ঢাকা, রবিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আইন ও আদালত

কেন তারা উত্তেজিত হয়ে যায়?

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৪৮ ঘণ্টা, মে ৯, ২০১৮
কেন তারা উত্তেজিত হয়ে যায়? জয়নুল আবেদীন ও মাহবুবে আলম

অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছেন, আমি যখনই বলি যে, টাকাটা এসেছিলো প্রধানমন্ত্রীর এতিম তহবিলে এবং সেখান থেকে টাকাটা চলে গেছে জিয়ার অরফানেজ ট্রাস্টে, তখনই তাদের সমর্থক আইনজীবীরা চিল্লাচিল্লি করে আমার বক্তব্য প্রদানে বাধা সৃষ্টি করে। কথাটি বললে কেন তারা উত্তেজিত হয়ে যায়? আমি বুঝি না।

তবে খালেদা জিয়ার আইনজীবী জয়নুল আবেদীন বলেছেন, অ্যাটর্নি জেনারেল এমন কতগুলো বক্তব্য দিচ্ছিলেন যেগুলো মামলার রায়ের মধ্যে নাই। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে অসম্মান করে কিছু বক্তব্য রাখছিলেন। সেটা আমরা আপত্তি দিয়েছি।
 
বুধবার (০৯ মে) খালেদা জিয়ার জামিনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ ও দুদকের করা আপিলের পক্ষে বিপক্ষে শুনানি শেষ হওয়ার পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন মাহবুবে আলম ও জয়নুল আবেদীন।
 
নিজ কার্যালয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, “আমার বক্তব্যে আমি উল্লেখ করেছি, দুদকে অন্যান্য যে মামলাগুলো হয়েছে সেগুলো সম্পত্তির বিবরণ দিতে ভুল করা, সম্পত্তির বিবরণী না দিয়ে তথ্য গোপন করা সংক্রান্ত, সেজন্য তাদের সাজা হয়েছে। তবে এই মামলাটির বৈশিষ্ট্য হলো, প্রধানমন্ত্রীর এতিম তহবিল নামে একটি তহবিল ১৯৯১ সালে খোলা হয়। তারপর বিদেশ থেকে এই তহবিলের নামেই ১২ লাখ ৫০ হাজার ডলার আসে এবং এই অ্যাকাউন্টে ওই টাকা জমা হয়। পরবর্তী সময়ে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট নামে একটি ট্রাস্ট করা হয়। যার পরিচালক ছিলেন খালেদা জিয়ার দুই পুত্র ও জিয়াউর রহমানের একজন আত্মীয়। এই ট্রাস্ট গঠন করার পরে প্রধানমন্ত্রীর যে এতিম তহবিল, সেখান থেকে টাকাটা উত্তোলন করা হয়। উত্তোলন করে সেই টাকা জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টে জমা করা হয়। সেখানেও টাকাটা খরচ করা হয়নি। কিন্তু টাকাটা জনৈক শরফুদ্দিন নামে এক ব্যক্তির ব্যাংক অ্যাকাউন্টে চলে যায় এবং টাকাটা সেখান থেকে উধাও হয়ে যায়। ”

“এই যে টাকা উধাও হওয়ার পেছনে প্রধানমন্ত্রীর এতিম তহবিল থেকে অনুমোদন না দিতেন তাহলে টাকাটা এভাবে আত্মসাৎ হতে পারতো না। কাজেই এই মামলাটির বৈশিষ্ট্য হলো, রাষ্ট্রীয় অর্থআত্মসাৎ হয়ে গেছে এবং যে ফান্ডে টাকা দেয়া হয়েছে তা একটি ব্যাক্তিগত ট্রাস্ট। খালেদা জিয়ার দুই পুত্র এবং তার এক আত্মীয় তারাই এটার পরিচালক”, বলে মন্তব্য করেন অ্যাটর্নি জেনারেল।

তিনি আরও বলেন, “বাংলাদেশের ইতিহাসে, পাক-ভারতের ইতিহাসে রাষ্ট্রীয় কোন তহবিলের টাকা এভাবে কখনো উত্তোলিত হয়ে প্রধানমন্ত্রীর নিজের পুত্র এবং আত্মীয়ের পরিচালিত একটি ট্রাস্ট্রে চলে যাওয়ার ঘটনা নজিরবিহীন। এ কথাটাই বলেছি। অন্যান্য মামলার সঙ্গে এই মামলার তফাৎ এখানেই। কাজেই এখানে তার যে সাজা দেয়া হয়েছে তাতে তাকে যদি এখনই জামিন দিয়ে দেওয়া হয়, তাহলে তিনি আর আপিল শুনানি করবেন না এবং এটা একটা কাগজেই রয়ে যাবে। ক্রিমিনাল জুরিসপ্রুডেন্স এখানে ব্যাহত হবে। তাই আমি আদালতকে বলেছি তারা যেভাবে বিচারিক আদালতে এ মামলার শুনানিতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে ৯ বছর সময় লাগিয়েছে, এখন জামিন দিলে এই আপিল আর শুনানি হবে না, তার দণ্ড দেয়া কাগজেই দাঁড়িয়ে যাবে। কাজেই তিনি (খালেদা জিয়া) যে নিরাপরাধ এটা প্রমাণ করার সুযোগ তার আছে। মামলার আপিলের পেপারবুক তৈরি হয়ে গেছে। এখনি শুনানির জন্য দিন নির্ধারণ করতে পারেন। হাইকোর্ট এই নির্দেশই দিয়েছিলেন, যেকোন পক্ষ এই নিয়ে শুনানি করতে পারে। কিন্তু আপিল শুনানি নিয়ে তাদের কোনো আগ্রহ নাই। তাদের শুধু জামিন নিয়ে অস্থিরতা। ”

অ্যাটর্নি জেনারেল শুনানিতে অপ্রাসঙ্গিক বক্তব্য রেখেছেন- খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের এমন অভিযোগের বিষয়ে মাহবুবে আলম বলেন, “আমার সম্পূর্ণ বক্তব্য জামিনের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। আমি ধারাবাহিকভাবে যখনই বলতে গিয়েছি ‘প্রধানমন্ত্রীর এতিম তহবিল’। তখনই তারা (বিএনপি সমর্থক আইনজীবীরা) চিৎকার দিয়ে ওঠে। অদ্ভুত ব্যাপার। আমি যখনই বলি যে টাকাটা এসেছিলো প্রধানমন্ত্রীর এতিম তহবিলে এবং সেখান থেকে টাকাটা চলে গেছে জিয়ার অরফানেজ ট্রাস্ট্রে তখনই তাদের সমর্থক আইনজীবীরা চিল্লাচিল্লি করে আমার বক্তব্য প্রদানে বাধা সৃষ্টি করে। কথাটি বললে কেন তারা উত্তেজিত হয়ে যায়? আমি বুঝি না। ”

এর আগে সুপ্রিম কোর্ট বার ভবনে জয়নুল আবেদীন বলেন, “এটাই সর্বশেষ সিদ্ধান্ত, যদি হাইকোর্ট বিভাগ জামিন দেন সেক্ষেত্রে আপিল বিভাগ কখনো ইন্টারফেয়ার করে না। আজকে আমাদের আদালতের প্রতি নিবেদন ছিলো- আমরাও বিশ্বাস করি হাইকোর্ট বিভাগ যে জামিন দিয়েছেন এ ব্যাপারে আপিল বিভাগ ইন্টারফেয়ার করবেন না। এ জামিন বহাল রাখবেন। তাতে ন্যায়বিচার নিশ্চিত হবে। ” 

আদালতে হট্টগোলের বিষয়ে জয়নুল আবেদীন বলেন, “অ্যাটর্নি জেনারেল এমন কতগুলো বক্তব্য দিচ্ছিলেন যেগুলো মামলার রায়ের মধ্যে নাই। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে অসম্মান করে কিছু বক্তব্য রাখতে ছিলেন। সেটা আমরা আপত্তি দিয়েছি, তারপরে অ্যাটর্নি জেনারেল হঠাৎ করে বললেন তার সব ডিএজি এএজি নিয়ে দাঁড়িয়ে যাবেন। তারপর কোর্ট ইন্টারফেয়ার করার পর সেটা থেমেছে। আমরা বলেছি এ ধরনের পরিস্থিতি যেন অ্যাটর্নি জেনারেল আর সৃষ্টি না করেন। ”

বুধবার দুপুরে উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আদালত খালেদা জিয়াকে হাইকোর্টের দেওয়া জামিন প্রশ্নে রাষ্ট্রপক্ষ ও দুদকের আপিলের ওপর রায়ের জন্য আগামী মঙ্গলবার দিন ঠিক করেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৪২, মে ০৯, ২০১৮
ইএস/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।