ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আইন ও আদালত

জাহালম কাণ্ড: হু ইজ রেসপন্সিবল?

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৫১ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৭, ২০১৯
জাহালম কাণ্ড: হু ইজ রেসপন্সিবল? আদাল চত্বরে জাহালম।

ঢাকা: সোনালী ব্যাংকের ঋণ সংক্রান্ত মামলার ভুল আসামি জাহালম কাণ্ডে কে বা কারা দায়ী তা দেখার জন্য এ বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) প্রতিবেদন চেয়েছেন হাইকোর্ট।

বুধবার (১৭ এপ্রিল) বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ সংক্রান্ত দুদকের নথি জমা দিতে ২ মে পর্যন্ত সময় দিয়ে আদেশ দেন।

এ সময় জাহালম হাইকোর্টে উপস্থিত ছিলেন।

রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার। অপরপক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট অমিত দাশগুপ্ত। দুদকের পক্ষে ছিলেন খুরশীদ আলম খান।

এর আগে গত ০৬ মার্চ জাহালম প্রশ্নে ব্যাংক ঋণ জালিয়াতির ৩৩ মামলার এফ আই আর, চার্জশিট, সম্পূরক চার্জশিট এবং সকল ব্যাংকের এ সংক্রান্ত নথিপত্র দাখিল করতে দুদককে নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট।  ১০ এপ্রিলের মধ্যে এ নথিপত্র দাখিলের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।  
 
গত ১০ এপ্রিল দুদকের পক্ষে  অ্যাডভোকেট খুরশীদ আলম খান সময় চান। এরপর আদালত জাহালমকে আসতে বলে ১৭ এপ্রিল দিন ধার্য করেন।

এর ধারাবাহিকতায় মামলাটি বুধবার শুনানির জন্য উঠলে জানানো হয় প্রয়োজনীয় নথি আদালতে আসেনি। এ সময় খুরশীদ আলম খান এ সংক্রান্ত দুদকের ৩৩ টি মামলার নথি দাখিল করতে সময় চান।  

এক পর্যায়ে আদালত বলেন, এ ঘটনায় দুদকের করা তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন কি তৈরি হয়েছে? জবাবে খুরশীদ আলম খান বলেন, ‘না। ’ আদালত বলেন, ‘এ প্রতিবেদন তৈরি হলে দাখিল করবেন। আমরা দেখবো। এটার জন্য হু ইজ রেসপনসিবল? আমরা এটা দেখবো। প্রতিবেদনটা অনেক জরুরি। ৩৩ মামলার নথির সঙ্গে দাখিল করবেন। ’

এরপর আদালত ২ মে দিন ঠিক করেন। পরে খুরশীদ আলম খান সাংবাদিকদের বলেন, আজকে ৩ নম্বর আইটেম ছিলো। কিন্তু ফাইল ছিলো না।

 দুদকের তদন্তের বিষয়ে তিনি বলেন, এটার একটা ইন্টারনাল তদন্ত হচ্ছে। একজন তদন্ত করছেন। উনাকে ২০ দিনের সময় দেয়া হয়েছিলো। এ সময় শেষ হওয়ার আগে আরও ৭ দিন সময় চেয়েছেন। কোর্ট প্রতিবেদন দেখতে চাচ্ছেন। সমস্ত কিছু দেখতে চাচ্ছেন দায় টা কার!    

গত জানুয়ারিতে একটি জাতীয় দৈনিকে ৩৩ মামলায় ‘ভুল’ আসামি জেলে ‘স্যার, আমি জাহালম, সালেক না...’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই প্রতিবেদন আদালতের নজরে আনেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অমিত দাসগুপ্ত।
 
এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে দুর্নীতি দমন কমিশনের কর্মকর্তা, মামলার বাদীসহ চারজনকে তলব করেন বিচারপতি নাজমুল আহাসান ও বিচারপতিকে এম কামরুল কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চ।

এছাড়া রুলও জারি করেছেন আদালত। রুলে কারাগারে থাকা ‘ভুল’ আসামি জাহালমকে কেন অব্যাহতি দেয়া হবে না এবং তাকে মুক্তির কেন ব্যবস্থা নেয়া হবে না তা জানতে চাওয়া হয়েছে।

পরে ৩ ফেব্রুয়ারি সংশ্লিষ্টরা হাজিরের পর হাইকোর্ট জাহালমকে মুক্তির নির্দেশ দেন এবং দুদকের কাছে ঘটনার বিষয়ে হলফনামা আকারে জানতে চেয়েছেন। সে আদেশ অনুসারে দুদক হলফনামা আকারে তা উপস্থাপন করেন।  

এর আগে গত ৫ মার্চ সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংক, সোনালী ব্যাংক, সিটি ব্যাংক লিমিটেড, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংককে এ রিট মামলায় পক্ষভুক্ত করতে আবেদন করে দুদক।

এর মধ্যে সোনালী ব্যাংক আগেই এ মামলায় পক্ষভুক্ত থাকায় বাংলাদেশ ব্যাংকসহ বাকি চারটিকে বুধবার পক্ষভুক্ত করার আদেশ দেন আদালত।
 
ওই দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘স্যার, আমি জাহালম। আমি আবু সালেক না…আমি নির্দোষ। ’ আসামির কাঠগড়ায় দাঁড়ানো লোকটির বয়স ৩০-৩২ বছরের বেশি না। পরনে লুঙ্গি আর শার্ট। ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৬-এ বিচারকের উদ্দেশে তাকে বারবার বলতে দেখা যায়, ‘আমি আবু সালেক না। ’

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আবু সালেকের বিরুদ্ধে সোনালী ব্যাংকের প্রায় সাড়ে ১৮ কোটি টাকা জালিয়াতির ৩৩টি মামলা হয়েছে। কিন্তু আবু সালেকের বদলে জেল খাটছেন, আদালতে হাজিরা দিয়ে চলেছেন এই জাহালম। তিনি পেশায় পাটকল শ্রমিক।  

বাংলাদেশ সময়: ১৪৩৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৭, ২০১৯
ইএস/এমএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।