‘আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি মো. জয়নুল আবেদীনের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা সমীচীন হবে না’- দুদকে দেওয়া সুপ্রিম কোর্টের এমন চিঠি নিয়ে জারি করা রুলের শুনানিতে মঙ্গলবার (২৪ অক্টোবর) দুদকের আইনজীবীর উদ্দেশ্যে এসব মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট।
বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সহিদুল করিমের হাইকোর্ট বেঞ্চে এ রুল শুনানি চলছে।
বিচারপতি জয়নুল আবেদীনের পক্ষে শুনানি করেন তার আইনজীবী ব্যারিস্টার মঈনুল হোসেন। তিনি লিখিত বক্তব্যও উপস্থাপন করেন।
এছাড়া অ্যামিকাস কিউরি অ্যাডভোকেট প্রবীর নিয়োগী ও এ এম আমিন উদ্দিন তাদের বক্তব্য তুলে ধরেন। আগামী ৩১ অক্টোবর অপর অ্যামিকাস কিউরি সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি জয়নুল আবেদীনের বক্তব্য উপস্থাপন ও পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেছেন হাইকোর্ট।
দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খানকে উদ্দেশ্য করে হাইকোর্ট বলেন, ‘একজন ব্যক্তিকে অনুসন্ধানের নামে ১০ বছর ঝুলিয়ে রেখেছেন। আপনারা যেসব তথ্য চাচ্ছেন, সেগুলো অবাস্তব। তদন্ত করার অনেক পদ্ধতি আছে। তাই বলে কি এভাবে!’
জবাবে দুদকের আইনজীবী বলেন, ‘স্বচ্ছতার স্বার্থেই এসব তথ্য রাখা প্রয়োজন এবং সেগুলো চেয়ে থাকে দুদক। তাছাড়া বিচারপতি জয়নুলের বিরুদ্ধে এখনও কোনো মামলা হয়নি। তাই তাকে নির্যাতন করা হচ্ছে বলে যে অভিযোগ- তা সত্য নয়’।
হাইকোর্ট বলেন, ‘আপনারা যদি এ গতিতে চলেন, তাহলে দেখা যাবে আরেকটা তথ্যের জন্য ২০২৪ সালে গিয়ে আরেকটা নোটিশ দিচ্ছেন। আসলে দুদক চলছে কচ্ছপ গতিতে’।
জবাবে খুরশীদ আলম খান বলেন, ‘ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত করতে হলে সময় লাগবে, রাতারাতি কিছু হবে না’।
এ বক্তব্যে ক্ষোভ প্রকাশ করে হাইকোর্ট বলেন, ‘একজনকে সম্পদের হিসাব চেয়ে নোটিশ দিয়ে আপনারা ১০ বছর ধরে অনুসন্ধান করতে থাকলেন। তাহলে সে ব্যক্তির অবস্থাটা কি দাঁড়ালো? তার যদি ডায়াবেটিস্ নাও থেকে থাকে, তাহলে আপনাদের অনুসন্ধানের কারণে ডায়াবেটিস্ হয়ে যাবে, প্রেসার না থাকলে প্রেসার হয়ে যাবে। একটি লোক প্রতিদিন ঘুমানোর আগে এবং ঘুম থেকে ওঠার পর যদি চিন্তা করেন, দুদক তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধান করছে। তাহলে এর চেয়ে মানসিক হয়রানির আর কি আছে? একটা সময় হয়তো, এই লোক হার্ট অ্যাটাক করবেন’।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. বদিউজ্জামান তফাদার সুপ্রিম কোর্টের অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার অরুণাভ চক্রবর্তীর স্বাক্ষরিত গত ২৮ মার্চ দুদককে পাঠানো ওই চিঠিটি নজরে আনলে গত ০৯ অক্টোবর এ রুল জারি করেন হাইকোর্ট। দশদিনের মধ্যে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল, দুদকের চেয়ারম্যান, আপিল বিভাগের অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার এবং বিচারপতি জয়নুল আবেদীনকে রুলের জবাব দিতে বলেন।
একইসঙ্গে রুল শুনানির জন্য অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে তিনজনকে নিয়োগ দেন।
দুদকে জয়নুল আবেদীনের দাখিল করা সম্পদ বিবরণীর সুষ্ঠু যাচাই ও অনুসন্ধানের কথা উল্লেখ করে তার চাকরির (বিচারপতি হিসেবে) মেয়াদ, সংশ্লিষ্ট রেকর্ডপত্র (যোগদানপত্র, অবসর গ্রহণের তারিখ সংবলিত কাগজপত্র) ও চাকরি সূত্রে বিভিন্ন (বেতন, ভাতা, অবসর সুবিধা ইত্যাদি) খাতে গৃহীত অর্থের বিবরণী (অর্থবছর হিসেবে) চেয়ে গত ০২ মার্চ সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলকে চিঠি দেয় দুদক।
জবাবে ২৮ মার্চ সুপ্রিম কোর্ট দুদককে ওই চিঠি পাঠান।
বাংলাদেশ সময়: ২১২০ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৪, ২০১৭
ইএস/এএসআর