ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আইন ও আদালত

‘বিডিআর থেকে আর্মি অফিসারদের রিমুভ করতেই এ ঘটনা’

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮১৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৭, ২০১৭
‘বিডিআর থেকে আর্মি অফিসারদের রিমুভ করতেই এ ঘটনা’

ঢাকা:  তৎকালীন বিডিআর (বর্তমানে বিজিবি) থেকে সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের অপসারণ করতেই এ ঘটনা ঘটানো হয়েছিলো।

সোমবার (২৭ নভেম্বর) দ্বিতীয় দিনের মতো আলোচিত বিডিআর হত্যাযজ্ঞ মামলাটির রায়ের পর্যবেক্ষণের সময় এ মন্তব্য করেছেন বিচারপতি মো. শওকত হোসেনের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিশেষ (বৃহত্তর) হাইকোর্ট বেঞ্চ।

আদালত বলেন, ‘বিডিআর থেকে সেনা অফিসারদের রিমুভ (অপসারণ) করতেই এ ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল এটাই কমন ইনটেনশন।

ঘটনার দিন অফিসারদের যেখানে পাওয়া যায় সেখানেই হত্যা করো এটা ছিল অবস্থা। বিশ্বের লিগ্যাল হিস্টোরিতে এটাই সবচেয়ে বড় মামলা। ’ 

‘রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতা নষ্ট ও গণতন্ত্র ধ্বংস করাও ছিলো এ ষড়যন্ত্রের অংশ। ’ 

এর আগে সকাল ১০টা ৫৩ মিনিট থেকে দ্বিতীয় দিনের মতো আলোচিত হত্যা মামলাটির রায় ঘোষণা শুরু করেন বিশেষ (বৃহত্তর) হাইকোর্ট বেঞ্চ। এ দিনের শুরুতেই রায়ের পর্যবেক্ষণ দেন বেঞ্চের সদস্য বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার। তার পড়া শেষে কিছু পর্যবেক্ষণ দেন বিচারপতি মো. শওকত হোসেন।  

এরপর মূল রায় ঘোষণা করতে গেলে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম দুপুরের বিরতির পর রায় ঘোষণার আবেদন করেন। পরে এ সময় নির্ধারণ করেন আদালত।  

বেঞ্চের আরেক সদস্য হলেন- বিচারপতি মো. আবু জাফর সিদ্দিকী।  

এর আগে রোববার (২৬ নভেম্বর) বেলা ১০টা ৫৫ মিনিট থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত মাঝে মধ্যাহ্ন বিরতি দিয়ে প্রথম দিনের মতো রায় পড়া শেষ হয়।  

আরও পড়ুন>>
** 
বিডিআর হত্যাযজ্ঞের মূল রায় ঘোষণা আড়াইটা থেকে

গত ১২ নভেম্বর থেকে হাইকোর্টের কার্যতালিকায় ২৬ নভেম্বর রায় ঘোষণার জন্য রাখা হয় আপিল মামলাটি। প্রায় এক বছরেরও বেশি সময় ধরে রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষের শুনানি এবং যুক্তিতর্ক (আর্গুমেন্ট) উপস্থাপন শেষে গত ১৩ এপ্রিল মামলাটির রায় ঘোষণা অপেক্ষমান (সিএভি) রাখেন হাইকোর্ট।  

২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি পিলখানার বিডিআর সদর দফতরে ৫৭ জন সেনা সদস্যসহ ৭৪ জনকে হত্যার দায়ে ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর ১৫২ জন বিডিআর সদস্যকে মৃত্যুদণ্ড দিয়ে রায় দেন বিচারিক আদালত।  

পাশাপাশি অস্ত্র লুটের দায়ে ১০ বছর করে কারাদণ্ড ও ২০ হাজার টাকা করে জরিমানা, অনাদায়ে আরও দুই বছর করে কারাদণ্ডও দেওয়া হয় তাদের।  

জীবিত ৮৪৬ জন আসামির মধ্যে আরও ১৬১ জনকে যাবজ্জীবন, ২৫৬ জনকে তিন থেকে দশ বছরের কারাদণ্ড এবং ২৭৭ জনকে খালাস দেওয়া হয়। মামলার মোট ৮৫০ জন আসামির বাকি ৪ জন বিচার চলাকালেই মারা গেছেন।

ওই ঘটনায় দায়ের করা বিস্ফোরক আইনের মামলার বিচার চলছে বিচারিক আদালতে।

হত্যা মামলার রায়ের বিরুদ্ধে খালাসপ্রাপ্ত ২৭৭ জনের মধ্যে ৬৯ জন আসামির সাজা চেয়ে হাইকোর্টে ফৌজদারি আপিল ও ডেথ রেফারেন্স দায়ের করেন রাষ্ট্রপক্ষ। অন্যদিকে দণ্ডপ্রাপ্ত ৪১০ জন আসামির সাজা বাতিল চেয়ে রায়ের বিরুদ্ধে ফৌজদারি আপিল করেন তাদের আইনজীবীরা।
 
পরে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত কয়েকজনের মৃত্যুদণ্ড ও কয়েকজনের সাজা বাড়াতে আরও দু’টি আবেদন জানিয়েছিলেন রাষ্ট্রপক্ষ। তবে দেরিতে আবেদন করায় গত ১৩ এপ্রিল আবেদন দু’টি বাতিল করে দেন হাইকোর্ট।  

আপিল করলে গত ৬ জুন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ হাইকোর্টের বাতিলের আদেশটিই বহাল রাখেন।
 
২০১৫ সালের ৪ জানুয়ারি সকল ডেথ রেফারেন্স ও ফৌজদারি আপিলের শুনানির জন্য হাইকোর্ট বিভাগের বিশেষ বেঞ্চটি গঠন করেন সাবেক প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেন। পরদিন ৫ জানুয়ারি বিশেষ বেঞ্চ বসে ১৮ জানুয়ারি শুনানি শুরুর দিন ধার্য করেন।

২০১৫ সালের ১৮ জানুয়ারি থেকে বিচারপতি মো. শওকত হোসেনের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বিশেষ (বৃহত্তর) বেঞ্চে ডেথ রেফারেন্স ও আপিল শুনানি শুরু হয়ে গত ১৩ এপ্রিল ৩৭০ কার্যদিবসে শেষ হয়।

রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা, মোমতাজ উদ্দিন  ফকির  ও মোশাররফ  হোসেন কাজল, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোশাররফ হোসেন সরদার, শেখ বাহারুল ইসলাম ও  জাহিদ সরওয়ার কাজল ।

আসামিপক্ষে ছিলেন- অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, আবদুল বাসেত মজুমদার, মহসীন রশীদ, এস এম শাহজাহান, এ এস এম আবদুল মুবিন, মো. আমিনুল ইসলাম, দাউদুর রহমান মিনা, শামীম সরদার প্রমুখ। আর রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী ছিলেন হাসনা বেগম।

বাংলাদেশ সময়: ১৪১০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৭, ২০১৭
ইএস/এমএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।