সোমবার (২৭ নভেম্বর) দুপুর আড়াইটা থেকে বিরতির পর বিচারপতি মো. শওকত হোসেনের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিশেষ (বৃহত্তর) হাইকোর্ট বেঞ্চ রায় ঘোষণা শুরু করেন।
এর আগে সকাল ১০টা ৫৩ মিনিট থেকে দ্বিতীয় দিনের মতো আলোচিত হত্যা মামলাটির রায় ঘোষণা শুরু হয়।
দ্বিতীয় দিনের শুরুতেই রায়ের পর্যবেক্ষণ দেন বেঞ্চের সদস্য বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার। তার পড়া শেষে কিছু পর্যবেক্ষণ দেন বিচারপতি মো. শওকত হোসেন।
এরপর মূল রায় ঘোষণা করতে গেলে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম দুপুরের বিরতির পর মূল রায় ঘোষণার আবেদন জানান। এর পরিপ্রেক্ষিতে দুপুর আড়াইটা থেকে সময় নির্ধারণ করেন আদালত।
বেঞ্চের আরেক সদস্য হলেন- বিচারপতি মো. আবু জাফর সিদ্দিকী।
রোববার (২৬ নভেম্বর) বেলা ১০টা ৫৫ মিনিট থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত মাঝে মধ্যাহ্ন বিরতি দিয়ে প্রথম দিনের মতো রায় পড়া শেষ হয়।
গত ১২ নভেম্বর থেকে হাইকোর্টের কার্যতালিকায় ২৬ নভেম্বর রায় ঘোষণার জন্য রাখা হয় আপিল মামলাটি। প্রায় এক বছরেরও বেশি সময় ধরে রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষের শুনানি এবং যুক্তিতর্ক (আর্গুমেন্ট) উপস্থাপন শেষে গত ১৩ এপ্রিল মামলাটির রায় ঘোষণা অপেক্ষমান (সিএভি) রাখেন হাইকোর্ট।
২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি পিলখানার বিডিআর সদর দফতরে ৫৭ জন সেনা সদস্যসহ ৭৪ জনকে হত্যার দায়ে ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর ১৫২ জন বিডিআর সদস্যকে মৃত্যুদণ্ড দিয়ে রায় দেন বকশীবাজারে আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে স্থাপিত ঢাকার অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আখতারুজ্জামানের অস্থায়ী আদালত।
পাশাপাশি অস্ত্র লুটের দায়ে ১০ বছর করে কারাদণ্ড ও ২০ হাজার টাকা করে জরিমানা, অনাদায়ে আরও দুই বছর করে কারাদণ্ডও দেওয়া হয় তাদের।
জীবিত ৮৪৬ জন আসামির মধ্যে আরও ১৬১ জনকে যাবজ্জীবন, ২৫৬ জনকে তিন থেকে দশ বছরের কারাদণ্ড এবং ২৭৭ জনকে খালাস দেওয়া হয়। মামলার মোট ৮৫০ জন আসামির বাকি ৪ জন বিচার চলাকালেই মারা গেছেন।
ওই ঘটনায় দায়ের করা বিস্ফোরক আইনের মামলার বিচার চলছে বিচারিক আদালতে।
আরও পড়ুন>>
** ‘বিডিআর থেকে আর্মি অফিসারদের রিমুভ করতেই এ ঘটনা’
** বিডিআর হত্যাযজ্ঞের মূল রায় ঘোষণা আড়াইটা থেকে
** ‘রায় শুনতে হাইকোর্টে ভিড়’
** বিডিআর হত্যাযজ্ঞের আপিলের অসমাপ্ত রায় ঘোষণা চলছে
** ‘বিডিআর বিদ্রোহ রাষ্ট্রের স্থিতি বিনষ্ট করার চক্রান্ত’
হত্যা মামলার রায়ের বিরুদ্ধে খালাসপ্রাপ্ত ২৭৭ জনের মধ্যে ৬৯ জন আসামির সাজা চেয়ে হাইকোর্টে ফৌজদারি আপিল ও ডেথ রেফারেন্স দায়ের করেন রাষ্ট্রপক্ষ। অন্যদিকে দণ্ডপ্রাপ্ত ৪১০ জন আসামির সাজা বাতিল চেয়ে রায়ের বিরুদ্ধে ফৌজদারি আপিল করেন তাদের আইনজীবীরা।
পরে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত কয়েকজনের মৃত্যুদণ্ড ও কয়েকজনের সাজা বাড়াতে আরও দু’টি আবেদন জানিয়েছিলেন রাষ্ট্রপক্ষ। তবে দেরিতে আবেদন করায় গত ১৩ এপ্রিল আবেদন দু’টি বাতিল করে দেন হাইকোর্ট।
আপিল করলে গত ৬ জুন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ হাইকোর্টের বাতিলের আদেশটিই বহাল রাখেন।
২০১৫ সালের ৪ জানুয়ারি সকল ডেথ রেফারেন্স ও ফৌজদারি আপিলের শুনানির জন্য হাইকোর্ট বিভাগের বিশেষ বেঞ্চটি গঠন করেন সাবেক প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেন। পরদিন ৫ জানুয়ারি বিশেষ বেঞ্চ বসে ১৮ জানুয়ারি শুনানি শুরুর দিন ধার্য করেন।
২০১৫ সালের ১৮ জানুয়ারি থেকে বিচারপতি মো. শওকত হোসেনের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বিশেষ (বৃহত্তর) বেঞ্চে ডেথ রেফারেন্স ও আপিল শুনানি শুরু হয়ে গত ১৩ এপ্রিল ৩৭০ কার্যদিবসে শেষ হয়।
রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা, মোমতাজ উদ্দিন ফকির ও মোশাররফ হোসেন কাজল, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোশাররফ হোসেন সরদার, শেখ বাহারুল ইসলাম ও জাহিদ সরওয়ার কাজল ।
আসামিপক্ষে ছিলেন- অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, আবদুল বাসেত মজুমদার, মহসীন রশীদ, এস এম শাহজাহান, এ এস এম আবদুল মুবিন, মো. আমিনুল ইসলাম, দাউদুর রহমান মিনা, শামীম সরদার প্রমুখ। আর রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী ছিলেন হাসনা বেগম।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৪৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৭, ২০১৭
ইএস/এমএ