সোমবার (১৫ জানুয়ারি) একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়েরে শিক্ষক শেখ মো. মহিবুল্লাহর পক্ষে এ নোটিশটি পাঠান সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ইশরাত হাসান।
নোটিশে বিবাদী করা হয়েছে, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সচিব, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, যশোরের জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকে।
ইশরাত হাসান বাংলনিউজকে বলেন, ওপার বাংলায় সরকার একই রোডে গাছ কাটার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো। পরে কলকাতা হাইকোর্ট সরকারের সিদ্ধান্তে স্থগিতাদেশ দেন। আমরা চাই রাস্তা হোক। তবে গাছ রেখেই। কারণ এটি স্বাধীনতার স্মৃতি বিজড়িত সড়ক। যে সড়ক দিয়ে হাজার হাজার এ দেশীয় শরণার্থী ভারতে গিয়েছিলো। এই গাছগুলো সেসব শরণার্থীদের সাক্ষী হিসেবে দণ্ডায়মান। তাই সাত দিনের মধ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ চেয়ে এ নোটিশ পাঠানো হয়েছে।
একটি আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘যশোর শহর থেকে বেনাপোল পর্যন্ত রাস্তার দৈর্ঘ্য ৩৮ কিমি। এই রাস্তার দু’পাশে সড়ক ও জনপথের হিসাব অনুযায়ী গাছ রয়েছে ২৩শ ১২টি। এর মধ্যে দুইশোর বেশি গাছ রয়েছে যেগুলোর বয়স ১৭০ বছরের বেশি। গাছ গুলোর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে নানা ঐতিহাসিক ঘটনা এবং স্থানীয় মানুষের আবেগঘন স্মৃতি। তাই গাছগুলো একেবারে কেটে নিশ্চিহ্ন করে রাস্তা সম্প্রসারণের বিষয়টি অনেকেই মেনে নিতে পারছেন না। ’
‘এই রাস্তা সম্প্রসারণ প্রকল্পটি পাস হয় ২০১৭ সালের মার্চ মাসে। যশোরের সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম বলছিলেন যেভাবে প্রকল্পটি পাস হয়েছে ঠিক সেভাবে বাস্তবায়ন করতে গেলে গাছ কাটা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। তিনি বলছিলেন রাস্তা সম্প্রসারণের জন্য টেন্ডার অনুমোদনের কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এ মাস অর্থাৎ জানুয়ারিতে হয়ে গেলে ফেব্রুয়ারিতে কাজ শুরু করা সম্ভব হবে। গত ৬ জানুয়ারি শনিবার যশোর জেলা প্রশাসকের সভাকক্ষে এক মতবিনিময় সভায় সিদ্ধান্ত হয় এ গাছ কাটার বিষয়ে। ’
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ‘মহাসড়কটি ঐতিহাসিকভাবে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা থেকে যশোর পর্যন্ত বিস্তৃত। ব্রিটিশ শাসন আমলে যশোর শহরে একটি বিমানঘাঁটি ছিল। ফলে সে সময় এই বিমানঘাঁটির সঙ্গে কলকাতার যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নতি করার জন্য যশোর রোড আধুনিকভাবে নির্মাণ করা হয়। সে সময় অনেক গাছ লাগানো হয় রাস্তার দু’পাশে। বর্তমানে যশোর রোড বলতে দমদম থেকে বনগাঁর পেট্রোপোল সীমান্ত পর্যন্ত মহাসড়ককে বোঝায়।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় এই যশোর রোড দিয়েই লাখ লাখ শরণার্থী ভারতে গিয়ে আশ্রয় নেন। শরণার্থীদের সেই ঢল নিয়ে বিখ্যাত মার্কিন কবি অ্যালেন গিন্সবার্গ 'সেপ্টেম্বর অন যশোর রোড' নামে একটি কবিতাও লেখেন। পরবর্তীতে গায়ক বব ডিলান এবং অন্যদের সহায়তায় সেই কবিতাকে তিনি গানেও রূপ দিয়েছিলেন। ’
বাংলাদেশ সময়: ১৮২২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৫, ২০১৮
ইএস/এএ