ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

আইন ও আদালত

‘খুনি সন্দেহে’ গ্রেফতার দুই শিশুর জামিন

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫৫৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৯, ২০১৭
‘খুনি সন্দেহে’ গ্রেফতার দুই শিশুর জামিন

ঢাকা: ‘খুনি সন্দেহে’ গ্রেফতারকৃত দুই শিশুকে জামিন দিয়েছেন হাইকোর্ট। তাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা ‘হত্যা’ মামলার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত জামিনে থাকবে তারা।

শিশু দু’টিকে হাজির করার পর রোববার (২৯ জানুয়ারি) বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি মোহাম্মদ উল্লাহ’র হাইকোর্ট বেঞ্চ এ জামিন দেন।

তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে কামরাঙ্গীরচর থানা পুলিশকে নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।

বয়স নির্ধারণ না করেই দুই শিশুকে গ্রেফতার করে পুলিশ আইনের বরখেলাপ করেছে বলেও মন্তব্য করেন আদালত।

একটি রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে গত ১৫ জানুয়ারি তাদেরকে ২৯ জানুয়ারি আদালতে হাজির করার নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট।

সে অনুসারে রোববার আদালতে হাজির করা হলে রিট আবেদনকারী আইনজীবী চিলড্রেন চ্যারিটি বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার মো. আব্দুল হালিম শিশুদের জামিন চেয়ে শুনানি করেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তাপস কুমার বিশ্বাস।

আদালতে উপস্থিত দুই শিশুকে  উদ্দেশ্য করে শুনানির শুরুতেই আদালত বলেন, ‘বাবুরা এদিকে এসো। তোমাদের কি আদালতে আসতে ভয় লাগে? ভয়ের কিছু নেই। কি নাম তোমাদের?'

দু’জন তাদের নাম ও বয়স জানায়। তারা জানায়, তাদের একজনের বয়স ৮ বছর ও অন্যজনের ৯ বছর।

এ সময় রিটকারী আইনজীবী ব্যারিস্টার আবদুল হালিম বলেন, ‘যে ছেলের খুনের অভিযোগে তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে, তার মরদেহ বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করা হয়েছে। মরদেহের বিষয়ে অভিযোগকারী নিজেই সন্তান হিসেবে পরিচয় নিশ্চিত হতে পারেননি। সেদিনই বলেছেন, চিনতে পারছেন না। অথচ পুলিশ জোরপূর্বক স্বীকারোক্তি আদায় করেছে'।

এর প্রেক্ষিতে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তাপস কুমার বিশ্বাস বলেন, ‘তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগকারীর এফআইআরের ভিত্তিতে স্বাভাবিক নিয়মে গ্রেফতার করা হয়েছে। ২০১৬ সালের ১১ অক্টোবর দায়ের করা এফআইআরে এ দু'জনেরই নাম ছিল। তাদের নামে সরাসরি অভিযোগ ছিল'।

ব্যারিস্টার আবদুল হালিম বলেন, ‘২৯ সেপ্টেম্বর নিহত শিশুর নিখোঁজের পর সাধারণ ডায়েরি করা হয়। পরে বুড়িগঙ্গা নদীতে মরদেহ উদ্ধারের পর ৮ অক্টোবর একটি অপমৃত্যুর মামলা করা হয় কামরাঙ্গীরচর থানায়। বাদী উজ্জল কিভাবে বুঝলেন, এটি তার সন্তানের মরদেহ?’

এ সময় শিশু আইনের ৪৪ ধারা বের করে দেখান আইনজীবী আবদুল হালিম। সেখানে বলা হয়েছে, ‌‘শিশুদের কোনোভাবেই গ্রেফতার করা যাবে না। একান্তই যদি গ্রেফতার করতে হয় তবে বয়স নির্ধারণ করতে হবে’।

আদালত তখন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীকে উদ্দেশ্য করে প্রশ্ন করেন, ‘পুলিশ কেন তাদেরকে গ্রেফতার করল? ’

ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘এই ধারার পরবর্তী অংশে শিশু গ্রেফতারের কথা বলা আছে’।

জবাবে আদালত বলেন, ‘গ্রেফতার করতে হবে কেন? তাদেরকে সঙ্গে নিয়ে যেতে পারতো। আগে বয়স নির্ধারণ করে তারপর ব্যবস্থা নেওয়া উচিত ছিল। শুধু তাই নয়, এসআই মো. আতাহার হোসেন তাকে শুধু গ্রেফতারই করেননি, তাকে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দির জন্য ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে পাঠিয়েছেন। এর মাধ্যমে তিনি আইনের বরখেলাপ করেছেন’।

গত বছরের ২৪ নভেম্বর একটি জাতীয় দৈনিকে ‘লাশের পরিচয় মেলেনি, খুনি সন্দেহে ২ শিশু গ্রেফতার’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন যুক্ত করে রিট করেন মো. আব্দুল হালিম। ২৯ নভেম্বর আদালত রুলসহ ওই দুই শিশুর বয়স নির্ণয় করা হয়েছে কি-না সে বিষয়ে প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ দেন। সে নির্দেশ মতে গত ০৪ জানুয়ারি লালবাগের ডিসি ও কামরাঙ্গীচরের ওসি আদালতে প্রতিবেদন দেন।

গত ১৫ জানুয়ারি ওই প্রতিবেদনের ওপর শুনানি শেষে দুই শিশুকে হাজির করার নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনারকে একজন পদস্থ কর্মকর্তার মাধ্যমে আদালতে এ আদেশ পালন করতে বলা হয়।

এদিকে হাইকোর্টের রুল জারির পর পুলিশ দুই শিশুর বয়স নির্ণয়ে ব্যবস্থা নেয়।

ওই পত্রিকার প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘প্রায় দুই মাস আগে পুলিশ অজ্ঞাতপরিচয় এক শিশুর অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করে। ১০দিন পর লাশটি এক নিখোঁজ শিশুর দাবি করে শিশুটির পরিবার খুনের মামলা করে। এরপর খুনি সন্দেহে পুলিশ দুই শিশুকে গ্রেফতার করে। বিচারিক হাকিম স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি নিয়ে তাদের টঙ্গীর কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠান’।

‘এর আগে অভিযোগকারী পরিবার ও পুলিশ অভিযুক্ত শিশুদের জিজ্ঞাসাবাদ করে তাদের স্বীকারোক্তি নেয়। এ সবই হয় দু’দিনের মধ্যে। আরও পরে জিজ্ঞাসাবাদের দু’টি ভিডিও ক্লিপ ফেসবুকে তুলে দেন নিখোঁজ শিশুটির এক ফুফাতো বোন’।

‘ময়না তদন্তের প্রতিবেদন বলছে, অজ্ঞাত পরিচয় শিশুটি পানিতে ডুবে মারা গেছে। এদিকে অভিযুক্ত দুই শিশু জানিয়েছে, তাদের মারধর করে মিথ্যা দায় স্বীকার করতে বাধ্য করা হয়েছে’।

‘এ ঘটনায় রাজধানীর কামরাঙ্গীরচর থানায় মামলা করা হয়। পুলিশ গত ১ অক্টোবর রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরের কালুনগর খাল থেকে অজ্ঞাতপরিচয় শিশুটির লাশ উদ্ধার করে। বেওয়ারিশ লাশ হিসেবে শিশুটিকে দাফন কর‍া হয়’।

‘এদিকে ২৯ সেপ্টেম্বর লালবাগ এলাকা থেকে আলিফ নামের নয় বছর বয়সী এক শিশু নিখোঁজ হয়েছে বলে স্থানীয় থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন তার বাবা উজ্জ্বল ভূঁইয়া’।

‘গত ১১ অক্টোবর রাত ১০টার দিকে আলিফের বাবা বাদী হয়ে কামরাঙ্গীরচর থানায় অভিযুক্ত দুই শিশুর নামে খুনের মামলা করেন’।

‘মামলার এজাহারে তিনি উল্লেখ করেন, অজ্ঞাতপরিচয় লাশটি তার ছেলের। ওই দুই শিশু মিলে আলিফকে গলা টিপে হত্যা করে কালুনগর খালের পানিতে ডুবিয়ে দিয়েছে। আলিফের বাবা সেদিনই এক শিশুকে পুলিশে সোপর্দ করেন। পুলিশ রাত দেড়টার দিকে অপর শিশুকে গ্রেফতার করে’।

শিশু আইন, ২০১৩ অনুযায়ী, নয় বছরের কম বয়সী কোনো শিশুকে গ্রেফতার কিংবা আটক করা যাবে না (ধারা ৪৪/১)।

‘মামলার এজাহারে শিশু দু’টির বয়স বলা হয়েছে ১২ বছর। কিন্তু অভিভাবকেরা বলছেন, তাদের বয়স নয় বছরের কম। আদালতে জন্মসনদ দাখিল করে মামলা থেকে এক শিশুর অব্যাহতি চেয়েছেন তার আইনজীবী। ওই সনদে দেখা যায়, তার জন্ম তারিখ ২৯ জানুয়ারি, ২০০৮। আদালত জামিনের আবেদন নাকচ করে দেন’।

বাংলাদেশ সময়: ১২০০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৯, ২০১৭
ইএস/ এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।