেটার এবং মামলার ডায়েরিতে তাকে আটক রাখার মতো যথাযথ উপাদান পাওয়া গেলে বিচারিক পদক্ষেপ গ্রহণ না করা পর্যন্ত আদালত পুনঃআটকের আদেশ দিতে পারেন। কোনো কাজ থেকে বিরত রাখতে ইতোমধ্যে গ্রেফতারকৃত কোনো ব্যক্তিকে আটকের আবেদন বিচারক মঞ্জুর করবেন না’।

‘১৬৭ ধারায় অভিযুক্ত ব্যক্তিকে কোনো আদালতে হাজির করা হলে শর্তগুলো পূরণ করা হয়েছে কি-না, সেটা দেখা ম্যাজিস্ট্রেট বা বিচারকের দায়িত্ব। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কেউ যদি কাউকে আইনের বাইরে গিয়ে আটক করে থাকেন, তাহলে ম্যাজিস্ট্রেট দণ্ডবিধির ২২০ ধারায় তার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেবেন’।
 
‘হেফাজতে কারো মৃত্যু হলে বিচারক মেডিকেল বোর্ড গঠন করে মৃত ব্যক্তিকে পরীক্ষা করাবেন। এমনকি দাফন হয়ে গেলেও সেটা করতে হবে। নিপীড়নে মৃত্যু হয়েছে বলে প্রতিবেদন পাওয়া গেলে হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইন অনুসারে ওই কর্মকর্তা, সংশ্লিষ্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার কমান্ডিং কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অপরাধ আমলে নিতে হবে’।

‘মেডিকেল প্রতিবেদনের তথ্য অনুসারে নির্যাতনের ফলে হেফাজতে মৃত্যু বা নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে বলে প্রতীয়মান হলে বিচারক স্বপ্রণোদিত হয়ে ওই অপরাধ আমলে নেবেন। মামলা দায়েরের অপেক্ষা করবেন না’।

এসব নির্দেশনা সার্কুলার আকারে জারি করতে রেজিস্ট্রার জেনারেল, পুলিশের আইজি ও র‌্যাবের ডিজিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
 
বাংলাদেশ সময়: ২০৩০ ঘণ্টা, নভেম্বর ১০, ২০১৬
ইএস/এএটি/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।