সোমবার (০৯ জুলাই) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের উপস্থিতিতে বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চ এমন মন্তব্য করেন।
চুয়াডাঙ্গা শহরের ইমপ্যাক্ট মাসুদুল হক মেমোরিয়াল কমিউনিটি হেলথ সেন্টারে চক্ষু শিবিরে চিকিৎসা নিয়ে ২০ জনের চোখ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঘটনায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও চুয়াডাঙ্গার সিভিল সার্জনকে গত ০৩ জলাই তলব করেছিলেন হাইকোর্ট।
ওই তলবাদেশে সোমবার দুই জন হাইকোর্টে হাজির হন। আদালতে মহাপরিচালকের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী কামাল হোসেন।
সিভিল সার্জনের পক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ বি এম আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ (বাশার) ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল সাইফুল আলম। আর ইম্প্যাক্ট মাসুদুল হক মেমোরিয়াল কমিউনিটি হেলথ সেন্টারের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম।
রিট আবেদনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী অমিত দাসগুপ্ত। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক প্রফেসর ডা. আবুল কালাম আজাদকে একটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত খবর দেখিয়ে আদালত বলেন, ‘চট্টগ্রামে (একটি শিশু মৃত্যুর ঘটনার পর র্যাব অভিযানের পরপরই চট্টগ্রামে বেসরকারি ক্লিনিকের মালিকদের ধর্মঘট) যা হয়েছে সেটি দুঃখজনক। আজকের মামলার সঙ্গে এটি সম্পর্কিত নয়। যেহেতু আপনি (স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক) আছেন তাই বলছি, মানুষ বিপদে পড়লে তিন পেশার লোকের কাছে যায়। একজন পুলিশ, অপরজন আইনজীবী এবং ডাক্তার। তিনটি পেশার যদি কিছু কিছু দুর্বৃত্তের কারণে ধ্বংস হয়, তবে মানুষ বিপদে পড়বে। মেয়েটাকে (চট্টগ্রামের ম্যাক্স হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে গিয়ে রাফিদা খান রাইফার মৃত্যু) তো ফিরিয়ে আনা যাবে না। ডাক্তাররা দেবতা নন। আমাদের (মানুষের) ভুল হবে বলে আমাদের একটা উচ্চ আদালত রয়েছে। ভুলটা অন্যায় নয়। কিন্তু ভুলটা জাস্টিফাই করার জন্য যদি হরতাল ( ধর্মঘট) ডাকা হয় তবে তা অন্যায়। ’
আদালত আরও বলেন, দেশে অনেক স্বনামধন্য চিকিৎসক এবং ভালোমানের চিকিৎসা সেবার সুযোগ থাকা সত্ত্বেও কতিপয় ভুল চিকিৎসার ভয়ে রোগীরা পার্শ্ববর্তী দেশে চলে যাচ্ছে। এতে দেশীয় মুদ্রা বিদেশে যাচ্ছে। তাই আদালত এ ধরনের পরিস্থিতি কমিয়ে আনার জন্য আপনাকে (স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক প্রফেসর ডা. আবুল কালাম আজাদ) বলা হলো।
এরপর প্রফেসর ডা. আবুল কালাম আজাদ আদালতকে বলেন, আমরা মহামান্য আদালতের সঙ্গে একমত। আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছি। চট্টগ্রামে ইতোমধ্যে ধর্মঘট প্রত্যাহার করা হয়েছে।
চুয়াডাঙ্গার ঘটনায় আবুল কালাম আজাদ আদালতকে বলেন, এ ঘটনায় দুটি তদন্ত কমিটি করেছি। তারা ইতোমধ্যে প্রতিবেদন তৈরি করেছেন। আমরা পর্যালোচনা করছি। ইমপ্যাক্ট হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নিজ উদ্যোগে ওষুধের নমুনা আইসিডিডিআর’বিতে পাঠায়। তাদের রিপোর্ট অনুযায়ী ওই ওষুধে ব্যাকটেরিয়ার নমুনা পাওয়া গেছে। কিন্তু আমাদের প্রতিবেদনে ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি পাওয়া যায়নি। আমরা দুটো রিপোর্টই পর্যালোচনা করে প্রকৃত ঘটনা উদঘাটনের চেষ্টা করছি।
পরে আদালত আগামী ১৬ জুলাই এ মামলায় জারি করা রুলের পরবর্তী শুনানির দিন নির্ধারণ করেন। তবে দুইজনকে ব্যাক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতি দেন।
একটি জাতীয় দৈনিকে ‘চক্ষু শিবিরে গিয়ে চোখ হারালেন ২০ জন’! শীর্ষক শিরোনামে ২৯ মার্চ একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই প্রতিবেদনযুক্ত করে হাইকোর্টে রিট করা হয়।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘চুয়াডাঙ্গার ইমপ্যাক্ট মাসুদুল হক মেমোরিয়াল কমুনিটি হেল্থ সেন্টারে তিনদিনের চক্ষু শিবিরের দ্বিতীয়দিন ৫ মার্চ ২৪ জন নারী-পুরুষের চোখের ছানি অপারেশন করা হয়। অপারেশনের দায়িত্বে ছিলেন চিকিৎসক মোহাম্মদ শাহীন। তবে বাসায় ফিরেই ২০ জন রোগীর চোখে ইনফেকশন দেখা দেয়।
রিটের পর হাইকোর্ট ১ এপ্রিল প্রত্যেককে কোটি করে মোট ২০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে রুল জারি করেন। এ রুলের শুনানিকালে ৩ জুলাই আদালত তাদের তলব করেন বলে জানিয়েছিলেন আইনজীবী অমিত দাসগুপ্ত।
বাংলাদেশ সময়: ২০৫২ ঘণ্টা, জুলাই ০৩, ২০১৮
ইএস/এমএ