ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আইন ও আদালত

‘দিস ইজ মাই লাইফ’

ইলিয়াস সরকার, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২০৮ ঘণ্টা, মে ২, ২০১৭
‘দিস ইজ মাই লাইফ’ আবদুল বাসেত মজুমদার / ছবি: সুমন শেখ

ঢাকা: ‘ওকালতি করে টাকা আয় করি। আবার সে টাকা আইনজীবীদের কল্যাণেই খরচ করি। দিস ইজ মাই লাইফ’।

গত ৫ বছরে দেশের ৫৮টি আইনজীবী সমিতিতে আইনজীবীদের কল্যাণে দুই লাখ টাকা করে অনুদান দেওয়া বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল বাসেত মজুমদার বাংলানিউজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এমন মন্তব্য করেছেন।  

আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদের আহবায়ক বাসেত মজুমদারের আইন অঙ্গনে পরিচিতি ‘গরিবের আইনজীবী’ হিসেবে।

 

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনের নিজ চেম্বারে একান্ত আলাপচারিতায় কর্মময় জীবন ও পরিবার ছাড়াও বিচারক-আইনজীবীদের সম্পর্ক, বিচারক নিয়োগ, আইন পেশায় অন্তর্ভুক্তির বয়সসীমাসহ সমসাময়িক বিষয়গুলো উঠে আসে। আইন পেশায় সুবর্ণ জয়ন্তী পার করা এই আইনজীবী নিজের পেশায় আসার কথা স্মরণ করে আবেগে আপ্লুতও হয়ে ওঠেন।  

আবদুল বাসেত মজুমদার বলেন, ‘ষাটের দশকের শুরুর দিকে নিজ জেলা কুমিল্লায় পড়ালেখার পাঠ চুকিয়ে ঢাকায় আসি। স্বামীবাগে আত্মীয়ের বাসায় থাকতাম। এক বন্ধুর কথায় চাকরির দরখাস্ত করি। খবরটি আব্বার কানে গেলে হঠাৎ একদিন সকালে তিনি কুমিল্লা থেকে ঢাকায় হাজির’।  

‘বললেন, পড়ালেখা বাদ দিয়ে কিসের চাকরি? ঢাকায় থাকতে হলে ওকালতি পড়ো, উকিল হও। আব্বার সে কথায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাস ও আইনে পড়ালেখা শেষ করে পুরোদস্তুর উকিল হয়ে গেলাম। কিন্তু আব্বা পরপারে চলে গেলেন। আইন পেশায় আমার সফলতা দেখে গেলেন না’।  

আইন পেশায় অন্তর্ভুক্তির বয়সসীমা নির্ধারণের বিষয়টি বার কাউন্সিলের ওপর ছেড়ে দিয়েছেন আপিল বিভাগ। কিন্তু তার মতে, ‘এটিকে সমীচীন মনে করি না। কারণ, এটি একটি স্বাধীন পেশা। যেকোনো সময় এ পেশায় আসার অধিকার যে কারো আছে। তবে আইন বিষয়ে পড়ালেখার বয়স নির্ধারণ করা যেতে পারে’।

বাসেত মজুমদার বলেন, ‘বার ও বেঞ্চের সুসম্পর্ক থাকলে বিচারপ্রার্থীদেরই লাভ। সুপ্রিম কোর্টেও আমাদের বার ও বেঞ্চের মধ্যে সুসম্পর্ক রয়েছে। শেখ হাসিনার সরকার বিচার বিভাগে কোনো হস্তক্ষেপ করছে না, করবেও না’।

বাসেত মজুমদার বলেন, ‘বিচারক নিয়োগ দেওয়া না হলে বিদ্যমান মামলার জট আরও বাড়বে। ভোগান্তিতে পড়বেন বিচারপ্রার্থীরা। তাই দ্রুতই সুপ্রিম কোর্টে আরও বেশি বিচারক নিয়োগ দেওয়া উচিত। তাহলে জটে থাকা মামলাগুলোরও দ্রুত নিষ্পত্তি হবে’।

তিনি মনে করেন, ‘আইনজীবীদের স্বাবলম্বী করতে বার কাউন্সিলের বেনেভোলেন্ট ফান্ড আছে। এর পাশাপাশি প্রত্যেক আইনজীবী যদি আরেকটি ফান্ড করেন, তাহলে আইনজীবী সমাজেরই মঙ্গল হবে‘।  

‘আইনজীবীদের সবার আর্থিক সঙ্গতি সমান নয়। তাদের ও তাদের পরিবারের কথা চিন্তা করে আমি আবদুল বাসেত মজুমদার ট্রাস্ট ফান্ড গড়েছি। ট্রাস্ট থেকে দেশের ৫৮টি আইনজীবী সমিতিতে দুই লাখ করে টাকা দিয়েছি। এর লভ্যাংশ আইনজীবীদের চিকিৎসায় ব্যয় হবে। দেশের সব সমিতিতেই অনুদান দেওয়ার ইচ্ছা আছে’।  

আবদুল বাসেত মজুমদারের জন্ম ১৯৩৮ সালের ০১ জানুয়ারি কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার শানিচৌ গ্রামে। হরিচর হাইস্কুল থেকে মেট্রিক (এসএসসি), কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট ও বিএ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাসে স্নাতকোত্তর ও এলএলবি ডিগ্রি অর্জন করেন।  

১৯৬৫ সালে বিয়ে করেন তিনি। স্ত্রী রওশন জাহান মেহেরুন্নেসা। ছেলে গোলাম মহিউদ্দিন আবদুল কাদের ব্যবসায়ী ও সাঈদ আহমদ রাজা আইনজীবী। মেয়ে  ফাতেমা আক্তার লুনা রবীন্দ্র সংগীত শিল্পী ও খাদিজা আক্তার ঝুমা উত্তরা মেডিকেল কলেজের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর।  

১৯৬৬ সালে হাইকোর্টে আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন। পর্যায়ক্রমে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য, সহ সম্পাদক, সম্পাদক ও সভাপতি নির্বাচিত হন। বার কাউন্সিলেও নির্বাচিত হয়েছেন কয়েকবার।  

তার নামে ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ার আন্দারিপাড়ায় আবদুল বাসেত মজুমদার মাদ্রাসা ও এতিমখানা এবং গ্রামের বাড়িতে স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র আছে।  

বাংলাদেশ সময়: ০৬২০ ঘণ্টা, মে ০২, ২০১৭
ইএস/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।