ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আইন ও আদালত

রাজীবের ক্ষতিপূরণের রুলের রায় পিছিয়েছে

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৫৯ ঘণ্টা, মে ২৩, ২০১৯
রাজীবের ক্ষতিপূরণের রুলের রায় পিছিয়েছে ...

ঢাকা: তিতুমীর কলেজের ছাত্র রাজীব হাসানের হাত হারানোর পর মৃত্যুর ঘটনায় ক্ষতিপূরণ হিসেবে ১ কোটি টাকা দিতে এবং সাধারণ যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিদ্যমান আইন কঠোরভাবে কার্যকর, এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে আইন সংশোধনে জারি করা রুলের ওপর রায় ঘোষণা পিছিয়েছে।

কোনো ব্যক্তি দুর্ঘটনায় আহত বা নিহত হলে সংশ্লিষ্ট যানের ইনস্যুরেন্সকারী কোম্পানি কীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিকে ক্ষতিপূরণের ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে পারে, বিষয়টি নিয়ে আদালতে শুনানি হয়। বিষয়টি সামনে আসার প্রেক্ষাপটে হাইকোর্ট রায়ের জন্য ২০ জুন তারিখ নির্ধারণ করেছেন বলে জানান আইনজীবী রুহুল কুদ্দুস কাজল।

এর আগে ১৯ মে চূড়ান্ত শুনানির পর বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের হাইকোর্ট বেঞ্চ রায়ের জন্য ২৩ মে দিন ধার্য করেছিলেন।

আদালতে আবেদনের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোতাহার হোসেন সাজু। বিআরটিসির পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার মনিরুজ্জামান। বিআরটিএর পক্ষে ছিলেন আইনজীবী রাফিউল ইসলাম।

২০১৮ সালের ৩ এপ্রিল রাজধানীর কারওয়ান বাজার এলাকায় দুই বাসের রেষারেষিতে হাতকাটা পড়ে কলেজছাত্র রাজীবের। এ ঘটনা নিয়ে সংবাদ প্রকাশের পর ৪ এপ্রিল রিট আবেদন করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল।

হাইকোর্ট ১ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণের রুল জারিসহ রাজীবের চিকিৎসার খরচ দুই বাস মালিক বিআরটিসি ও স্বজন পরিবহনকে বহনের নির্দেশ দেন।

এ রুল বিচারাধীন থাকা অবস্থায় গত বছরের ১৬ এপ্রিল দিনগত রাত ১২টা ৪০ মিনিটে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান রাজীব।

এদিকে বাস মালিকদের আপিলের পর গত বছরের ২২ মে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে আপিল বেঞ্চ ওই ঘটনায় দুই বাস কর্তৃপক্ষের মধ্যে কারা দায়ী ও ক্ষতিপূরণ নিরূপণ করতে একটি ‘স্বাধীন কমিটি’ গঠনে হাইকোর্টকে নির্দেশ দেন। পরে ওই কমিটির প্রতিবেদনের আলোকে হাইকোর্ট রাজীবের দুই ভাইকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার আদেশ দেন।

পাশাপাশি রাজীবের দুই ভাইকে ১ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশন (বিআরটিসি) ও স্বজন পরিবহনের মালিককে হাইকোর্টের দেওয়া আদেশ স্থগিত করেন আপিল বিভাগ। এরপর হাইকোর্ট বিভাগ এ কমিটি গঠন করেন।

ওই বছরের ১৫ অক্টোবর দুই বাস কর্তৃপক্ষের মধ্যে কারা দায়ী ও ক্ষতিপূরণ নিরূপণ করতে বুয়েটের অ্যাকসিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের পরিচালকের নেতৃত্বে তিন সদস্যের কমিটি প্রতিবেদনে গণপরিবহন নিয়ে কয়েকটি সুপারিশ দেয়।

কমিটির অপর সদস্য হিসেবে রয়েছেন বুয়েটে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের একজন শিক্ষক ও নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) এর চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন।

ওইদিন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোতাহার হোসেন সাজু বলেছিলেন, ৪৯ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনে প্রাথমিকভাবে কারা দায়ী সেটা বলা হয়েছে। রয়েছে অনেক সুপারিশ।

একইসঙ্গে প্রতিবেদনে ওই দুর্ঘটনার জন্য প্রাথমিকভাবে স্বজন পরিবহনের চালকের দায় থাকার কথা বলা হয়েছে। এমনকি চিকিৎসায় অবহেলার দায় এড়াতে পারেন না হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও। চালকের হালকাযানের লাইসেন্স নিয়ে ডাবল ডেকার গাড়ি চালাতে দেওয়া বিআরটিসিরও দায় রয়েছে।

কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়, দৈনিক বা ট্রিপভিত্তিতে চালক নিয়োগ দ্রুত নিষিদ্ধ করতে হবে, মাসিক বেতনের ভিত্তিতে কোম্পানির অধীনে চালক নিয়োগ করতে হবে।

অনুমোদিত চলাচলকারী গণপরিবহনগুলোকে একটি কোম্পানির অধীনে এনে ফ্রাঞ্চাইজি সিস্টেমে রুট পারমিট দেওয়া, প্রত্যেকটি রুটে একটি নির্দিষ্ট রং কোড (কালার কোড) থাকবে।

এই ব্যবস্থায় ভাড়াবাবদ যাত্রীদের টাকা বাঁচবে এবং বাস কোম্পানি ও পরিবহনের চালকদের মধ্যে অসুস্থ প্রতিযেগিতা রোধ করবে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, রাজধানীতে গণপরিবহনের বিশেষ করে ব্যক্তি মালিকানা বা সরকারি মালিকানাধীন বিআরটিসির বাসগুলোর অবস্থা খুবই শোচনীয়।

কোনো বাসের ফিটনেস সার্টিফিকেট থাকলেই চলবে না সেফটি ফিচারগুলো (ইন্ডিকেটর, উইপার, হেডলাইট, টায়ার) রং করা থাকতে হবে। ফিটনেস সার্টিফিকেট ছাড়া কোনো যানবাহনই চলতে দেওয়া উচিৎ না।

বাস চলা অবস্থায় বাসের দরজা অবশ্যই বন্ধ রাখতে হবে। নির্ধারিত স্টপেজে থামার পর বাসের দরজা খুলতে হবে। বাস চলা অবস্থায় কোনো যাত্রীকে বাসের দরজার সামনে দাঁড়াতে দেওয়া উচিৎ না।

প্রত্যেক রুটে বাস স্টপেজ বা বাস বে-গুলোর পরিচিতি থাকা উচিৎ। কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই যাত্রী ছাউনি স্থাপন করতে হবে। ছেড়ে যাওয়ার সময় বা চলতি অবস্থায় যাত্রী ওঠা-নামা করানো বন্ধ করতে হবে। ট্রাফিক পুলিশকে কঠোরভাবে তা পালন করতে হবে।

সড়ক দুর্ঘটনা তদন্তে পুলিশ, বিআরটিএ, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, এআরআই, নিরাপদ সড়ক চাই, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মতো সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানগুলোতে একটি টেকনিক্যাল টিম থাকতে হবে এবং এই টিমের জন্য যোগান দিতে হবে পর্যাপ্ত তহবিল। বড় দুর্ঘটনা তদন্তে গঠন করতে হবে এই টিম। দুর্ঘটনার পরপরই দ্রুততার সঙ্গে এই টিমকে দুর্ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে হবে এবং তথ্য সংগ্রহ করতে হবে।

ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়ার মানদণ্ড কী হবে তা নির্ধারণ করতে হবে বিআরটিএ’র ড্রাইভিং স্কুলকে। সে মানদণ্ড পূরণ করা ছাড়া কাউকে ড্রাইভিং পারদর্শিতা পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবে না।

চালকদের তাত্ত্বিক মান বাড়াতে বুয়েটের এআরআই’র মতো পেশাদার কোনো প্রতিষ্ঠানকে সরকার যুক্ত করতে পারে। বিআরটিএ’র উদ্যোগে বুয়েট চালকদের তাত্ত্বিক পরীক্ষা নেবে।

কোনোরকম বিলম্ব ছাড়া দুর্ঘটনাগ্রস্ত ব্যক্তিকে প্রত্যেক হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা বা সেবা দিতে হবে। হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী বিষয়টি কঠোরভাবে মানতে হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৫৮ ঘণ্টা, মে ২৩, ২০১৯
ইএস/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।