ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আইন ও আদালত

‘আমার চেয়ারেও পানি পড়ে, ২০তলা ভবন দ্রুত চাই’

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭১৮ ঘণ্টা, জুলাই ২৯, ২০১৭
‘আমার চেয়ারেও পানি পড়ে, ২০তলা ভবন দ্রুত চাই’ আজীবন সম্মাননা নিচ্ছেন বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা। ছবি: কাশেম হারুন

ঢাকা: প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেছেন, ‘সুপ্রিম কোর্টের মূল ভবনে আমি যে চেয়ারে বসি, সেখানেও পানি পড়ে। আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগের মূল রেকর্ড রুমও এই ভবনে। দ্রুত ২০তলা নতুন ভবনটি না করা হলে আমাদেরকে মাঠে বসেই বিচার কাজ পরিচালনা করতে হবে’।  

বাংলাদেশের নারী বিচারকের অগ্রদূত বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানাকে আজীবন সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে শনিবার (২৯ জুলাই) এসব কথা বলেন তিনি। বাংলাদেশ মহিলা জজ অ্যাসোসিয়েশন সুপ্রিম কোর্ট অডিটোরিয়ামে এ সম্মাননা দেয়।

সুপ্রিম কোর্টের মূল ভবনের ভঙ্গুর অবস্থার উল্লেখ করে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধান বিচারপতি আরও বলেন, ‘২০তলা নতুন ভবনের প্রস্তাবটি একনেকেই ঘোরাঘুরি করছে। বর্তমান মূল ভবন মনে হয় আর ৫/৬ বছরের বেশি টিকবে না। এটি ধসে গেলে মনে হয় আমাদেরকে মাঠে বসেই বিচার কাজ পরিচালনা করতে হবে’।

অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি তানজীনা ইসমাইলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।  

অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহহাব মিঞা, অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, আপিল বিভাগের বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি সালমা মাসুদ চৌধুরী, সাবেক জেলা জজ ও মহিলা জজ অ্যাসোসিয়শনের সাবেক সভাপতি নুরুন্নাহার ওসমানী, খুলনার সিনিয়র জেলা জজ জেসমিন আরা, ক‍ুমিল্লার অতিরিক্ত জেলা জজ বেগম জেবুন্নেসা, সিলেটের যুগ্ম জেলা জজ উম্মে শারাবান তহুরা, নোয়াখালীর সিনিয়র সহকারী জজ ফারহানা ভূঁইয়া, কিশোরগঞ্জের সহকারী জজ মহসিনা হোসেন তুসি।

নারায়ণগঞ্জের জেলা জজ ও অ্যাসোসিয়েশনের সহ সভাপতি হোসনে আরা আকতারের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন মহাসচিব ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (সিজেএম) জেসমিন আরা বেগম।

অনুষ্ঠানে বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানাকে আজীবন সম্মাননার ক্রেস্ট তুলে দেন প্রধান বিচারপতি এবং উত্তরীয় পরিয়ে দেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।

সম্মাননার জবাবে বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা বলেন, ‘বিচারিক জীবনে দায়সারাভাবে কোনো বিচার করিনি। জেনে বুঝে অবহেলা, অমনযোগীভাবে ভুল বা অন্যায় বিচার করিনি’।
 
নারী জজদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘গভীর মনোযোগ ও একাগ্রতা দিয়ে বিচার করবেন। এখানে কঠিন পরিশ্রম করতে হবে। অবহেলা বা অমনোযোগিতার কোনো সুযোগ নেই। দ্রুত বিচার পাওয়ার লক্ষ্যে কঠিন পরিশ্রম করবেন। ন্যায়বিচার করবেন। কারণ, আল্লাহ’র পরে ন্যায় বিচারকদের স্থান’।

প্রধান বিচারপতি ও আইনমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা বলেন, ‘আপনারা দুই কর্ণধার আছেন। উচ্চ আদালতে নারী বিচারকের সংখ্যা বাড়ানো হোক’।

অনুষ্ঠানে বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানার স্বামীসহ পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

১৯৭৫ সালের ২০ ডিসেম্বর বিচার বিভাগে যোগদান করা এ বিচারপতির শেষ কর্মদিবস ছিলো গত ০৬ ‍জুলাই। যদিও সুপ্রিম কোর্টের পঞ্জিকা অনুসারে তার অবসরের মেয়াদ ০৭ জুলাই। ওই দিন শুক্রবার হওয়ায় আগেরদিন বৃহস্পতিবারই অবসরে যান তিনি।

১৯৫০ সালের ০৮ জুলাই মৌলভীবাজারে জন্মগ্রহণ করেন বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা। বাবা আবুল কাশেম মঈনুদ্দীন ও মা বেগম রশীদা সুলতানা দীন।

ময়মনসিংহের বিদ্যাময়ী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৬৫ সালে এসএসসি পাস করেন নাজমুন আরা সুলতানা। ১৯৬৭ সালে মুমিনুন্নেসা উইমেন্স কলেজ থেকে এইচএসসি ও ১৯৬৯ সালে আনন্দ মোহন কলেজ থেকে বিএসসি ডিগ্রি অর্জন করেন।

১৯৭২ সালে এলএলবি পাস করে একই বছর ময়মনসিংহ জেলা আদালতের আইনজীবী হিসেবে অন্তর্ভূক্ত হন । বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ১৯৭৫ সালের ২০ ডিসেম্বর মুনসেফ (সহকারী জজ) হন। হয়ে যান ইতিহাসের অংশ। দেশ ও বিচার বিভাগের ইতিহাসে তিনিই প্রথম নারী বিচারক। পরবর্তীতে যোগ্যতাই তাকে ১৯৯১ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় জেলা জজের আসনে উন্নীত করে। আর এটাও প্রথম কোনো নারীর জেলা জজ হওয়ার ঘটনা।

২০০০ সালের ২৮ মে তিনি হাইকোর্টে অতিরিক্ত বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান। এর দুই বছর পর হাইকোর্টে স্থায়ী হন। হাইকোর্টেও নারী বিচারপতি হিসেবে তিনি প্রথম।
সবশেষে ২০১১ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি আপিল বিভাগের প্রথম নারী বিচারপতি হিসেবে শপথ নেন বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা। ২০১৩ সালের ০১ এপ্রিল তৎকালীন প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেন আপিল বিভাগের একটি বেঞ্চের নেতৃত্বে বসান বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানাকে।

বিচারিক কাজের পাশাপাশি বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন বাংলাদেশ মহিলা জজ অ্যাসোসিয়েশনের। দু’বার মহাসচিব ছিলেন ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব ওমেন জাজেসের। বিশ্বের ৮২টি দেশে নারী বিচারকদের এ সংগঠনটির সদস্য সংখ্যা প্রায় ৫ হাজার।

বাংলাদেশ সময়: ১৩১৫ ঘণ্টা, জুলাই ২৯, ২০১৭
ইএস/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।