ঢাকা, শনিবার, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

আইন ও আদালত

হাইকোর্টে জামিন পাননি রানা

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৩৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৫, ২০১৭
হাইকোর্টে জামিন পাননি রানা রানা প্লাজার মালিক সোহেল রানা

ঢাকা: সম্পত্তির হিসাব না দেওয়ার মামলায় তিন বছরের কারাদণ্ডের বিরুদ্ধে রানা প্লাজার মালিক সোহেল রানার আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেছেন হাইকোর্ট।

বুধবার (১৫ নভেম্বর) বিচারপতি আবু বকর সিদ্দিকীর হাইকোর্টের একক বেঞ্চ সোহেল রানাকে জামিন না দিয়ে শুনানির জন্য আপিল গ্রহণ করে আদেশ দেন।

আদালতে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পক্ষে ছিলেন আইনজীবী খুরশিদ আলম খান।

সোহেল রানার পক্ষে ছিলেন জাহানারা বেগম।

আদেশের পরে দুদকের আইনজীবী খুরশিদ আলম খান জানান, আদালত শুনানির জন্য রানার আপিল গ্রহণ করেছেন। পাশাপাশি তাকে যে জরিমানা করা হয়েছিলো তা স্থগিত করেছেন। তবে তাকে জামিন দেননি।

চলতি বছরের ২৯ আগস্ট নির্ধারিত সময়ে সম্পদের বিবরণী দাখিল না করায় ঢাকা বিশেষ জজ কে এম ইমরুল কায়েসের আদালত দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা নন-সাবমিশন মামলাটির এ রায় দেন।

২০১৩ সালের ২২ মে রানা প্লাজার মালিক সোহেল রানা, তার স্ত্রী এবং তার ওপর নির্ভরশীল ব্যক্তিদের নামে, বেনামে অর্জিত যাবতীয় স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তির দায়-দেনা ও আয়ের যাবতীয় সম্পদের বিবরণী দাখিলের নোটিশ জারি করে দুদক। এর আগে থেকেই রানা কাশিমপুর কারাগারে থাকায় তার নামীয় নোটিশ জারি করা যায়নি। পরে কারাগারেই নোটিশ জারির সিদ্ধান্ত নেয় দুদক।

এ সংক্রান্ত আইনি জটিলতার নিরসন করে ২০১৫ সালের ০১ এপ্রিল সোহেল রানার নামীয় ইস্যুকৃত সম্পদ বিবরণীর নোটিশ বিশেষ বাহকের মাধ্যমে কাশিমপুর কারাগারে পাঠায় দুদক। ০২ এপ্রিল নোটিশটি সোহেল রানার কাছে পাঠান জেল সুপার। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে সম্পদ বিবরণী দাখিল না করে প্রথমে স্ত্রীর মাধ্যমে সময় বাড়ানোর আবেদন জানিয়েছিলেন রানা।

এ আবেদন গ্রহণযোগ্য নয় বলে দুদক জানিয়ে দিলে রানা পরে আর নোটিশের কোনো জবাব কিংবা সম্পদের হিসাব বিবরণী দুদকে দাখিল করেননি। ২৬ এপ্রিল সম্পদের হিসাব বিবরণী ফরমে কোনো তথ্য না দিয়ে তা খালি পাঠান তিনি।  

সম্পদের হিসাব বিবরণী দাখিল না করায় ওই বছরের ২০ মে দুদকের উপ-পরিচালক এস এম মফিদুল ইসলাম সাভার থানায় এ মামলা দায়ের করেন।

মামলাটির তদন্ত শেষে তদন্তকারী কর্মকর্তা দুদকের উপ-পরিচালক মাহবুবুল আলম সোহেল রানার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন-২০০৪ এর ২৬ (২) ধারায় আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করেন।

গত ২৩ মার্চ সোহেল রানার বিরুদ্ধে অভিযোগ (চার্জ) গঠন করে এ মামলার বিচার শুরু করেন আদালত।

মামলাটির ৯ জন সাক্ষীর মধ্যে ৮ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়েছে।

গত ২২ আগস্ট উভয়পক্ষের যুক্তিতর্ক (আর্গুমেন্ট) উপস্থাপন শেষে ২৯ আগস্ট রায়ের দিন ধার্য করেন আদালত।

২০১৩ সালের ২৮ এপ্রিল সোহেল রানাকে গ্রেফতার করা হয়। এরপর থেকে তিনি কারাগারে রয়েছেন।

রানা প্লাজা ধসের পর পরই সোহেল রানার অবৈধ সম্পদ অর্জনের বিষয়ে অনুসন্ধানে নামে দুদক। ২০১৩ সালের ৩০ এপ্রিল থেকে এ অভিযোগ অনুসন্ধান করেন দুদকের উপ-পরিচালক মফিদুল ইসলাম ও উপ-পরিচালক মো. মাহবুবুল আলম।

তাদের দেওয়া অনুসন্ধান প্রতিবেদনে জানা গেছে, মাত্র ১০ থেকে ১২ বছরের মধ্যেই সাভারে দু’টি বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণ করেন রানা। এর একটি ৫০ শতাংশ জমিতে নির্মিত নয়তলা রানা প্লাজা ভবনটি ধসে পড়ে সহস্রাধিক মানুষ নিহত হন। আরেকটি আটতলা রানা প্লাজার মালিক সোহেল রানা টাওয়ার (প্রতি ফ্লোর ৪০০০ বর্গফুট)। সাভারে সোহেল রানার পাঁচতলা আবাসিক ভবন এবং মানিকগঞ্জের সিংগাইর থানার জয়মণ্ডপের গ্রামের বাড়িতে একটি দোতলা ভবনও রয়েছে।

এছাড়া রানা ব্রিকস এবং এম এ কে ব্রিকস নামের দু’টি ব্রিক ফিল্ড রয়েছে তার। সাভার পৌর এলাকা ও পৌর এলাকার বাইরে রানা ও তার মা-বাবার নামে প্রচুর সম্পদ রয়েছে। সাভার বাসস্ট্যান্ডে রানার নামে রানা অয়েল মিল রয়েছে। অস্থাবর সম্পদ হিসেবে ট্রাক, প্রাইভেটকার ও মাইক্রোবাস রয়েছে। এছাড়া এক্সিম ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক, ডাচ-বাংলা ব্যাংক এবং ব্র্যাক ব্যাংকে পাঁচটি ঋণ হিসাবসহ ২৩টি ব্যাংক হিসাব আছে। এর মধ্যে রানার নামে ৩৫ লাখ টাকার একটি এফডিআরও রয়েছে।

এ অনুসন্ধানের ভিত্তিতে ২০১৫ সালের ১২ এপ্রিল প্রায় ১৭ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে সোহেল রানার বাবা আব্দুল খালেক ও তার মা মর্জিনা বেগমের বিরুদ্ধেও পৃথক দু’টি দুর্নীতির মামলা করেছে দুদক।  

দুর্নীতির দায়ে রানার ৩ বছরের কারাদণ্ড

বাংলাদেশ সময়: ১৩৩২ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৫, ২০১৭
ইএস/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।