ঢাকা, সোমবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আইন ও আদালত

শেখ হাসিনার ট্রেনে গুলির মামলায় ৯ জনের ফাঁসি

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬২০ ঘণ্টা, জুলাই ৩, ২০১৯
শেখ হাসিনার ট্রেনে গুলির মামলায় ৯ জনের ফাঁসি দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা। ছবি: বাংলানিউজ

পাবনা: ১৯৯৪ সালে পাবনার ঈশ্বরদীতে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও তৎকালীন বিরোধী দলের নেতা শেখ হাসিনার ট্রেনে গুলির মামলায় ৯ জনের ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন আদালত।

বুধবার (০৩ জুলাই) বেলা ১১টা ৫৭ মিনিটে পাবনার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক রোস্তম আলী এ রায় ঘোষণা করেন।  এছাড়া রায়ে ২৫ জনের যাবজ্জীবন, ১৩ জনের ১০ বছর করে সশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়েছে।

পাশাপাশি যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্তদের ৩ লাখ টাকা এবং ১০ বছরের সাজাপ্রাপ্তদের ১ লাখ টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে।

এ মামলার ৫২ আসামির মধ্যে জীবিত আছেন ৪৭ জন। যাদের মধ্যে কারাগারে থাকা ৩২ জনকে আদালতে হাজির করা হয়।

ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- এ কে এম আক্তারুজ্জামান, মো. জাকারিয়া পিন্টু, মোখলেছুর রহমান বাবলু, রেজাউল করিম শাহীন, শহীদুল ইসলাম অটল, আজিজুর রহমান ফড়িং, শ্যামল, মাহাবুবুর রহমান পলাশ ও শামসুল আলম। এদের মধ্যে ঈশ্বরদী পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া পিন্টু পলাতক রয়েছেন। বাকি পলাতক আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আব্দুল আহাদ বাবু (পিপি) বলেন, দীর্ঘ ২৫ বছর পর এ মামলার রায় হয়েছে। ঘটনার দিন আমি নিজে সেখানে উপস্থিত ছিলাম। তৎকালীন সময়ের বিরোধী দলের নেতা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাজনৈতিক সফরে খুলনা থেকে সৈয়দপুরের উদ্দেশে ট্রেন যাত্রা করেন। পাবনার ঈশ্বরদী রেলস্টেশনে পৌঁছালে বিএনপির সন্ত্রাসীরা ট্রেনটিতে গুলি ও বোমা নিক্ষেপ করে। ওইদিন শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশে এ হামলা চালানো হয়। মামলার রায় ঘোষণায় আমরা সন্তোষ প্রকাশ করছি।

আসামি পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মাসুদ খন্দর বলেন, মামলার সঠিক বিচার আসামিপক্ষ পায়নি। স্বল্প সময়ের মধ্যে শুনানি করে বিচারের রায় দেওয়া সঠিক বিচার হতে পারে না। এই বিচারে আমরা মনে করি আসামিপক্ষ ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হয়েছে। ন্যায়বিচারের জন্য আমরা উচ্চ আদালতের আপিল করবো।

গত সোমবার (০১ জুলাই) পাবনার অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালত-১ এ মামলায় কারাগারে থাকা বিএনপির ৩০ নেতা-কর্মীর উপস্থিতিতে উভয়পক্ষের আইনজীবীরা তাদের যুক্তি তুলে ধরেন। উভয়পক্ষের বক্তব্য শুনে বিচারক রোস্তম আলী এ মামলার রায়ের জন্য বুধবার দিন ধার্য করেন

এদিকে মামলার রায়ের আগে পলাতকদের মধ্যে হুকুমদাতাসহ আরও দু’জন মঙ্গলবার (০২ জুলাই) আত্মসমর্পণ করেন। তারা হলেন- ঈশ্বরদী পৌরসভার সাবেক মেয়র ও পৌর বিএনপির সাবেক সভাপতি মকলেছুর রহমান বাবলু এবং বিএনপি নেতা আব্দুল হাকিম টেনু। পাবনার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ প্রথম আদালতের ভারপ্রাপ্ত বিচারক রোস্তম আলীর আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করলে তিনি জামিন নামঞ্জুর করে তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৪ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর খুলনা থেকে ট্রেনে ঈশ্বরদী হয়ে সৈয়দপুরের দলীয় কর্মসূচিতে যাচ্ছিলেন তৎকালীন বিরোধীদলের নেত্রী শেখ হাসিনা।  

তাকে বহনকারী ট্রেনটি ঈশ্বরদী রেলওয়ে জংশন স্টেশনে প্রবেশের মুহূর্তে ওই ট্রেন ও শেখ হাসিনার কামরা লক্ষ্য করে গুলি চালায় দুর্বৃত্তরা। স্টেশনে যাত্রাবিরতি করলে আবারও ট্রেনটিতে হামলা চালানো হয়।  

এ ঘটনায় পরবর্তীতে দলীয় কর্মসূচি সংক্ষিপ্ত করে শেখ হাসিনা দ্রুত ঈশ্বরদী ত্যাগ করেন। পরে ঈশ্বরদী রেলওয়ে জিআরপি থানার ওই সময়কার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বাদী হয়ে তৎকালীন ছাত্রদল নেতা ও বর্তমানে ঈশ্বরদী পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া পিন্টুসহ সাতজনকে আসামি করে মামলা করেন।  

১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করার পর পুলিশ মামলাটি পুনঃতদন্ত করে। তদন্ত শেষে নতুনভাবে স্থানীয় বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীসহ ৫২ জনকে এ মামলার আসামি করা হয়।  

এদিকে মামলা করার পর ওই বছর কোনো সাক্ষী না পেয়ে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেয় পুলিশ। কিন্তু আদালত ওই প্রতিবেদন গ্রহণ না করে অধিকতর তদন্তের জন্য তা সিআইডিতে পাঠান। পরে তদন্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করে সিআইডি।

বাংলাদেশ সময়: ১২২০ ঘণ্টা, জুলাই ০৩, ২০১৯
এনটি/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।